প্রবন্ধ ৩...
যে পথ রেশমের, সম্পর্কের
যাত্রা শুরু হয়েছিল ২২ জানুয়ারি, ২০১২। তিন হাজার কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ এক অভিযানে যশোর, ঢাকা, সিলেট, শিলচর, ইম্ফল, কা লে, মান্দালয়, রুইলি, তেংচং, এরথাই লেক, দালি হয়ে আজ বিসিআইএম (বাংলাদেশ, চায়না, ইন্ডিয়া ও মায়ানমার) কার র‌্যালি শেষ হবে চিনের কুনমিংয়ে। এ যাত্রা সব অর্থেই অসাধারণ, বহু দশক ধরে অনাদৃত সুবিশাল একটি অঞ্চলের হারিয়ে যাওয়া সংযোগচিহ্নগুলোকে খুঁজে বার করার লক্ষ্যে ‘কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি’র (সিআইআই) অনন্য প্রয়াস। এই প্রচেষ্টা ভারত, চিন, বাংলাদেশ ও মায়ানমারের অর্থনৈতিক বিনিময়কে আবার জাগিয়ে তুলবে, স্থানীয় অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
এক সময় এই ভৌগোলিক অঞ্চলটি নানান পথে যুক্ত ছিল। খ্রিস্টীয় অব্দ শুরুর আগের ও পরের শতাব্দীতে ‘দক্ষিণ রেশম পথ’ (সাদার্ন সিল্ক রোড) ভারত ও চিনকে মিলিয়েছিল তিব্বত মালভূমি হয়ে বা ইউনান, মায়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মান্দালয় থেকে ইউনান অবধি বিস্তৃত বর্মা রোড তৈরি হয়। স্থলপথে মানুষ ও পণ্য পরিবহণের জন্য ইউনান-এর দালি ও মায়ানমারের লাশিও, এই দু’টি অতি গুরুত্বপূর্ণ রেল স্টেশনকে যুক্ত করাই ছিল এই প্রকল্পের লক্ষ্য।
এই দেশ-চতুষ্টয়ের মিল অনেক কিছুতেই, যেমন প্রাচীন সভ্যতায়, প্রাচ্য মূল্যবোধে, বৌদ্ধ ধর্মে, ব্যবসা বাণিজ্যে। বাণিজ্য প্রসারেরও বিপুল সুযোগ আছে এখানে। শুল্ক-অন্তরায় কমিয়ে, শুল্কবিহীন প্রতিবন্ধকতাগুলো নিয়ন্ত্রণ করে এবং ব্যবসাকে সহজসাধ্য করে তুলে এই উৎকর্ষ সাধন সম্ভব। বিসিআইএম-অঞ্চলে আরও বেশি বিনিয়োগ এই এলাকায় পণ্য ও পরিষেবার সরবরাহ মসৃণ এবং উপযুক্ত মূল্য ও জোগান নিশ্চিত করতে পারে। বিসিআইএম ফোরাম তাই চাইছে এ অঞ্চলের প্রাচীন সংযোগচিহ্নগুলোকে আবার জাগিয়ে তুলে বন্ধুতা ও মিলনের নতুন বন্ধন সুদৃঢ় করতে।
ভাবতে আশ্চর্য লাগে, কার র‌্যালির দু’টি প্রান্তসীমা কলকাতা ও কুনমিং-এর আকাশপথের দূরত্ব পনেরোশো কিলোমিটারও নয়, কলকাতা থেকে দিল্লির দূরত্বও এর থেকে বেশি। অথচ এত কাছে থেকেও দু’টি জায়গা কত দূরের।
২৮০ কোটি মানুষের বিসিআইএম অঞ্চলে ২০১১ সালে জিডিপি ছিল ৯ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি ডলার। এই অঞ্চলের নিজস্ব অর্থনৈতিক সুযোগ যে বিরাট, তা সহজেই অনুমেয়। বাধাহীন সংযোগ, উন্নত বাণিজ্যিক সুবিধা, সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমে ব্যবসায়িক যোগাযোগ ও ব্যবহারযোগ্য সম্পদের একত্র অন্বেষণের মাধ্যমে বিসিআইএম অঞ্চলে উত্তরোত্তর অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, দারিদ্র হ্রাস ও জনসাধারণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন সম্ভব।
প্রগতির উল্টো পিঠে আছে বিপরীত চিত্রও। উত্তর-পূর্ব ভারত এবং বাংলাদেশ ও মায়ানমারের সীমান্ত-সংলগ্ন এলাকাগুলিতে উন্নয়নের সুফল অধরাই রয়ে গিয়েছে। বৈষম্য বর্তমান চিনেও। উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলি খুবই সমৃদ্ধ হলেও পশ্চিম চিনের এক বিশাল অংশ তুলনামূলক ভাবে স্বল্পোন্নত।
দক্ষিণ রেশম পথের একটি প্রধান অংশ জুড়ে কলকাতা-কুনমিং কার র‌্যালি অনুষ্ঠানের এই যে ভাবনা, তার মূল লক্ষ্যই হল এই অঞ্চলকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও সার্বিক উন্নয়নের মূল স্রোতের সঙ্গে যুক্ত করা। ২০০৬ সালে দিল্লি ফোরাম সভায় এর প্রস্তাব নেওয়া হয়, এবং ওই বছরেই একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও চিনের তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি হু জিনতাও এই প্রস্তাবে সহমত হন। পরবর্তী পাঁচ বছরে এই রোড র‌্যালি করার বহু চেষ্টা হয়েছে, কিন্তু নানা কারণে হয়ে ওঠেনি। অবশেষে সেটা সম্পন্ন হল। এ বার নতুন পর্ব।

সিআইআই-এর ডিরেক্টর জেনারেল


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.