রবিবাসরীয় প্রবন্ধ ১...
কলকাতার নীচে থাকি
ঘেন্না করব কী? মা মানুষের নোংরার টিন মাথায় নিল, তাই তো আবার আমরা ভাত খেতে পেলাম। তার আগে দিনের পর দিন লাল আলু সেদ্ধ করে খাওয়া।
বাবা হাসপাতালে চাকরি করত, সাফাইয়ের কাজই। হঠাৎ কাজটা চলে গেল। আমরা চার ভাই আর মা রোজ খেতে পাই না। দিদিমা তার কাজটা মা’কে দিয়ে দিল। খাটা পায়খানা সাফ করা। ডাব্বু হাতে লোকেদের খাটা পায়খানার তলার দিকে ইট সরানো খোপের মধ্যে দিয়ে মাথা গলিয়ে নাদায় পড়া পায়খানা তুলে বাইরের ড্রামে রেখে, তার পর সেটা মাথায় নিয়ে বড় ড্রাম অবধি যাওয়া, সেখানে ফেলা।
অভ্যেস না থাকায় মা পেরে উঠত না। আমার তখন বছর আটেক বয়েস, দুপুরে ইস্কুলে পড়ি। ভোর বেলায় ঘুম থেকে উঠে মুখে কাপড় বেঁধে মায়ের সঙ্গে কাজে লেগে গেলাম। কোনও পয়সা পেতাম না, তবে চা-পাউরুটির ভাগ পেতাম। দু’চার পয়সা মা দিত মাঝে মাঝে।’
রাজা হরি জানালেন। ৩৪ যোগেন্দ্র বসাক রোডের বস্তিতে থাকেন। পুরো বস্তিরই একটা নম্বর। সে প্রসঙ্গে পরে আসছি।
‘ওই অবস্থাতেই চা-পাউরুটি খেতেন?’ জিজ্ঞাসা না করে পারলাম না। হেসে ফেললেন রাজা। ‘হাতটা ধুয়ে নিতাম। আবার চা নেওয়ার জন্য একটা অ্যালুমিনিয়ামের দোলনা মায়ের পেট-কাপড়ে বাঁধা থাকত। সেটা চায়ের দোকানের সামনে পাততাম, তার ওপর অনেকটা উঁচু থেকে চা ঢালত দোকানদার। এক বার আমার হাত একটু পুড়ে গিয়েছিল। আর পাউরুটিগুলো ছুড়ে দিত। আমাদের দেওয়া পয়সার ওপর গরম জল ফেলে সেগুলো নিত।’
‘আর টাকা দিলে?’
‘পুরো টাকা। কী যে বলেন।’ রাজা এ বার শব্দ করে হাসেন।
‘ওই সাত সকালে কি নেশা করে...’
‘মা বা আমি কেউই নেশা করতাম না। নেশাটা শুরু করলাম যখন অন্য কাজ...’
রাজা আগেই জানিয়েছিলেন, ওঁরা কাজ করতেন টালা পার্ক সংলগ্ন এলাকায়। আমি জানতে চাই ‘যখন খাটা পায়খানাগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল, তখন মনে হচ্ছিল, কাজটা চলে গেলে খাব কী?’
‘কেউ কেউ অমন কথা বলত বটে, আমার তেমন ভয় করত না। মা’কে বলতাম, মানুষদের হাগতে-মুততে হবেই, পরিষ্কার তারা নিজেরা করতে পারবে না, আমরা থাকবই।’ বেশ জোরের সঙ্গেই বললেন রাজা।
‘তার বছর কয়েক পর থেকে ‘পিট’ পরিষ্কারের কাজ বাড়তে থাকল। আমি অবশ্য তখন ম্যানহোলেও নামতে শুরু করে দিয়েছি। একটু রোগাপটকা চেহারা হলে ম্যানহোলে নামতে সুবিধে। ম্যানহোলের মুখগুলো দেখেছেন তো, সেঁধানো মুশকিল। নাটা চেহারা হলে সুবিধেও যেমন, অসুবিধেও তেমনই। কখন কখনও খাবি খেতে হয়।’
‘খাবি খেতে হয়? মানে ওই নোংরা জল পেটেও তো চলে যায়।’
‘হ্যাঁ যায়। আমারও অনেক বার গেছে। কী করব, থু-থু করে ফেলেছি। মুখ ধোওয়া অবশ্য ওপরে ওঠার পরে, ওই জন্যে তো আর কাজ ছেড়ে ওপরে ওঠা যায় না।’
রাজা ও তাঁর স্ত্রীর চন্দ্রার তিন মেয়ে। তিন জনকেই স্কুলে দিয়েছিলেন। প্রথম দু’জন কম বয়সে ভালবেসে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ি চলে গেছে। ছোট মেয়ে রেশমা হরি কাছের ভারতী গার্লস স্কুলে ক্লাস টেনে পড়ছে। রাজার আশা, তাকে কলেজে পড়াবেন।
৩৪ যোগেন্দ্র বসাক রোডে অনেকগুলো ঘর, আলাদা আলাদা পরিবার, কিন্তু এক/দুই করে আলাদা নম্বর নেই। চিঠি আসে ওঁদের ক্লাবে, সেখানে গিয়ে নিয়ে আসতে হয়।
মধ্য চল্লিশের রাজা এখন কাছের এক হাসপাতালে স্থায়ী কর্মী। তবে বহু দিন ধরে বহু ম্যানহোলে অনেক বাখারি, প্লাস্টিকের পাইপ ঢুকিয়ে পিট বা চেম্বারের মাল খালাস করার আগে স্ল্যাব তুলে জিনিস দেখে নিয়ে দরদস্তুর করে, আরও জনা তিন সহকর্মীর সঙ্গে আকণ্ঠ চোলাই খেয়ে নিজেদের মধ্যে ফস্টিনস্টি করতে করতে, এমনকী ময়লা ছোড়াছুড়ি করে চেম্বারের মধ্যে নামতে নামতে এক দিন হাসপাতালের চাকরিটা পান।
রাজা জানিয়েছেন, এখন মেশিন বেরিয়েছে, হাইড্রেন ম্যানহোল পরিষ্কার করার। তাঁদের মতো কেউ কেউ এগুলো চালান। তবে বেশির ভাগই দড়ি-বালতি নিয়ে ম্যানহোলের অন্ধকারে নামতে বেশি স্বচ্ছন্দ। একটু কম-ভরাট শুকনো ম্যানহোলে আবার রাশি-রাশি আরশোলা আর ধেড়ে ইঁদুরের রাজত্ব। এদের সঙ্গেও প্রয়োজনে যুদ্ধ করতে হয় বইকী। তা ছাড়া গ্যাসও আছে, তাতে আর এক ভয় মৃত্যুভয়। ঠিক এই ভয়ই পান করণ ওরফে নন্দ হরি। তাঁরও নাটা চেহারা। প্রথমে আগুপিছু ভাবতেন না, হরবখত ম্যানহোলে নেমে পড়ে ময়লা জল তুলে, ভেতরের নোংরা মাটি বেশ খানিকটা উপরে দাঁড়ানো পার্টনারের দড়ি-বালতির কপিকলে দিতে-দিতে হাঁটু অবধি থকথকে কাদার মধ্যে দাঁড়িয়ে বাখারি চালাতেন। গ্যাস-মাস্ক জীবনে দেখেননি, পায়ে জুতোও থাকত না, হাওয়াই চটিটা ম্যানহোলের মুখের কাছাকাছি রেখে খালি পায়ে নামতেন। আদুড় গা, পরনে ছোট প্যান্ট। তাঁর মতো একই কাজ করা, এক বস্তিতে থাকা দুর্গা হরি তাঁর মামাকে সঙ্গে নিয়ে এক দিন ম্যানহোলের মধ্যে মারা গেলেন। দুর্গা ও তাঁর মামা টবিন রোড এলাকায় একটা ম্যানহোল পরিষ্কার করে নিজেরা পরিষ্কার হচ্ছেন, হঠাৎই খবর এল ম্যানহোলটা আবার ভেসে যাচ্ছে। কিছু না ভেবেই দুর্গা সেখানে নামলেন, আর উঠতে পারেন না। যেন পিছন থেকে কিছুতে টানছে। উপর থেকে মামা তাঁকে উদ্ধার করতে নীচে নামলেন। কেউই উঠতে পারলেন না। করণ নিজের চোখে সেই চেনা লাশগুলো তোলা দেখেছিলেন।
আসলে ম্যানহোলের মধ্যে যে গ্যাসগুলো উৎপন্ন হয়: হাইড্রোজেন ডাইসালফাইড, মিথেন, অ্যামোনিয়া, কার্বন মনোক্সাইড সেগুলো অত্যন্ত ক্ষতিকর ও ঝাঁঝালো। ঘেরা এলাকায় কয়েক মিনিটে কোনও মানুষকে মেরে ফেলার ব্যাপারে যথেষ্ট। এ নিয়ে কলকাতা কর্পোরেশনের এক ওয়ার্ড অফিসের এই ডিপার্টমেন্টের সুপারভাইজর তারক মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। উনি বললেন, যে পিট বা ম্যানহোলগুলো অনেক দিন ধরে খোলা হয় না, তাতে নানা রকম গ্যাস থাকে। সে জন্য সেখানে নামবার আগে লণ্ঠন নামিয়ে, দেশলাইয়ের কাঠি জ্বালিয়ে পরীক্ষা করে নিতে হয়। ওগুলো দপ্ করে নিভে যাওয়া মানে গ্যাসের পরিমাণ বেশি আছে। তাও অসাবধানে দুর্ঘটনা হয়ে যায়। তাঁর মতে, ইদানীং এমন ঘটনা ঘটে না বললেই চলে। কলকাতায় হয়তো এই মুহূর্তে ঘটছে না, তবে মাত্র তিন-চার মাস আগে লুধিয়ানার কাপুরথালায় এক সঙ্গে ম্যানহোলে নেমে তিন জন মারা গেছেন, তার মাসখানেক আগে চণ্ডীগড়ে এক জন। আর ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে যাওয়ার অসুখে ভোগেন সারা ভারতবর্ষের মোট এক কোটি বিশ লক্ষেরও বেশি ম্যানহোলকর্মীর এক বৃহদংশ। চর্মরোগ, জন্ডিস, যক্ষ্মা, হেপাটাইটিস, শ্বাসকষ্ট তাঁদের দোসর। তা ছাড়া যে সাংঘাতিক রোগ হয়, তার নাম লেপ্টোস্পিরোসিস। যার মূল বাহক হল জন্তু-জানোয়ারের প্রস্রাব, যা অহরহ ম্যানহোলের জলে মিশে থাকে। কর্পোরেশনে যাঁরা মৃত জন্তু-জানোয়ার তোলেন (ম্যানহোল থেকেও তুলতে হয়), তাঁদের এই রোগের সম্ভাবনা অনেক বেশি। এ রকম এক জনের সঙ্গে কথা বলেছি নিতাই মল্লিক, কাজ কাশীপুর এলাকায়, থাকেন বাগবাজারে কর্পোরেশনের মজদুর কোয়ার্টার্সে।
তবে তার আগে আর একটু করণ-কথা। করণের বয়স, উনি বললেন তিরিশ। কিন্তু এমন ভাঙাচোরা বলিরেখা-ভর্তি মুখ যে আন্দাজ করা মুশকিল। তাঁর রোজ চান করতে ইচ্ছা করে না, পাশে কেউ বদগন্ধ ছাড়লে তিনি নাক চাপা দেন না। তাঁর বক্তব্য, ওটা তো জানা গন্ধ। কাজ-করা মায়ের অসুখ করলে আট বছর বয়সে প্রথম গুয়ের ড্রাম তোলেন, সঙ্গে ছ’বছরের ভাই। ড্রাম মাথায় তুলতে পারতেন না। যে ডাব্বু দিয়ে নাদা থেকে পুরীষ তুলে ড্রামে নিতেন, সে ডাব্বুই ড্রামের আংটার মধ্যে দিয়ে ঢুকিয়ে দু’জনে দু’দিক ধরে বড় ড্রামওয়ালা ময়লাগাড়ির কাছে নিয়ে যেতেন। হাতে মল লেগে যেত অনেক সময় ওই ডাব্বু থেকেই। সেই থেকে ওঁর ঘেন্নাপিত্তি চলে গেছে। তবে যে দিন চান করেন না, বউ বিছানায় উঠতে দেন না, কখনও কখনও ঘরেও প্রবেশ নিষিদ্ধ। তিনি সারা রাত দরজার বাইরে পড়ে থাকেন। এ হেন করণের আবার শনি-মঙ্গলবার চান করা চাই-ই! সে দিনগুলোয় স্নান করেন, মা-কালীর পুজো করেন, ছেলে-বউয়ের জন্য রান্না করেন, আর ছেলের সঙ্গে বসে কার্টুন দেখেন। অমিতাভ বচ্চনের অন্ধ-ভক্ত হলেও তিনি জানেন, ‘আখরি রাস্তা’য় যে মাটির নীচের রাস্তা দিয়ে হেঁটে একটার পর একটা ম্যানহোলের কাছে আসছিলেন অমিতাভ, সেটা সাজানো, তৈরি করা। ছোট বয়সে ঘেন্না চলে যাওয়ার পর করণ এ লাইনে ‘জ্যাক অব অল ট্রেডস’। তিনি মুর্দাফরাশের কাজ করেন, বেওয়ারিশ লাশ জ্বালাতে জ্বালাতে সেই হাতেই খাবার খেতে ওঁর অসুবিধা হয় না। শুধু তাই নয়, শবদেহের কাটা অংশ পুড়িয়ে পুড়িয়ে খাওয়ার রসিকতায় অংশ নেন। এমনিতে অবশ্য হাসেন কম। তাঁর জীবনে হাসির ঘটনার কথা বলতে গিয়ে একটা গল্প করেন। এক ম্যাডামের আংটি বাথরুমের প্যানের মধ্যে চলে গিয়েছিল। তিনি বুদ্ধি করে শেষ ফ্লাশটা না-করে করণকে ডেকেছিলেন। করণ যখন প্যানের মধ্যে খালি হাত ঢুকিয়ে আংটি খুঁজছিলেন, তিনি নাকে চাপা দিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। যেই করণ বিষ্ঠামাখা সেই আংটি বাইরে আনল, তিনি উত্তেজনায় বাথরুমের ভেতর ঢুকে করণের ঘাড়ের ওপর পড়েন আর কী। তার পর জল দিয়ে ধোয়া আংটির ওপর ডেটল-জল ছিটিয়ে সড়াৎ করে সেই আংটি পরে নিয়েছিলেন। আমি করণকে ‘অন্য কাজ পেলে এ-কাজ ছেড়ে দেবেন?’ প্রশ্ন করলে করণ জানান, ‘নাঃ, বেশ আছি।’
‘এ ভাবেই বেশ আছি, ভাল আছি’, এ রকম শুনেছি বাঁটুল হরির মুখেও। বছর পঁচিশ-ছাব্বিশের বাঁটুল এমনিতে একটা ঝাঁ-চকচকে রিকশা চালান। কিন্তু ষোলো বছর আগে কিছু পয়সার লোভ দেখিয়ে এক জন তাঁকে ম্যানহোলে নামিয়েছিল, এখনও তিনি কাজ ছাড়েননি। ক্লাস ফোরে একটা পেন চুরির ঘটনা নিয়ে স্কুলে ঝামেলা হতে বাড়ি চলে এসেছিলেন, আর ওমুখো হননি। তার পর ম্যানহোলে নামা, বাখারি, কঞ্চি আর দড়ি দিয়ে ময়লার ‘ফ্লো’ তৈরি করা। ‘ভেতরে গ্যাস আছে কি না, পরীক্ষা করে নামেন?’ শুনে তিনি বলেন, ভেতরে তো সব সময়ই গ্যাস মারে। ‘কিন্তু ওই গ্যাসে তো মরেই যেতে পারেন’ বললে তিনি জানান, ‘মরা কপালে থাকলে আটকাব কী করে?’ আরও বলেন, ‘এটাই তো আমাদের কাজ, ভগবান প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা কাজ ঠিক করে রেখেছেন।’
বাঁটুল বিবাহিত। একটা ছেলে, একটা মেয়ে। সবে স্কুলে পড়ছে। বউ বাড়ির কাজ করেন। তাঁর ইচ্ছে নয় বউ অন্য বাড়িতে কাজ করুন। পাঁক ঘাঁটার আগে নেশা করে নিতেই হয়। কাজ হয়ে যাওয়ার পর স্নান করে অন্তত দু’ঘণ্টা বসে থেকে তার পর খান। তার কারণ, খোয়ারি ভেঙে নেওয়া আর পাঁক ঘাঁটার ঘেন্না কাটানো। এই ঘেন্নাপিত্তির কথা আর এক জনের মুখে শুনেছি। তিনি হলেন কামারহাটির হরিজন বস্তির লছমি হেলা। এক সময় বেলঘরিয়া অঞ্চলে খাটা পায়খানার কাজ করতেন। খুব ঘেন্না করত। কাজের সময় তো নয়ই, পরেও অনেক ক্ষণ খেতে পারতেন না। ‘কিন্তু পেটের জ্বালা, বড় জ্বালা’, তাই করতেন। তবে ‘ভগবান এক দিন মুখ তুলে চাইলেন, সর্দারের সঙ্গে বিয়ে হয়ে গেল।’ সর্দার, মানে যে ব্যক্তিটি এঁদের খাটান। সে সময় তিনি বেশ খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে বিষ্ঠার ড্রামের গমনাগমনের ওপর নজর রাখতেন। লছমিও নজরের মধ্যে আলাদা ভাবে পড়ে গেলে সুরাহা হয়ে গেল। পঞ্চাশ পেরোনো লছমি এখনও মিউনিসিপ্যালিটিতে কাজ করেন, রাস্তা ঝাঁট দেন। তবে সেখানেও প্রাতঃকৃত্য সাফ করাটাই মূল কাজ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেটা কুকুরের। হ্যাঁ, মানুষেরও থাকে।
একটু আগে নিতাই মল্লিকের কথা হচ্ছিল। রাস্তা এবং ম্যানহোল থেকে মরা কুকুর, বিড়াল, ইঁদুরের মৃতদেহ তোলার লোক নিতাই মল্লিক। লেপ্টোস্পিরোসিস রোগের তিনি নাম শোনেননি। কিন্তু এগুলোর সংস্পর্শে থাকলে যে মারাত্মক রোগ হতে পারে, এটা তিনি জানেন। কিন্তু কিছু করার নেই। ড্রেনে নেমে, স্ল্যাবের ভেতর থেকে কিংবা আধখোলা ম্যানহোলের মধ্যে থেকে পচা-মরা জন্তু তুলতে হয়, সেগুলোকে ফেলে আসতে হয় দূরের বড় ভ্যাটে। গাড়ি আসার কথা থাকলেও অধিকাংশ সময় আসে না। তবে বয়ে নিয়ে যেতে, স্ল্যাবের তলায় বা ম্যানহোলে নামতে ঘেন্না হয় না। কিন্তু ম্যানহোলে নামতে ভয় করে গ্যাসের ভয়। অথচ মুখে পরবার কোনও মাস্ক তো দূরের কথা, নাকে চাপা দেওয়ার কাপড়, হাতের দস্তানা, কিছুই পাওয়া যায় না। বর্ষার জুতো পাওয়া যায় জলে নামার জন্য, মোকাসিন টাইপের জুতো, যার গড় আয়ু মাস তিনেক। এটাই একমাত্র কর্পোরেশন দেয়। কমল বসু যখন মেয়র ছিলেন, তখন গ্লাভ্স আর গামবুটের বন্দোবস্ত করেছিলেন। তাঁর পরে বাম-ডান লাল-সবুজ কোনও মেয়রের সময়েই পাওয়া যায়নি, যায় না। দিল্লিতে অবশ্য গ্যাস-মুখোশ, বুট জুতো, গ্লাভ্স, পাম্প ইত্যাদি দেওয়া হয়।
বছর পঁয়তাল্লিশের নিতাইয়ের দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলে সুনীল ব্রেনওয়ারে কম্পিউটার শেখে। কাজের জন্যে তাঁর মদ খাওয়ার দরকার হয় না। একটু বেশি রাতে টিভির চ্যানেল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে শুধু খবর দেখেন, ইংরাজি খবরও।
আশ্চর্য, যাঁরা অন্যদের জন্য এত সাফাই করেন, তাঁদের নিজেদের বাথরুম-পায়খানা কিন্তু একেবারে নরক। বাগবাজারে যে সরকারি মজদুর বস্তি, সেখানে কিছু ইন্টারভিউ নেওয়ার পর মনে হল, বাথরুম যাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু হাল দেখে, ঢুকতে পারলাম না। এমন অবস্থা কেন? এই জিনিসগুলো নোংরা, এঁরা আদৌ সেটা বিশ্বাস করেন না? ঘেন্নাটা উবে গেছে? না কি, সারা দিন অন্যের বর্জ্য পরিষ্কার করে আর নিজেদের বর্জ্য সাফ করার এতটুকু শক্তি বাকি থাকে না? আমার অতটা মাথা নেই, অন্য কেউ হয়তো এর মধ্যে কোনও দারুণ প্রতীক আবিষ্কার করতে পারতেন!

ছবি: সুমন চৌধুরী


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.