ভাঁড়ারে টান, বেহাল পথ্য
রোজ ডাল ও কুমড়োর ঘ্যাঁট, কদাচিৎ মাছ-ডিম
হাসপাতালের সুপারের টেবিলের সাজানো রয়েছে ছাতাপড়া পাউরুটি। পাশে কালো হয়ে যাওয়া কলা। এই খাবারই সকালে খেতে দেওয়া হয়েছিল বিধানচন্দ্র রায় শিশু হাসপাতালে ভর্তি বাচ্চাদের। আর তা নিয়েই অভিভাবকেরা প্রতিবাদ জানাতে গিয়েছিলেন হাসপাতালের সুপারের কাছে। অভিভাবকদের বক্তব্য, এই খাবার খেলে তো সুস্থ মানুষই অসুস্থ হয়ে পড়বে। তা হলে অসুস্থ বাচ্চাদের এমন খাবার দেওয়া হচ্ছে কেন, সে প্রশ্নও তুলেছেন তাঁরা। অভিভাবকদের কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি হাসপাতালের সুপার।
মাসখানেক আগে এসএসকেএমে হৃদ্রোগ বিভাগের পুরুষ রোগীরা এক দিন অনশন করেছিলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, প্রত্যেক দিন পথ্যে স্বাদহীন কুমড়োর তরকারি, জলের মতো ডাল মিলছে তাঁদের।
শুধু এই দু’জায়গাতেই নয়, রাজ্যের সব হাসপাতালেই পথ্য বলতে আপাতত এ রকমই খাবার জুটছে রোগীদের। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিভাগে ভর্তি মুর্শিদাবাদের রেজিনগরের বাসিন্দা সাকিনা পারভিন বলেন, “মাংস দুর তো অস্ত্, মাছও রোজ মিলছে না। মাঝেমধ্যে ডিম মেলে। প্যাকেটে দুধের বদলে খোলা অবস্থায়, জল মিশিয়ে দুধ দেওয়া হচ্ছে। তরকারি বলতে হয় কুমড়ো, নয় বেগুন বা শাক। সঙ্গে ট্যালটেলে ডাল।”
কেন এই হাল পথ্যের?
বিভিন্ন হাসপাতালে পথ্য সরবরাহকারীরা বলছেন, তেল, মশলা, রান্নার গ্যাস, সব্জিদাম বেড়েছে সব কিছুরই। কিন্তু ২০০৯ সালের পর থেকে সরকারি হাসপাতালে রোগীদের পথ্যের দাম এক পয়সাও বাড়েনি। সস্তা দরে পথ্য দিতে গিয়েই এই হাল হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এখন হাসপাতালে পথ্য সরবরাহের জন্য রোগী পিছু দৈনিক সর্বনিম্ন মূল্য ৪৩ টাকা ৮২ পয়সা এবং সর্বোচ্চ মূল্য ৪৯ টাকা ৭ পয়সা দেওয়া হয়। এই টাকায় আজকের দিনে কী করে ঠিক মতো খাবার দেওয়া যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে দফতরের অন্দরেও। এত কম দামে ভাল খাবার দেওয়া কী করে সম্ভব, সম্প্রতি সে ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছিল আদালতও।
স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের বক্তব্য, খাবারের মান ঠিক রাখতে তাঁরা সরকারি হাসপাতালে রোগীদের দৈনিক খাবারের জন্য বরাদ্দ টাকার পরিমাণ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, “এখন খাবারের জন্য মাসে ৪ কোটি টাকা হয়। এই টাকা বাড়িয়ে সাড়ে ৬ কোটি টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।” অর্থাৎ পথ্যের জন্য বছরে বাড়তি প্রয়োজন ছিল বছরে ৩০ কোটি টাকা। অর্থ দফতরের কাছে তাঁরা এই অতিরিক্ত টাকা চেয়ে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু মাস দু’য়েক আগে সেই ফাইল ফেরত পাঠিয়েছে দফতর। অর্থ দফতরের কর্তাদের মতে, এই টানাটানির মধ্যে এত টাকা দেওয়া অসম্ভব। তাই রোগীদের এই ধরনের খাবারই খেতে হবে।
স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের মতে, রোগীদের সুস্থ হওয়া অনেকটাই পথ্যের উপর নির্ভরশীল। তাই পথ্যের দাম বাড়ানোর বিষয়টি বুঝিয়ে ফের বিবেচনার জন্য ওই ফাইল অর্থ দফতরে পাঠানো হয়। ক্ষুব্ধ স্বাস্থ্যকর্তাদের অভিযোগ, চলতি মাসেই আর্থিক বছর হলেও সেই ফাইল অর্থ দফতরে আটকে রয়েছে।
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, “রোগীদের সুস্থ হওয়ার জন্য ভাল মানের সুষম পথ্য দরকার। সমঝোতা মানে রোগীর স্বাস্থ্যের সঙ্গে আপস করা। অর্থ দফতর টাকা না দিলে আমাদের কিছু করার নেই। কিন্তু সরকারের বোঝা উচিত, এতে রোগীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.