“যখন স্নাতক স্তরে পড়ার সময় বন্ধুদের সঙ্গে লাইব্রেরি গিয়ে কোনও সাহায্য না পেয়েই ফিরে আসতে হত। একদিন তো ক্ষোভে বলেই ফেললাম, লাইব্রেরি আমাদের জন্য নয়!” নিজের অভিজ্ঞতার কথা শোনাচ্ছিলেন বিশ্বভারতীর সদ্য প্রাক্তনী গোপাল মুর্মু। এই অভিজ্ঞতা শুধু গোপালের নয়। তাঁর মতো বহু দৃষ্টিহীন পড়ুয়াই বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে তেমন সাহায্য না পেয়ে সমস্যায় পড়তেন। এ বারে সুপ্রাচীন কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের এই বিশেষ ‘প্রতিবন্ধকতা’ কাটাতে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ গ্রন্থাগার পরিষেবা চালু করল বিশ্বভারতী। দৃষ্টিহীন পড়ুয়াদের গান ও সঞ্চালনায় আজ, সোমবার থেকেই আনুষ্ঠানিক ভাবে তা চালু হবে। শনিবার একটি সাংবাদিক বৈঠক করে নতুন-ব্যবস্থা হাতেকলমে দেখালেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
কী কী থাকছে এই লাইব্রেরিতে?
উপ-গ্রন্থাগারিক নিমাইচাঁদ সাহা জানালেন, ব্রেইল ছাড়াও থাকছে বিশেষ ধরনের প্রিন্টার, স্ক্যানার, স্ক্রিন রিডার সফট্অয়্যার, যা দিয়ে দৃষ্টিহীনরা সহজেই কম্পিউটার চালাতে পারবেন। থাকছে অডিও বই ও ই-বই পরিষেবাও। “গ্রন্থাগার পরিষেবা জগতে একটি নতুন দিক খুলে গেল।” বলছেন নিমাইবাবু। আর যাঁদের জন্য লাইব্রেরি, সেই প্রণব, দৈবকী, নূপুরের মত, “সকলের সঙ্গে লড়ার সুযোগ ও অধিকার পেলাম।” বিশেষ কম্পিউটারে মাউস ছুঁয়ে প্রথম থেকেই এই লাইব্রেরিকে আপন করে নিয়েছেন প্রণবেরা। আর গোপাল মনে করছেন, “আমি সুবিধা পাইনি তো কি হয়েছে? আমার ভাইবোনেরা তো আজ এই সুযোগ পাচ্ছে! সকলে এ ভাবেই এগিয়ে এলে একদিন আমরাও ভুলে যাব, আমাদের কোনও শারীরিক প্রতিবন্ধকতা আছে।” সাংবাদিক বৈঠকে বাজছিল ইংরাজি বিভাগের দৃষ্টিহীন পড়ুয়া প্রণবকুমার সিংহের মাউথ অরগান। সুরে ছিল ‘উই শ্যাল ওভারকাম’। সব প্রতিবন্ধকতাকে জয় করার সঙ্কল্প ছিল, তাঁদের চোখেও। |