বাজেটে শক্তি মেলেনি, সূচক
দুলছে বিশ্ব বাজারের ছন্দে
নেকেই মনে করেন, বাজেট তৈরি হয় শুধু তাঁদের জন্য। মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে লগ্নিকারী ও শিল্পপতিদের ধারণা, এতে তাঁদের দাবি সব চেয়ে বেশি। তাই এঁদের আশাভঙ্গ হলেই বাজেট খারাপ। যেন বাজেট একটি ভাণ্ডার, যেখান থেকে শুধু পেতেই হবে। এই ভাণ্ডার ভর্তি করার জন্য যে কিছু দিতেও হয়, তা মানতে কষ্ট হয় অনেক সময়। অথচ ভারতের ভাণ্ডার এখন অনেকটাই ফাঁকা। এই অবস্থায় দেওয়ার কাজটা শক্ত। পাশাপাশি চড়া মুদ্রাস্ফীতির জমানায় মানুষের থেকে নিতে গেলেও পাঁচ বার ভাবতে হয়। বিশেষ করে সামনে যখন নির্বাচন। এমন এক পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে বাজেট লিখতে হয়েছে পি চিদম্বরমকে।
বিশেষ কোনও সম্প্রদায়কে খুশি করার চেষ্টা না করে এ বার গোটা অর্থনীতির স্বার্থ দেখতে চেষ্টা করেছেন অর্থমন্ত্রী। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, গ্রামোন্নয়ন ইত্যাদিতে বেশি নজর দিয়েছেন। দেশের ভাল হলে তার সুফল পাবেন সকলে। আর জনতার স্মৃতি সাধারণত ক্ষণস্থায়ী হয়। কাজেই কিছু দিতে হলে, তা দিতে হবে আরও কিছু সময় বাদে। জনতাকে মোহিত করার জন্য হয়তো সময়মতো ছাড়া হবে খাদ্য সুরক্ষা বিল। বিলটি এমন জনমুখী হবে, যার বিরুদ্ধাচরণ করলে বিরোধীরাই বিপাকে পড়বে। এই ব্রহ্মাস্ত্র কংগ্রেস ব্যবহার করতে পারে এমন সময়ে, যা নির্বাচন পর্যন্ত মানুষকে বশ করে রাখতে পারে। এ বার বাজেটে চিদম্বরম খাদ্য সুরক্ষা নিয়ে ব্যবস্থা রেখেছেন ১০ হাজার কোটি টাকার।
কৃষির বরাদ্দ ভাল বাড়লেও শিল্প যেন একটু অবহেলিত এ বারের বাজেট প্রস্তাবে। বহু গুরুত্বপূর্ণ শিল্পের কথা উল্লেখ নেই। বাড়ানো হয়েছে কোম্পানি করের উপরে দেয় সারচার্জ। সারচার্জ বেড়েছে ডিভিডেন্ড বণ্টন করেও। শিল্পে ১০০ কোটি বা তার বেশি লগ্নিতে ২ বছর অবশ্য ১৫% ইনভেস্টমেন্ট অ্যালাওয়েন্স-এর সুবিধা মিলবে। এটা শিল্পের বড় প্রাপ্তি। লগ্নির জন্য প্রয়োজন তেজি শেয়ার বাজার। বাজার ভাল জায়গায় থাকলে শিল্পের পক্ষে শেয়ার ইস্যু করে মূলধন সংগ্রহ সহজ হয়। সুগম হয় বিলগ্নীকরণের পথও। বাজারে শক্তি ফিরিয়ে আনার মতো দৃঢ় কোনও পদক্ষেপ বাজেটে কিন্তু দেখা যায়নি। তেমন কোনও প্রয়াস চোখে পড়েনি, যাতে বিশাল জনতা যাঁরা বাজার ছেড়ে চলে গিয়েছেন, তাঁদের ফেরত আনা যায়। ফলে আমাদের নির্ভর করে থাকতে হবে সেই বিদেশি লগ্নির উপর। ডলার-পাউন্ডের আগমনে বাজার উঠবে, প্রত্যাগমনে পড়বে। একই সঙ্গে পড়বে-উঠবে ডলারের দাম। রাজীব গাঁধী ইক্যুইটি সেভিংস স্কিমের পরিধি একটু বাড়ানো হলেও, তা এই অস্থির বাজারে বিরাট সংখ্যায় নতুন লগ্নিকারীদের টেনে আনবে বলে মনে করা হচ্ছে না। মিউচুয়াল ফান্ড নিয়েও কোনও সদর্থক চিন্তাভাবনা নেই এ বারের বাজেটে। বরং আয় বণ্টন করের উপর সারচার্জ বাড়ায় তা মৃদু আঘাত হানতে পারে মিউচুয়াল ফান্ড শিল্পে।
তবে সঞ্চয়কারীদের জন্য এটা-ওটা আছে। প্রস্তাব আছে মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে ভারসাম্য রেখে বাজারে এমন বন্ড ছাড়ার, মূল্যমান বাড়লে যে বন্ডের সুদ বাড়বে, কমলে কমবে। ৫০,০০০ কোটি টাকার করমুক্ত বন্ড ইস্যুতেও সায় দেওয়া হয়েছে। সুদ কমে আসায় এ বছর অবশ্য করমুক্ত বন্ড নিয়ে তেমন উত্তেজনা নেই লগ্নিকারীদের মধ্যে। গৃহঋ
ণে বাড়তি ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সুদে শর্ত সাপেক্ষে কর ছাড়ের সুবিধা মিলবে ২০১৩-’১৪ সালে। বিদেশ থেকে পুরুষরা ৫০ হাজার ও মহিলারা ১ লক্ষ টাকা মূল্যের সোনা আনতে পারবেন। কর দিতে হবে না। গ্রাহকদের সুবিধা করে এটিএম খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সব শাখায়। আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে ঢেলে সাজবে ডাকঘরগুলি। আনা হবে কোর ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের আওতায়। এই কাজে বরাদ্দ হয়েছে ৪,৯০৯ কোটি টাকা।
অল্প হলেও বাজেটের প্রসাদ পাবেন সর্বনিম্ন স্তরের করদাতারা। কর স্তরের পুনর্বিন্যাস ও তার হারে হেরফের হয়নি। কিন্তু ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে কর বাবদ ২,০০০ টাকা ছাড় দেওয়া হয়েছে। যদিও মূল্যবৃ্দ্ধির তুলনায় এই ছাড় যৎসামান্য। যাঁদের আয় ১ কোটি টাকার বেশি, তাঁদের সারচার্জ দিতে হবে ১০%।
কোনও বারুদ ছিল না এ বারের বাজেটে। সামগ্রিক ভাবে বেশ সাদামাঠা সাধারণ মানুষের কাছে। বাজেটের দিন বড় পতন হলেও ধীরে ধীরে সাধারণ ছন্দে ফিরছে শেয়ার বাজার। বাজেটের প্রভাবমুক্ত বাজার ফের দুলছে বিশ্ব বাজারের ছন্দে। বাজার নেমে আসায় ও বাজেট থেকে শক্তি না পাওয়ায় লগ্নিকারীরা হতাশ। এখন অপেক্ষা এমন ঘটনার জন্য, যা সূচককে উপরে তুলবে। ভারতীয় শেয়ার বাজার পাকাপাকি ভাবে ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে, ইউরোপের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হলে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.