হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে দুই চিকিৎসককে মারধরের অভিযোগে জড়িত তৃণমূল নেতা আত্মসমর্পণ করলেন থানায়। দলের নির্দেশেই তিনি এই পদক্ষেপ করেছেন বলে তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে।
গত শুক্রবার রাতে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত পাওয়া নিয়ে গণ্ডগোল ছড়ায়। তারই জেরে স্থানীয় তৃণমূল নেতা রাজেশ চৌধুরী হাসপাতালের দুই চিকিৎসক বিশ্বজিৎ ঘোষ ও অজয় নিয়োগীকে মারধর, ধাক্কাধাক্কি করেন বলে অভিযোগ। শনিবার থানায় অভিযোগ করেন বিশ্বজিৎবাবু। রবিবার ওই ঘটনার প্রতিবাদে ও অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি তুলে আইএমএ-র আরামবাগ শাখা ও হাসপাতালের চিকিৎসকেরা মহকুমাশাসক ও এসডিপিও-র কাঠে স্মারকলিপি দেন। ওই দিনই রাত ১০টা নাগাদ থানায় আত্মসমর্পণ করেন রাজেশ। তাঁকে সোমবার আরামবাগ মহকুমা আদালতের বিচারক তিন দিন জেলহাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। হুগলি জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি দিলীপ যাদব বলেন, “খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাত ১০টা নাগাদ আরামবাগের পল্লিশ্রীর কাছে একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন এক রোগিনীর রক্তের প্রয়োজন হয়। তাঁর আত্মীয় বলে নিজেদের দাবি করে তাপস চক্রবর্তী ও সুরেশ গোস্বামী (আরামবাগ পুরসভার শৌচাগারের দায়িত্বে থাকা) নামে দুই যুবক ব্লাড ব্যাঙ্কে যান। সেখানকার মেডিক্যাল অফিসার অজয় নিয়োগী যথাযথ কাগজপত্র বা হাসপাতাল সুপারের অনুমতি আনতে বলেন। কিন্তু সে সব না থাকায় রক্ত দিতে চাননি তিনি।
খানিক ক্ষণের মধ্যে ওই রোগিনীর হয়ে মহকুমা হাসপাতালের অ্যানেস্থেটিস্ট বিশ্বজিৎ ঘোষ ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত নিয়ে যান। ইতিমধ্যে ঘটনার কথা তৃণমূল নেতা রাজেশের কানে ওঠে। অভিযোগ, কয়েক জন সঙ্গীকে নিয়ে হাসপাতালে চড়াও হন রাজেশ। বিশ্বজিৎবাবুকে মারধর করা হয়। অজয়বাবুকেও জামার কলার ধরে নীচে নামানো হয়।
রাজেশের তরফেও চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে শনিবারই থানায় মারধরের অভিযোগ দায়ের করেন সুরেশ। রাজেশের বক্তব্য, “চিকিৎসক বেআইনি ভাবে রক্ত পাচার করছিলেন। প্রতিবাদ করায় লোকজন ডেকে মারধর করেন।” রাজেশের প্রশ্ন, রোগীর রক্ত পাওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য করা হবে কেন? যথাযথ কাগজপত্র না থাকলে সুপারের অনুমতিই বা লাগবে কিসের জন্য?
অজয়বাবুর বক্তব্য, “আগে যাঁরা রক্ত নিতে এসেছিলেন, তাঁদের কাছে ঠিকঠাক কাগজপত্র ছিল না। সে ক্ষেত্রে সুপারের অনুমতি নেওয়ারও ব্যবস্থা হয়েছে দালালদের দৌরাত্ম্য রুখতেই।” সুপার নির্মাল্য রায় বলেন, “মহকুমা হাসপাতালে নন প্র্যাকটিসিং হিসাবে কর্মরত বিশ্বজিৎবাবু নার্সিংহোমের হয়েও কাজ করছেন কিনা, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। রাতে হাসপাতালে রক্ত নিতে গেলে যথাযথ কাগজপত্র থাকলেই হবে। সুপারের অনুমতির বিষয়টি তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।” তাঁর আরও বক্তব্য, “চিকিৎসকদের মারধর মেনে নেওয়া যায় না।” চিকিৎসকদের একাংশ ও স্থানীয় মানুষের দাবি, তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে দালাল চক্রের যোগ আছে কিনা, খতিয়ে দেখুক পুলিশ। |