|
|
|
|
বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় |
দফতরেই রাতভর ঘেরাও রেজিস্ট্রার, ডিন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • রানাঘাট |
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দাদাগিরি অব্যাহত। সোমবার সারা রাত ধরে নদিয়ার মোহনপুরের বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায় এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষার ডিন বাসুদেব দাশগুপ্তকে তাঁদের দফতরেই আটকে রাখল তৃণমূল প্রভাবিত গবেষক ও পড়ুয়াদের একটি দল। এমনকী, মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেওয়ায় সারা দিন পঠন-পাঠন পুরোপুরি বন্ধই ছিল। প্রায় ২৪ ঘণ্টা ঘেরাও থাকার পরে এই দিন বিকেল পাঁচটায় পার্থসারথিবাবুরা তাঁদের দফতর থেকে বেরোতে পারেন। ছাত্রদের ক্ষোভ বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির বিরুদ্ধে।
মাত্র কয়েক মাস আগেই ডিসেম্বরে কলকাতার সন্তোষপুরের ঋষি অরবিন্দ বালিকা বিদ্যাপীঠের দ্বাদশ শ্রেণির এক দল ছাত্রী সারা রাত ঘেরাও করে রেখেছিলেন প্রধান শিক্ষিকা ও সহকারী শিক্ষিকাদের। ওই ছাত্রীদের দাবি ছিল, ফেল করা সত্ত্বেও টেস্টে পাশ করিয়ে দিতে হবে তাঁদের। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শ্রীমতী ঘোষ অবশ্য সেই চাপের কাছে নতি স্বীকার করেননি। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও চাপের মুখে ভেঙে পড়েননি। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষককে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি চিঠি দিয়ে ডেকে পাঠিয়েছে। আন্দোলনকারী ছাত্র ও গবেষকদের দাবি, সেই চিঠি প্রত্যাহার করতে হবে। সহ উপাচার্য বিশ্বপতি মণ্ডল জানিয়ে দেন, “যা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থেই করা হয়েছে।” |
|
বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজায় তালা ঝুলিয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। —নিজস্ব চিত্র। |
বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি শৃঙ্খলারক্ষার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সুমন সমাদ্দার নামে ওই গবেষককে সেই কমিটি ডেকে পাঠিয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ঠিক মতো কাজ করেন না। ১৩ মার্চ তাঁর ওই কমিটির কাছে উপস্থিত থাকার কথা। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ডেভিডকুমার বর্মণ বলেন, “সুমনবাবু আমাদের দলের গবেষণা পরিষদের সভাপতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন তিনি। সে কারণেই কর্তৃপক্ষ ষড়যন্ত্র করে তাঁকে হয়রানি করছেন। এর প্রতিবাদেই আমরা রেজিস্ট্রারকে ঘেরাও করেছিলাম।”
সোমবার দুপুর থেকেই এই বিষয়টি নিয়ে উত্তাপ তৈরি হয়েছিল গবেষক ও পড়ুয়াদের মধ্যে। সুমনবাবুকে দেওয়া ওই চিঠি প্রত্যাহারের দাবিতে রেজিস্ট্রারের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়। কিন্তু রেজিস্ট্রার তাঁদের দাবি মানতে নারাজ থাকায় ক্রমশ আলোচনা তপ্ত হয়ে ওঠে। এরপরেই শুরু হয়ে যায় অবস্থান বিক্ষোভ। পার্থসারথিবাবুর বক্তব্য, “এই ব্যাপারে আমার কিছু করার নেই। বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বিশ্ববিদ্যালয় কাউন্সিল এবং উপাচার্য। ছাত্রদের দাবির কথা আমি তাঁদের জানিয়ে দিয়েছি।”
সারা রাত রেজিস্ট্রার ও ওই ডিন আটকে থাকেন রেজিস্ট্রারের ঘরে। পার্থসারথিবাবু বলেন, “আমার সঙ্গে কেউ দুর্ব্যবহার করেননি। খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। তবে এত ক্ষণ আটকে থাকায় শারীরিক কষ্ট তো হয়েইছে।” বাইরে ছিলেন কমপক্ষে পাঁচশো ছাত্রছাত্রী ও গবেষকেরা। রেজিস্ট্রারের ঘরের দরজা বাইরে থেকে আটকে রাখা হয়। প্রাক্তন মন্ত্রী নদিয়ার সিপিএম নেতা বিনয়কৃষ্ণ বিশ্বাসের কথায়, “শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈরাজ্য তৈরি হচ্ছে। এত দীর্ঘ সময় ধরে কোনও শিক্ষাকর্তাকে ঘেরাও করে রাখার নজির আমাদের আমলে নেই। সত্তর-বাহাত্তরের স্মৃতি ফিরিয়ে আনছে তৃণমূল।” তৃণমূলও এই ঘটনায় বিব্রত। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি শঙ্কুদেব পাণ্ডা এই দিন বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে কর্তৃপক্ষ ও ছাত্রদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করেন। তার পরেই অবস্থান বিক্ষোভ ওঠে। |
|
|
|
|
|