দিন কয়েক আগে রাজস্থান থেকে মার্বেল বোঝাই গাড়ি নিয়ে রওনা দিয়েছিলাম। তপসিয়ার একটি গুদামে ওই পাথর পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল। এ দিকের রাস্তাঘাট তেমন চিনি না। তাই খালাসি মজিদ খানের পাশাপাশি গাইড হিসেবে কলকাতার শেখ সইফুদ্দিনও ছিলেন গাড়িতে। ২ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে আসার পর সইফুদ্দিনই রাস্তা চেনাচ্ছিলেন আমাদের। শনিবার রাতে ডানকুনি পার হয়ে নিবেদিতা সেতু, বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে ধরে যশোর রোডে
এসে পড়ি। সেখান থেকে ভিআইপি রোড ধরে রওনা দিই। লেকটাউন পেরনোর পরে সইফুদ্দিন বলে উড়ালপুল ধরে যেতে।
খুব একটা গতিতে চালাচ্ছিলাম না। উড়ালপুলে ওঠার পরেই হঠাৎ একটা ঝাঁকুনি। একটা বিকট আওয়াজ। বুঝতে পারলাম, গাড়িটা বসে যাচ্ছে! তার পরেই উল্টে গেল। মনে হল, গাড়ি সমেত নীচের দিকে গড়িয়ে পড়ছি, সামনের সব কিছু উল্টে যাচ্ছে! কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখলাম, স্থানীয় গাইড শেখ সইফুদ্দিন ছিটকে পড়ল রাস্তার ধারে। আমি আর মজিদ গাড়ির ভিতরে আটকে! ভাবলাম, ভূমিকম্প হল নাকি! |
|
|
মহম্মদ খালেক (চালক) |
সইফুদ্দিন (স্থানীয় গাইড) |
|
চালকের কেবিনেই বন্দি হয়ে পড়ে রইলাম। গায়ে-ঘাড়ে-কোমরে অসহ্য যন্ত্রণা। কিন্তু তার চেয়েও যেন আতঙ্ক বেশি গ্রাস করছে আমাদের। অচেনা শহর, অচেনা লোকজন। কী ভাবে উদ্ধার পাব, মাথায় আসছে না। কিছু ক্ষণ চিৎকার করলাম। কারও সাড়া মিলল না। ভয়ে, যন্ত্রণায় আমি আর মজিদ, একে অন্যের দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলাম।
এ ভাবে কত ক্ষণ কেটেছিল জানি না। হঠাৎ লোকজনের গলার আওয়াজ কানে আসতে লাগল। প্রথমে ভেবেছিলাম, মনের ভুল। কিন্তু না। কিছু ক্ষণের মধ্যেই সেই ভুল ভাঙল। দেখলাম, কয়েক জন এগিয়ে উঁকি দিচ্ছেন। ভাষা ঠিক বুঝতে পারলাম না। তবে মনে হচ্ছিল, আমাদের উদ্ধার করতেই এসেছেন। ওই লোকেরাই আমাদের টেনে চালকের কেবিন থেকে বের করলেন। তার মধ্যেই এসে পড়ল একটি পুলিশের জিপ।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকেরাই আমাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন। আশপাশের লোকের সঙ্গে কথা বলে জানলাম, এটার নাম আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। ডাক্তারবাবুরা এলেন। তাঁদের বললাম, গায়ে, ঘাড়ে অসহ্য যন্ত্রণা। তাঁরা বেশ কিছু ক্ষণ ধরে পরীক্ষানিরীক্ষা করে অবশ্য বললেন, চোট তেমন মারাত্মক নয়।
ফের এক গাড়ি পুলিশ এল। গাড়ির গতি, কোথা থেকে আসছিলাম, কী ভাবে ঘটনা হল সব জিজ্ঞাসা করলেন পুলিশ অফিসারেরা। তাঁরা জানতে চাইছিলেন, ব্রিজের গায়ে ধাক্কা মেরেছিলাম কি না। বললাম, না, এমন ঘটনা ঘটেনি।
পুলিশের কাছেই শুনলাম, সইফুদ্দিনের আঘাত বেশি হওয়ায় তাঁকে অন্য একটা বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জানি না, তাঁর চোট কতটা মারাত্মক।
হাসপাতালে রয়েছি। একজন জিজ্ঞাসা করলেন, এমন ঘটনার মধ্যে আগে কখনও পড়েছেন? সত্যি বলছি, ট্রাকচালক হিসেবে দেশের আনাচে-কানাচে বহু জায়গায় ঘুরে বেড়াই। ছোটখাটো অনেক দুর্ঘটনাও হয়েছে। কিন্তু এমন অভিজ্ঞতা এই প্রথম। |