|
|
|
|
ভাড়া বাড়িতেই চলছে পাঁশকুড়া পুরসভার কাজ |
এগারো বছরেও হল না নিজস্ব ভবন |
আনন্দ মণ্ডল • তমলুক |
পুরসভা গঠনের পর কেটে গিয়েছে ১১ বছর। এখনও নিজস্ব ভবন তৈরি না হওয়ায় বিডিও অফিসের একটি ভাড়া বাড়িতেই চলছে পাঁশকুড়া পুরসভার যাবতীয় কাজকর্ম।
পুরভবন কোথায় হবে তা নিয়ে পুরবোর্ডের দোলাচলেই ১১ বছরের দেরি। বামফ্রন্ট পরিচালিত প্রথম পুরবোর্ডের পছন্দ ছিল রাস্তার ধারে ৫ একর পূর্ত দফতরের জমি। তা খারিজ করে তৃণমূল-কংগ্রেস জোটের দ্বিতীয় পুরবোর্ড অন্যত্র জমি কিনলেও স্বল্প সেই জায়গায় ভবন তৈরি করে উঠতে পারেনি। শেষমেষ পুরনো সরকারি জমিতেই পুরভবন বানাতে উদ্যোগী হয়েছে তৃণমূল পরিচালিত তৃতীয় পুরবোর্ড। কিন্তু দ্বিতীয় পুরবোর্ড বাম পুরবোর্ডের পছন্দ করা ওই জমি বাতিল করল কেন? আর বাতিলই যদি করল, অন্যত্র কেনা জমিতে পুরভবন বানাল না কেন?
দ্বিতীয় পুরবোর্ডের পুরপ্রধান তৃণমূলের আব্দুল হাকিম খানের বক্তব্য, “বামেদের পছন্দ করা জমি পুরসভার একপ্রান্তে ছিল বলে কাউন্সিলাররা আপত্তি করেছিলেন সেই সময়। তাই জমি কেনা হয়। তারপর ভবন নির্মাণের প্রস্তুতি নিতে নিতেই পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।”
এ দিকে, ওই ১৩ ডেসিমেল জমিতে পুরভবন বানানো সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল পরিচালিত তৃতীয় পুরবোর্ডের পুরপ্রধান জাকিউর রহমান খান। তিনি বলেন, ‘‘মধুসূদনবাড়ে নতুন পুরভবন তৈরির জন্য যে জমি কেনা হয়েছিল তা অপ্রশস্ত। আর সেখানে এই মুহূর্তে যাতায়াতের রাস্তা নেই। তাই পুরসভার নিজস্ব ভবনের জন্য প্রশস্ত জায়গা পেতে জাতীয় সড়ক সংলগ্ন পূর্ত দফতরের জমিটিই ফের মনোনীত করা হয়েছে।” সম্প্রতি পূর্ত দফতর ওই জমি হস্তান্তরও করেছে। পুরপ্রধান জাকিউর রহমান খান বলেন, ‘‘পূর্ত দফতরের কাছ থেকে বিনামূল্যে ওই জমি পাওয়া গিয়েছে। ওই জায়গায় পুরসভার নিজস্ব ভবন ছাড়াও একটি আইটিআই কলেজ-সহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ হবে।”
২০০২ সালে পাঁশকুড়া পুরসভা গঠন হয়। পাঁশকুড়া রেলস্টেশন সংলগ্ন বাজার থেকে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক সংলগ্ন পুরাতন বাজার পর্যন্ত এলাকা নিয়ে নবগঠিত পাঁশকুড়া পুরসভায় ২০০২ সালে প্রথম নির্বাচনে জেতে বামফ্রন্ট। পুরবোর্ডের প্রধান হন ওমর আলি। সেই সময় পাঁশকুড়া-১ বিডিও অফিসের একটি ঘর ভাড়া নিয়ে পুরসভার দফতর চালু করা হয়। ১১ বছর পরেও বিডিও অফিস সংলগ্ন সেই ভাড়া বাড়িতেই পুরসভার অফিস চলছে।
পাঁশকুড়ার নিজস্ব ভবন তৈরির জন্য বামফ্রন্ট পরিচালিত প্রথম পুরবোর্ড পুরাতন বাজারের কাছে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক সংলগ্ন পূর্ত দফতরের হাতে থাকা প্রায় ৫ একর জায়গা পছন্দ করে। সেই সময় ওই জায়গা পেতে পুরসভার তরফে রাজ্য পূর্ত দফতরের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়। কিন্তু জমি হস্তান্তরের আগেই প্রথম পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়। ২০০৭ সালে দ্বিতীয় বার পুরনির্বাচনে জিতে পুরবোর্ড গঠন করে তৃণমূল-কংগ্রেস জোট। বাম পুরবোর্ডের প্রস্তাবিত জমি বাতিল করে ৭ নম্বর ওয়ার্ডে মধুসূদনবাড় এলাকায় ১৩ ডেসিমেল জমি কেনার সিদ্ধান্ত নেয় দ্বিতীয় পুরবোর্ড। ২০১০ সালে পুরসভার নিজস্ব তহবিলের প্রায় ১১ লক্ষ টাকা খরচ করে তমলুক রেল গেটের কাছে ১৩ ডেসিমেল জমি কেনা হয়। কিন্তু পুরভবন তৈরির কাজ আর এগোয়নি।
গত বছর তৃতীয় পুর নির্বাচনে জিতে একক ভাবে পুরবোর্ড গড়ে তৃণমূল। আগের পুরবোর্ডের সিদ্ধান্ত রূপায়ণ না করে ফের প্রথম পুরবোর্ডের আমলে প্রস্তাবিত ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক সংলগ্ন পূর্ত দফতরের জায়গায় পুরভবন তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় নতুন পুরবোর্ড। পূর্ত দফতরের জমি পাওয়ার জন্য রাজ্যের কাছে ফের প্রস্তাব পাঠায় বর্তমান তৃণমূল পুরবোর্ড। রাজ্য পূর্ত দফতর ওই প্রস্তাবে সম্মতি দেওয়ার পর সম্প্রতি জেলা ভূমি সংস্কার আধিকারিকদের উপস্থিতিতে জমিটি হস্তান্তর হয়।
জমি হাতে এলেও কাজ কবে শুরু হবে স্পষ্ট ভাবে জানাতে পারেননি পুর-কর্তৃপক্ষ। পুরপ্রধান জাকিউর রহমান খান বলেন, ‘‘পুরসভার নিজস্ব ভবন তৈরির জন্য ১৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। নতুন ভবন তৈরির জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছে। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে নতুন পুরভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে।”
|
|
|
|
|
|