সেল আর টাটার কয়লাখনি নিয়ে আশায় বেগুনিয়া
ম্প্রতি বরাকরে একের পর এক ধস নেমেছে। প্রধান কারণ অবশ্যই পরিত্যক্ত কয়লাখনি ঠিক মতো না ভরাট করা এবং চোরাই কয়লার লোভে খোঁড়াখুঁড়ি। কিন্তু এরই মধ্যে স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (সেল) এবং টাটা গোষ্ঠী বরাকর-কুলটি সংলগ্ন এলাকায় নতুন কয়লা খনি বানানোর প্রস্তাবে খুশি বহু মানুষ। তাঁদের মতে, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে খনির কাজ হলে ভয়ের কারণ নেই। বরং খনি হলে স্থানীয় বাসিন্দাদের কর্মসংস্থান হবে। বেকারত্বের বাজারে সেটাই বড় খবর।
রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্পাত সংস্থা সেল-এর খনি বিভাগের রামনগর কোলিয়ারি কর্তৃপক্ষ টাটা গোষ্ঠীর সঙ্গে যৌথ ভাবে এই ভূগর্ভস্থ কয়লাখনি বানানোর প্রস্তাব করেছেন। প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘বেগুনিয়া ভূগর্ভস্থ কয়লাখনি প্রকল্প’। তার জন্য প্রাথমিক অনুমোদনও মিলেছে বলে সেল সূত্রে জানা গিয়েছে। সংস্থার জিএম বিজয়কুমার সিংহ জানান, প্রস্তাবিত এই খনি অঞ্চলের আয়তন ২.৩৬ বর্গ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১.১৭ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে কয়লা মজুত আছে। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩৩০-৫৫০ মিটার গভীরে একাধিক স্তরে প্রায় ছ’লক্ষ মেট্রিক টন কয়লা মজুত আছে। ইস্পাতশিল্পে ব্যবহারযোগ্য গুণমান সম্পন্ন ‘স্টিলগ্রেড’-এর এই কয়লা ভাণ্ডার কেটে তুলতে সময় লাগবে ১৪ বছর।
সেল-এর জিএম বলেন, “টাটা-র সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা এই কয়লা তুলব।” তিনি জানান, প্রাথমিক প্রক্রিয়া শেষ করে ২০১৭ সালের গোড়ায় এই কয়লাখনি চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে। নতুন এই খনির উৎপাদন শুরু করতে প্রাথমিক ভাবে ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। প্রত্যক্ষ ভাবে চাকরি পাবেন কমবেশি সাড়ে তিনশো জন। পরোক্ষে আরও কয়েক হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। এর ফলে এলাকার অর্থনৈতিক তথা সামাজিক উন্নয়নও ঘটবে।
সম্প্রতি বরাকর-কুলটি এলাকায় একটি জনশুনানিতে এলাকার কিছু মানুষ ধসের আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। কেননা রাস্ট্রায়ত্ত কয়লা সংস্থা বিসিসিএল নিজেই একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছিল, বরাকর এলাকায় বসবাস বিপজ্জনক। স্থানীয় বাসিন্দাদের সেখান থেকে সরাতে কয়লামন্ত্রক একটি পুনর্বাসন প্রকল্পও বানিয়েছে। যদিও এলাকাবাসী তাতে রাজি না হয়ে বরং মাটির তলার ফাঁকা অংশে বালি ভরাট করার দাবি তুলেছেন। এই পরিস্থিতিতে আরও একটি খনি নতুন বিপদ ডেকে আনবে কি না, সেই প্রশ্ন তোলেন কয়েক জন। জেলা প্রশাসন ও সেল কর্তৃপক্ষ বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করেছেন। স্থানীয় নাগরিক সমিতি, বণিকসভা, একাধিক রাজনৈতিক ও গণসংগঠন নিরাপত্তার সব দিকগুলি বজায় রেখে কয়লাখনি করার প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে।
বরাকর চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি গিরিধারীলাল অগ্রবালের মতে, “বরাকরের ধসপ্রবণ স্টেশন রোডের মতো অবস্থা যাতে বেগুনিয়া অঞ্চলের না হয়, তার জন্য ব্যবস্থা নেবেন তো খনি কর্তৃপক্ষ? সে ক্ষেত্রে তা প্রকাশ্যে জানিয়ে এলাকাবাসীর সহমত নিয়ে কাজ শুরু করলে ভাল।” নাগরিক সমিতির সদস্য শুভময় চক্রবর্তী মনে করেন, “বসতবাড়ির স্থায়িত্ব সুনিশ্চিত করেই নিশ্চয়ই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে।” কংগ্রেসের বর্ধমান জেলা নেতা চণ্ডী চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা সকলেই চাই, কয়লাখনি হোক। তবে বাতাসের সংস্পর্শে যাতে ভূগর্ভস্থ মিথেনে আগুন ধরে গোটা এলাকা তেতে না ওঠে, সে দিকে নজর দেওয়া দরকার।” সিপিএমের কুলটি জোনাল কমিটির সদস্য সুজিত ভট্টাচার্য বলেন, “মাত্রাছাড়া দূষণ না ঘটিয়ে কয়লাখনি চালু হোক, আমরা তা-ই চাই।”
অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অমিত দত্ত জানান, সব দিক খতিয়ে দেখতে খনি কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। রামনগর কোলিয়ারির জিএম জানান, ভূগর্ভস্থ কয়লা কেটে তোলার পর ফাঁকা অংশে বালি ও জলের মিশ্রণ পাঠানোর জন্য একাধিক পরিকল্পনা ইতিমধ্যেই নেওয়া হয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.