অভিষেক মঞ্চেই বোঝালেন কাণ্ডারী তিনিই
নুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়নি। কিন্তু লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে গত কালই দল তাঁকে অভিষিক্ত করেছে। তার পরে আজ বিজেপির জাতীয় পরিষদের মঞ্চ থেকে তিনি কী বলেন, সেই নিয়ে কৌতূহল ছিল। সেখানে দাঁড়িয়ে নরেন্দ্র মোদী বুঝিয়ে দিলেন, তিনিই এখন কাণ্ডারী।
ধীরে ধীরে, অনেকটা গাড়ির গিয়ার বদলের মতো তিনি গিয়ার বদলেছেন। গতি বাড়িয়েছেন। গুজরাতে তৃতীয় বার জয় যদি হয় ফার্স্ট গিয়ার, তা হলে রাহুল গাঁধীর দুর্গ বলে পরিচিত দিল্লির শ্রীরাম কলেজে ঢুকে পড়াটাকে সেকেন্ড গিয়ার বলেই ধরছেন অনেকে। আর আজ এল থার্ড গিয়ার। দলের জাতীয় পরিষদের মঞ্চে নিজের আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে গতি বাড়িয়ে তিনি এসে পৌঁছলেন রাজপথে।
তবে এই যাত্রা মোটেও সহজ ছিল না। তার প্রমাণ এ দিনও মিলেছে। সঙ্ঘের পথনির্দেশ মেনে গত কাল তাঁর অভিষেক হলেও আজ লালকৃষ্ণ আডবাণী-সুষমা স্বরাজরা মোদীর মোকাবিলায় সুকৌশলে ব্যবহার করতে চেয়েছেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ চৌহানকে। এ বছরের শেষে বিধানসভা নির্বাচনে ক্ষমতা ধরে রাখতে পারলে শিবরাজও মোদীর মতো জয়ের হ্যাটট্রিক করবেন। সে কথা মাথায় রেখেই তাঁকেও সংসদীয় বোর্ডে সামিল করার দাবি তুলেছেন আডবাণী-সুষমারা, যাতে মোদী ও শিবরাজের মর্যাদা একই হয়। পরিষদ মঞ্চে শিবরাজ নিজের সাফল্য বর্ণনা করতে গিয়ে শুরুও করলেন মোদীকে সূক্ষ্ম কটাক্ষ করে। বললেন, “কংগ্রেস শুধু মোদী-মোদী করে। কিন্তু গুজরাত ছাড়াও বিজেপিশাসিত অন্য রাজ্যও ভাল কাজ করছে।” শেষ পর্যন্ত শিবরাজ অবশ্য রয়ে গেলেন মধ্যপ্রদেশের গন্ডিতেই।
জাতীয় পরিষদের মঞ্চে। রবিবার। ছবি: পিটিআই
কিন্তু মোদী যখন বলতে উঠলেন, তিনি অনায়াসে পেরিয়ে এলেন গুজরাতের সীমানা। বুঝিয়ে দিলেন, তিনি কিন্তু সকলকে নিয়েই চলতে আগ্রহী। তাই বিজেপিশাসিত সব রাজ্যের সাফল্যের খতিয়ানই তুলে ধরলেন তিনি। রাজনাথ সিংহ থেকে কল্যাণ সিংহ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীদের সাফল্য শোনাতেও ভুললেন না।
যাতে আডবাণী-সুষমাদেরও মন জয় করা যায়।
এমনকী, যে শিবরাজকে তাঁর মোকাবিলায় নামানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল, প্রশংসা করলেন তাঁরও। যদিও একই সঙ্গে কৌশলে খোঁচার জবাব দিতে শুনিয়ে দিলেন মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সুন্দরলাল পাটোয়ার সাফল্য গাথাও। বোঝালেন, ওই রাজ্যে শিবরাজই একমাত্র নন। তাঁর পূর্বসুরিও কম কিছু ছিলেন না। সর্বোপরি, যে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার সমানে বাদ সাধছেন মোদীর নামে, তারিফ করলেন তাঁর রাজ্যেরও।
দলের নেতাদের একাংশের আক্রমণ এ ভাবে সামলে ওঠার পাশাপাশি আক্রমণের নিশানা করেছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব তথা গাঁধী পরিবারকে। নিজেদের স্বার্থে নেহরু-গাঁধী পরিবার যে দেশের সর্বনাশ করেছে, তা প্রমাণ করার জন্য তুলে আনলেন একের পর এক দৃষ্টান্ত। মোরারজি দেশাই থেকে চন্দ্রশেখর কংগ্রেসে থাকতে কেউ যে গুরুত্ব পাননি, বরং কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসে দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, সে কথা বলে বিঁধলেন কংগ্রেসের প্রথম পরিবারকে। সীতারাম কেশরীকে উৎখাত করার ঘটনা সরাসরি উল্লেখ করে আক্রমণ করলেন সনিয়া গাঁধীকে। আর এখন যে আর প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে ‘রাতের পাহারাদার’ বানিয়ে নিজের হাতে গড়া ‘পাঁচতারা ঝোলাওয়ালা সমাজকর্মী’দের (জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদ) দিয়ে সনিয়া নিজেই দেশ চালাচ্ছেন, কটাক্ষ করেছেন সে কথা বলেও। মনমোহনের বদলে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে প্রধানমন্ত্রী করলে দেশের এই অবক্ষয় রোখা যেত এই মন্তব্য করে কংগ্রেসের বিভাজনও বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা করলেন সুকৌশলে। বিজেপি কর্মীদের মনোবল বাড়াতে বললেন, কংগ্রেসকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতই প্রকৃত দেশভক্তি। স্বাধীনতা আন্দোলনে ব্রিটিশ হটিয়ে ‘স্বরাজ’ এসেছিল। এ বার কংগ্রেস হটিয়েই আসবে ‘স্বরাজ’।
দিল্লির বুকে মোদীর এই কটাক্ষ স্বাভাবিক ভাবেই অস্বস্তি বাড়িয়ে তুলেছে কংগ্রেসের। ফলে কংগ্রেস নেতারাও আজ মোদীর সমালোচনায় নেমে পড়েছেন। মোদী ঠিক এটিই চাইছিলেন। সব আলোচনা ও সমালোচনা তাঁকে ঘিরেই হোক এটাই চাইছিলেন তিনি। সেই কৌশলে এ দিন অন্তত সফল মোদী।
আরও একটি বিষয় তিনি দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে বুঝিয়ে দিতে পেরেছেন। সেটা হল, নিচু তলার কর্মীদের কাছে তিনিই এই মুহূর্তে জনপ্রিয়তম নেতা। এটা আজ বিলক্ষণ বুঝছেন বিজেপি নেতারা। সঙ্ঘের আশিসের পাশাপাশি নিচু তলার কর্মীদের বিপুল সমর্থন পাওয়ার পরে ক্রমে মোদী অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছেন, তাঁকে ঠেকানো আর সম্ভব হবে না এটা মোদী-বিরোধীরা ভালই বুঝেছেন। তাই মোদীর পর সুষমা যখন দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বন্ধ করে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের দাওয়াই দিতে উঠলেন, তাঁকেও মোদীর বক্তব্যের রেশ ধরতে হল।
আডবাণী তাঁর সমাপ্তি বক্তৃতায় আগাগোড়া অটলবিহারী বাজপেয়ী থেকে সুষমা স্বরাজ, শিবরাজ সিংহ চৌহানের তারিফ করলেন ঠিকই, কিন্তু লিখিত বিবৃতিতে তাঁকেও মোদীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে হল। এনডিএ-র বিস্তারের কথা বলেও আডবাণীকে কবুল করতে হল, সংখ্যালঘুদের মধ্যে মোদীর ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার কথা। আডবাণীর মতে, “বিশ্বের অনেক সরকারই গুজরাত সরকার সম্পর্কে অবস্থান বদলাচ্ছে। অথচ এই মোদীকেই স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে সব থেকে বেশি অন্যায্য বদনাম সইতে হয়েছে। জামিয়েত উলেমা-ই-হিন্দের মহমুদ মাদানি গুজরাত সরকারের উন্নয়নের তারিফ করেছেন। গুজরাতে বিজেপির টিকিটে সংখ্যালঘু প্রার্থীরাও পুরভোটে কংগ্রেসের আসন ছিনিয়ে নিয়েছেন।”
লোকসভা ভোটের আগে আজ দলের শেষ জাতীয় পরিষদের বৈঠকে নিজেকে প্রায় লালবাহাদুর শাস্ত্রী ও অটলবিহারী বাজপেয়ীর সঙ্গে তুলনা করে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণার করেছেন মোদী। তার পরেও প্রশ্ন থেকে যায়, বাস্তবে তিনি কতটা সফল হবেন? দল ও শরিকদের মধ্যে থেকে বাধা এখনও রয়েছে। তা ছাড়া মোদী যতই আজ দলের সকলকে তুষ্ট করার এবং সকলের প্রতিনিধি হয়ে ওঠার চেষ্টা করুন, সঙ্ঘ এবং বিজেপি নেতৃত্ব জানেন, গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী আসলে এক জন ‘সোলো প্লেয়ার’। একক খেলোয়াড়। তিনি কাউকে রেয়াত করেন না। তাঁর ‘বাজপেয়ীকরণে’র পথেও গোধরা-পরবর্তী দাঙ্গার কাঁটা রয়েছে।
সর্বোপরি, দলের কাণ্ডারী হওয়ার সময়েও মোদী কিছু শর্ত আরোপ করতে পারেন। সেই সব শর্তে কি রাজি হবেন সঙ্ঘ ও বিজেপি নেতৃত্ব? এ সবের জবাব দেবে ভবিষ্যৎই। পরিষদ শেষে ভবিষ্যতের রণনীতি রচনা করতে আপাতত আর এক দফা একান্ত বৈঠক তিনি সেরে গেলেন সভাপতি রাজনাথ সিংহের বাড়িতে।

আমেরিকায় বাতিল মোদীর বক্তৃতা
আমেরিকায় অস্বস্তি রয়েই গেল নরেন্দ্র মোদীর। ২৩ মার্চ পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হোয়ার্টন স্কুল-এ ভারত-কেন্দ্রিক একটি বার্ষিক অধিবেশনে মূল বক্তা হিসেবে তাঁকে আমন্ত্রণ জানায় সেখানকার ছাত্র সংগঠন। ভিডিও কনফারেন্সে বক্তৃতা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অধ্যাপক ও অধিকাংশ ছাত্রের তীব্র আপত্তিতে সেই বক্তৃতা বাতিল করে দিলেন হোয়ার্টন কর্তৃপক্ষ। ছাত্র-অধ্যাপকরা এক চিঠিতে বলেন, “এই সেই রাজনীতিবিদ, যাঁকে ২০০৫-এ মার্কিন বিদেশ দফতর কূটনৈতিক ভিসা দেয়নি। যুক্তি ছিল, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে গুজরাত দাঙ্গা ঠেকাতে তিনি কিছুই করেননি।” এই প্রথম এই অধিবেশন সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করলেন হোয়ার্টন কর্তৃপক্ষ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.