বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ উপাধি আর মুক্তিযুদ্ধের সম্মাননায় জামাই বরণ।
প্রতিবেশী দেশের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে নিজেদের বৈবাহিক সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে যেন গর্বের শেষ নেই বাংলাদেশের। তা সে শতবর্ষের দোরগোড়ায় দাঁড়ানো ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টর অফ ল প্রদানের অনুষ্ঠানই হোক বা মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ অবদানের জন্য বিশেষ সম্মান। নড়াইলের ভদ্রবিলায় প্রণব মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী যে জন্মেছিলেন, সেখানে অনেকটা পড়াশোনাও করেছেন, প্রাপকের পরিচয় জানাতে গিয়ে সে কথাটিও বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে। কখনও সেই সুখের কথা বলেছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, তো কখনও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঞ্চে বসে মুচকি হেসেছেন প্রণববাবু। আর এ প্রসঙ্গ উঠলে করতালি যেন থামতেই চায়নি। |
দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক উপাধি গ্রহণ করে প্রণববাবুও বলেছেন, কম বয়সে কতবারই তো নড়াইলে এসেছি। কখনও কি ভেবেছি, আর এক দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে আমাকে এখানে আসতে হবে? খানিকটা আপ্লুতই হয়ে গিয়েছিলেন বর্ষীয়ান মানুষটি। বলছিলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের এত মানুষ আমাকে অভিনন্দন বার্তা দিয়েছেন, শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, তা যেন গুনে শেষ করা যায় না। রাতে বঙ্গভবনে মুক্তিযুদ্ধের বিশেষ সম্মাননা পাওয়ার পরেও বলেছেন, “এখানে দাঁড়িয়ে আমি যেন সেই একাত্তরেই ফিরে গিয়েছি। তখন আমি এক সাধারণ সাংসদ, বয়স ৩৬। মনে আছে, সেই সময়ে অনেকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের গতিপ্রকৃতির দিকে আগ্রহ ভরে তাকিয়ে থাকতেন। তখন তো এমন ২৪ ঘণ্টার টেলিভিশন সম্প্রচার ছিল না। ছিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র আর আকাশবাণী। আমরা গভীর আগ্রহ নিয়ে বুলেটিন শুনতাম।”
বক্তার পোডিয়ামে প্রণববাবু তখন যেন এক জাদুকর, ব্যাঙ্কোয়েট উপচে পড়া গণ্যমান্যরা তাকিয়ে তাঁর দিকে।
বলে চলেন রাষ্ট্রপতি, “ভারতের প্রতিটি মানুষের মন-প্রাণ তখন বাংলাদেশের লড়াইয়ের পাশে। ১৯৭১-এর সংসদের নথি খুললে দেখা যাবে, আমিই প্রথম সে দিন রাজ্যসভায় প্রস্তাব এনেছিলাম, বাংলাদেশের নির্বাসিত সরকারকে ভারত সরকার কূটনৈতিক স্বীকৃতি দিক। তার পরেই ভারত সরকার তৎপর হল।”দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে হাজির ছিল কয়েক হাজার টগবগে তরুণ। কালো গাউন আর টুপি পরে তারা যে ভাবে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অনুষ্ঠানে ঢুকল, এ-ও কি শাহবাগ আন্দোলনের চেতনা? তবে যে মাঝে মাঝেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে গুলিগোলা-সংঘর্ষ-ছাত্রাবাস দখলের ছবি উঠে আসে? হাজারো ছাত্র যে ভাবে প্রণববাবুর বক্তৃতা শুনল, মাঝে মাঝে করতালি দিয়ে উদ্বেল হয়ে উঠল, প্রবীণ রাষ্ট্রপতিও যেন তাতে উজ্জীবিত। বললেন, “তরুণরাই তো ভবিষ্যৎ! আপনাদের দিকে তাকিয়ে আমি নিশ্চিত, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। সোনার বাংলার স্বপ্নকে আপনারাই বাস্তবে রূপ দিতে পারেন। ভারত আপনাদের পাশে থাকবে।” |
মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতির শ্রদ্ধাজ্ঞাপন। সোমবার ঢাকায়। |
প্রণববাবু জানান, শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের ক্যাম্পাসেই ‘বাংলাদেশ ভবন’ গড়ার জমি দিচ্ছেন। তাঁর কথায়, “বিশ্বে এমন দেশ কমই আছে, যেখানে বাংলাদেশের মতো গান, কবিতা, শিল্পকলা ও নাটক জাতির বিবেক ও সচেতনতার সঙ্গে গভীর ভাবে যুক্ত। আপনাদের কাছ থেকে আমাদের, ভারতের অনেক শেখার রয়েছে।”
আজ জামাতে ইসলামির দু’দিনের হরতাল শেষ হওয়ার পরে কাল তাদের জোটসঙ্গী বিএনপি-র ডাকা হরতাল। সারা দিন জনজীবন স্বাভাবিক থাকার পরে বিকেলের ট্র্যাফিক জ্যাম বুঝিয়ে দিল ঢাকা রয়েছে ঢাকাতেই। শুধু একটু কড়া পাহারায়। তার মধ্যেই ছোট্ট একটি মিছিল বার হয় হরতালের সমর্থনে। সেটি রাষ্ট্রপতির হোটেলের দিকে মুখ ঘোরাতেই পুলিশের গোল্লাছুট, ‘সামাল-সামাল’! তার পরে হোটেলের বাইরে ছোট্ট একটি পটকা ফাটতেই তুলকালাম। পুলিশের দল একটু বেশিই উত্তেজিত। তাদের সাফ কথা, “এমনটা করবে কেন? পটকা যখন ছুড়তে পেরেছে, বড় কিছুও করতে পারত!”
যুক্তিটা হয়তো ঠিকই। তবে বড় কিছু ঢাকায় আজ তেমন হয়নি। শুধু একটা বড় সমাবেশ হয়েছে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে, কালকের হরতাল উপেক্ষা করার ডাক দিয়ে। আর সত্যিই বেশ বড় সে সমাবেশ!
|