বলছেন বিশেষজ্ঞেরা
প্রয়োজন ছাড়াই দেদার তোলা হচ্ছে ভূগর্ভের জল, নামছে স্তর
ত কয়েক বছর ধরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমেছে। সংস্কারের অভাবে সঙ্কুচিত হচ্ছে নানা জলাশয়। নাব্যতা বাড়ছে এলাকার নদীগুলিরও। অথচ, প্রয়োজনের থেকে বেশি পরিমাণে মাটির নীচের জল তুলে নেওয়ায় কালনা মহকুমায় জলস্তর নামছে। সম্প্রতি কালনা ২ ব্লকে একটি আলোচনাসভায় ও পূর্বস্থলীতে একটি প্রশিক্ষণ শিবিরে উঠে এল এমনই তথ্য। বছরভরই কালনার পাঁচ ব্লক জুড়ে ধান, পাট, আলু ও নানা সব্জির চাষ হয়। তাতে ব্যবহৃত প্রচুর জল। বিশেষজ্ঞদের দাবি, মাটির নীচ থেকে অতিরিক্ত জল তোলায় ক্রমশ জলস্তর নামছে। কৃষির জন্য মূলত দু’ভাবে জল পাওয়া যায়। নদী, খাল, বিলে জমা বৃষ্টির জল ও গভীর, অগভীর নলকূপের মাধ্যমে তোলা ভূগর্ভস্থ জল। কৃষি বিশেষজ্ঞেরা জানান, গত এক দশক ধরে মহকুমায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ক্রমশ কমেছে। জলাশয়গুলির নিয়মিত সংস্কার হয় না। গুরজোয়ানি, ভল্লুকা, বেহুলা, ভাগীরথী নদীর নাব্যতা বেড়েছে। এ ছাড়াও নদীর পাড় বেআইনি ভাবে দখল করে চাষ করা হচ্ছে। মন্তেশ্বর, নাদনঘাট-সহ নানা জায়গায় যে ডিভিসি-র ক্যানাল থেকে সব সময় জল মেলে না। তাই চাষিরা যথেচ্ছ মাটির তলার জল তুলে কৃষিকাজে ব্যবহার করছেন। আর তাতেই ভবিষ্যতের জন্য আশঙ্কার কারণ তৈরি হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞদের মত।
উৎস থেকে চাষের জমিতে পৌঁছনোর আগেই নষ্ট হয় অনেক জল। কালনায় তোলা নিজস্ব চিত্র।
সম্প্রতি পূর্বস্থলীতে সেন্ট্রাল গ্রাউন্ড ওয়াটার বোর্ডের একটি প্রশিক্ষণ শিবিরে সংস্থার হাইড্রোজিওলজিস্ট শেখ মহদুদ হোসেন বলেন, “কালনা মহকুমায় বোরো চাষের জন্য প্রচুর জল মাটির নীচ থেকে তুলে নিচ্ছেন চাষিরা। বৃষ্টিপাত যা হচ্ছে তাতে জলস্তরের ঘাটতি মিটছে না। ফলে জলস্তর ক্রমশ নিম্নমুখী হচ্ছে।” ওই বোর্ডেরই আর এক বিজ্ঞানী সঞ্জিত চক্রবর্তী বলেন, “মহকুমা থেকে যে ভূগর্ভস্থ জল তোলা হয় তার ৭৬ শতাংশ ব্যবহৃত হয় চাষের কাজে। তার মধ্যে আবার অধিকাংশটাই বোরো চাষে লাগে।” সম্প্রতি কৃষিমেলা উপলক্ষে কালনা ২ ব্লকে আয়োজিত একটি আলোচনাসভায় কৃষি বিশেষজ্ঞ তথা জেলার স্টেট এগ্রিকালচারাল ফার্মের আধিকারিক মানস মুখোপাধ্যায় বলেন, “সাধারণত জল না পেলে নলকূপের পাইপ আরও নীচে নামিয়ে দেওয়া হয়। বিপদটা এখানেই। বেশি নীচে থেকে ওঠা জলে বেশি পরিমাণ ফ্লোরাইড, লেড-সহ নানা ধাতজ উপাদান উঠে আসার সম্ভাবনা থাকে। তা থেকে অনেক সমস্যা হতে পারে। তাই চাষিদের সতর্ক হতে হবে।”
মহকুমা কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, মন্তেশ্বর ব্লকে জলস্তর নেমেছে সব থেকে বেশি। সেখানকার বহু জায়গাতেই ৭৫ ফুট গভীরে জল পাওয়া যাচ্ছে। এর পরেই রয়েছে পূর্বস্থলী ২ ব্লক। সেখানে জলস্তর রয়েছে ৬২ ফুট নীচে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, চলতি মরসুমে জলস্তর আরও নেমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মহকুমা কৃষি আধিকারিক স্বপনকুমার মারিক বলেন, “বেশির ভাগ জায়গাতেই জলের উৎস থেকে জমি থাকে অনেক দূরে। ফলে কাঁচা নালা দিয়ে জল পৌঁছতে গিয়ে মাঝপথে প্রচুর জল নষ্ট হয়।” মন্তেশ্বরে জলস্তর সব চেয়ে বেশি নামার কারণ কী? কৃষি দফতর সূত্রে খবর, অন্য ব্লকে বিভিন্ন শস্য চাষ হলেও মন্তেশ্বরে মূলত ধান চাষই হয়। ফলে প্রচুর পরিমাণ জল দরকার হয়। ব্লক কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, গত আমন মরসুমে প্রায় ২১ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছিল। বৃষ্টি কম হওয়ায় মাটির তলা থেকে জল তুলে সেচের কাজে ব্যবহার করতে হয়েছে চাষিদের। মহকুমা কৃষি দফতরের সহ-কৃষি অধিকর্তা নিলয় করের দাবি, “বেশির ভাগ চাষির ধারনা, ধান গাছ গলা পর্যন্ত ডুবিয়ে রাখলে ফলন ভাল হবে। তাই অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োজনের অতিরিক্ত জল ব্যবহার হয়।” মন্তেশ্বরের কৃষি আধিকারিক রঙ্গন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এঁটেল মাটির জন্য মন্তেশ্বরে ধান চাষ বেশি হয়। তবু সর্ষে, পেঁয়াজ-সহ বেশ কয়েকটি ফসলের চাষ বাড়ছে। শ্রী পদ্ধতিতে ধান চাষের এলাকাও বাড়ছে। কিন্তু এখনও ধানের কোনও বিকল্প চাষিদের কাছে নেই।” পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার উপায় কী? বিশেষজ্ঞদের মত, কৃত্রিম উপায়ে জলস্তর বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ ছাড়া চাষের পদ্ধতি পাল্টাতে হবে। চাষিদের এই বিষয়টি বোঝাতে হবে। তাতে ধীরে ধীরে ফল মিলতে পারে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.