পার্কে ‘এনার্জি’ নয়, আগুন
গুন লেগে ক্ষতিগ্রস্ত হল বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা দুর্গাপুরের সায়েন্স অ্যান্ড এনার্জি পার্ক। বুধবার দুপুরে পার্কের ভিতরে জমে থাকা ঝরা পাতায় দাউদাউ করে আগুন জ্বলে যায়। দমকলের তিনটি ইঞ্জিন প্রায় ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় আগুন আয়ত্তে আনে। প্রাথমিক ভাবে দমকলের অনুমান, পার্কের বাইরের জঙ্গলে শুকনো পাতায় প্রথমে আগুন লাগে। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে পার্কের ভিতরেও।
রাজ্যের অচিরাচরিত শক্তি দফতর (ওয়েবরেডা) দুর্গাপুরে এই পার্কটি গড়েছিল। রাজ্যের তৎকালীন বিদ্যুৎ ও ‘ওয়েবরেডা’ দফতরের মন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক মৃণাল বন্দোপাধ্যায় এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। ২০০২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি কাজ শুরু হয়। শেষ হয় পরের বছর সেপ্টেম্বরে। শক্তি ও অচিরাচরিত শক্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন মডেল রাখা হয় পার্কে।
অগ্নিগ্রাসে বন্ধ থাকা পার্ক।
এর মূল উদ্দেশ্য ছিল, শক্তি সম্পর্কে শিক্ষার্থী ও উৎসাহীদের সুষ্পষ্ট ধারণা তৈরি করা। সৌরশক্তি, জলবিদ্যুৎ, স্থির তড়িৎ সংক্রান্ত বিভিন্ন মডেলে হাতে কলমে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা দেখানোর ব্যবস্থা ছিল।
বর্ধমান ছাড়াও আশপাশের নানা জেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ থেকে ছাত্রছাত্রীরা সেই মডেল দেখতে আসত।
বর্তমানে লাক্ষাদ্বীপ সরকারের শক্তি উপদেষ্টা, বেঙ্গল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক তথা ‘ওয়েবরেডা’র প্রাক্তন ডিরেক্টর শক্তিপদ গণচৌধুরী সেই সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারের এনার্জি পার্ক কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি জানান, সারা দেশে এমন ৯টি পার্ক গড়ার জন্য অর্থ বরাদ্দ করে কেন্দ্রীয় সরকার। দুর্গাপুরেও এই ধরনের একটি পার্ক গড়ার উদ্যোগ হয়। শক্তিপদবাবু পুরসভার সামনে এই ধরনের পার্ক গড়ার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। পুরসভার তৎকালীন মেয়র রথীন রায় সেই প্রস্তাবে সম্মতি দেন।
সেই সময়ে পার্ক গড়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার এক কোটি টাকা দেয়। রাজ্য সরকার দেয় ৪০ লক্ষ টাকা।
জাতীয় সড়ক থেকে কয়েকশো মিটার দূরত্বে ‘ভবানী পাঠকের গুহা’ লাগোয়া প্রয়োজনীয় জমি দেয় আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন সংস্থা। পার্ক চালু হওয়ার পরে ‘ওয়েবরেডা’ তা চালু রাখা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেয় একটি বেসরকারি সংস্থাকে। একটা সময় ছিল যখন পার্কে ভিড় লেগেই থাকত।
এর কয়েক বছরের মধ্যেই পার্কের সুদিন চলে যায়। রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা বেসরকারি সংস্থাটিও হাত গুটিয়ে নেয়। ওয়েবরেডার গভর্নিং বডির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, পার্কটি চালু রাখা ও ছোটখাটো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হবে দুর্গাপুর পুরসভার হাতে। তা আর করা হয়নি। ২০০৯ সালের শেষ দিকে পাকাপাকি ভাবে বন্ধ হয়ে যায় পার্কটি।
দমকলের কর্মীরা চেষ্টা চালাচ্ছেন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার। বুধবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
ওয়েবরেডার প্রাক্তন ডিরেক্টর শক্তিবাবুর মতে, এই ধরনের পার্কে নিয়মিত উন্নতীকরণ দরকার। বিজ্ঞানের অত্যাধুনিক নতুন নতুন উদ্ভাবন হাতে-কলমে দেখার ব্যবস্থা থাকা জরুরি। তা না হলে পুরনো বিষয়ে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন দর্শকেরা। কালে কালে দর্শকের সংখ্যা ক্রমশ কমে যেতে থাকে। দুর্গাপুরের এই পার্কের ক্ষেত্রেও তেমনই ঘটেছে বলে মনে করেন শক্তিপদবাবু।
বুধবার দুপুরে সেই বন্ধ পার্কে আগুন লেগে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভিতরে থাকা মডেলগুলি। যা শুনে শক্তিবাবু বলেন, “খুবই দুঃখজনক ঘটনা। বহু ছাত্রছাত্রীর ক্ষতি হল।” ২০০৫ সালের কোনও এক দুপুরে পার্কে গিয়ে চাকা ঘুরিয়ে স্থির তড়িৎ উৎপাদন করেছিল কিশোর রাজর্ষি ভট্টাচার্য। তিনি এখন দিল্লিতে এক বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন।
এ দিন ফোনে রাজর্ষিবাবু বলেন, “তখন এমন একটা ব্যাপার ছিল, পার্কে ঢুকে মনে হতো স্বপ্ন দেখছি। ভাবতেও পারছি না সেই পার্কের আজ এমন অবস্থা হল!”

দহনের খেরোখাতা
• ৬ জানুয়ারি ২০১২ সেন্ট্রাল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটে আগুন লেগে পোড়ে কম্পিউটার, নথিপত্র, গবেষণার যন্ত্রপাতি।
• ২৩ মার্চ ২০১২ গাছের পাতায় আগুন লাগে। এনার্জি পার্কের সামনে, রাস্তার উল্টো দিকে।
•২৭ মার্চ ২০১২ বেনাচিতি বাজারে অর্ধ-শতাব্দী পুরনো বেকারি কারখানা ভস্মীভূত হয়ে যায়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.