মাঝ দামোদরে পাটাতন খুলে উল্টে গেল ডিঙি-নৌকা। মৃত্যু হল তিন কনে-যাত্রীর। নিখোঁজ এক জন। কোনও রকমে সাঁতরে অন্য কনে-যাত্রীদের ডিঙিতে উঠে রক্ষা পান সাত জন। পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর থানার গুরুডি ঘাটের কাছে শুক্রবার রাতে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে।
রাতেই পুলিশ ও প্রশাসন তল্লাশিতে নামে। কিন্তু আলো ও সরঞ্জামের অভাবে উদ্ধার-অভিযান বিশেষ এগোয়নি। শনিবার সকালে কলকাতা থেকে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ডুবুরিরা এসে উদ্ধারকাজ শুরু করেন। দুপুরে জলের নীচে আগাছায় জড়িয়ে থাকা তিনটি দেহ উদ্ধার হয়। ঘটনাস্থলে ছিলেন আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) গঙ্গেশ্বর সিংহ ও পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার সি সুধাকর। পুলিশ সুপার বলেন, “অদ্বৈত মালাকার (২৩), জীবিত মালাকার (১৯) ও মৃত্যুঞ্জয় মালাকারের (১৪) দেহ উদ্ধার হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন ১৮ বছরের তারাপদ মালাকার। সকলেই রঘুনাথপুর থানার পাথরবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা।” স্থানীয় সূত্রের খবর, তারাপদ স্থানীয় বড়রা হাইস্কুল থেকে এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। মৃত তরুণ জীবিত মালাকারের বাবা হরিপদ মালাকার বলেন, “পরিবারে ওই একমাত্র রোজগেরে। এ ভাবে চলে যাবে ভাবিনি!” |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, পাথরবাড়ির ভৈরবী মালাকারের সঙ্গে বুধবার ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ জেলার বালিয়াপুর থানার সিমপাথর গ্রামের রাজেন্দ্র মালাকারের বিয়ে হয়। শুক্রবার ভৈরবীর আত্মীয়েরা সিমপাথরে বৌভাতের নিমন্ত্রণে যাচ্ছিলেন। ৩২ জন কনে-যাত্রীকে নিয়ে তিনটি ডিঙি গুরুডি ঘাট থেকে উল্টোপাড়ের সীমপাথর ঘাটে যাচ্ছিল। দু’টি ডিঙি এগিয়ে গিয়েছিল। দুর্ঘটনায় পড়েন পিছনের ডিঙির যাত্রীরা। ওই ডিঙিতে থাকা নবম শ্রেণির ছাত্র রাকেশ মালাকারের কথায়, “ঘাট থেকে প্রায় তিনশো মিটার যাওয়ার পরেই ডিঙির পাটাতন খুলে গিয়ে জল ঢুকতে শুরু করে। এগিয়ে যাওয়া অন্য ডিঙির লোকেদের মোবাইলে ফোন করে আমাদের উদ্ধারের জন্য ফেরত আসতে বলি। ডিঙিতে হু-হু করে জল ঢুকছিল। দেরি না করে সবাই জলে ঝাঁপ দিই। খানিকক্ষণ দামোদরে সাঁতরে ভেসে থাকার পর একটা ডিঙি এসে আমাদের উদ্ধার করে।” ওই ডিঙির আরেক যাত্রী মনবোধ মালাকারের অভিজ্ঞতা, “ঝাঁপ দেওয়ার পর দেখি, আমাদের ডিঙিটা সামনে কাত হয়ে ভাসছে। দু’হাতে ডিঙির কাঠ ধরে ভেসেছিলাম।” একে-একে সাত যাত্রী উদ্ধার হলেও ওই চার জনের হদিশ তাঁরা পাননি।
দামোদরের পাড়ে এ দিন দাঁড়িয়ে ছিলেন আগের রাতে এগিয়ে থাকা একটি ডিঙির যাত্রী ধনঞ্জয় মালাকার। তাঁর আক্ষেপ, “ডিঙিতে জল ঢুকছে বলে অদ্বৈত আমাকে কয়েকবার ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। কিন্তু আমাদের ডিঙিও ঠাসা ছিল। অন্য পাড়ে সবাইকে নামিয়ে এসে অদ্বৈতদের আর খোঁজ পেলাম না।” উদ্ধারকারী দলের কর্মীরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনাস্থলের কাছে দামোদরের গভীরতা কমবেশি ২৫ ফুট। কিন্তু সেখানে জলের তলায় ঘন আগাছা থাকায় উদ্ধারকাজ ব্যাহত হয়। এ দিন উদ্ধারকাজ পরিদর্শনে যান রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো ও জেলাশাসক মহম্মদ গুলাম আলি আনসারি। মন্ত্রী বলেন, “প্রশাসন উদ্ধারের জন্য সব রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।” |