প্রথম রাউন্ডে হার হয়েছে ঠিকই। কিন্তু অধীর-দুর্গে আঘাত হানতে হুমায়ুনই তৃণমূলের হাতিয়ার।
রেজিনগরে হুমায়ুন কবীরের পরাজয়ের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাঁরই নেতৃত্বে ধুলিয়ান পুরসভার নয় কংগ্রেস কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দিলেন। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় শনিবার তপসিয়ায় তৃণমূল ভবনে ওই দলত্যাগী কাউন্সিলরদের আনুষ্ঠানিক ভাবে দলে নেন। অধীর-নেতৃত্বাধীন কংগ্রেসের শক্তি খর্ব করতে তাঁরা যে পুরোদমে চেষ্টা শুরু করেছেন, তা এ দিন মুকুলবাবুর বক্তব্যেই স্পষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা কংগ্রেস ছেড়ে আসা কাউন্সিলরদের গ্রহণ করলাম। মানুষের স্বার্থে তাঁরা কাজ করবেন। মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের ভিতও এতে শক্ত হবে।” |
গত বিধানসভা ভোটের পর থেকেই মুর্শিদাবাদে দলের ভিত শক্ত করার কাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে মুকুলবাবু বলেন, “জেলা পরিষদের ১০ সদস্য, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, এক পঞ্চায়েত প্রধান কংগ্রেস ছেড়ে আমাদের দলে যোগ দিয়েছেন। কেন্দ্রে কংগ্রেসের জনবিরোধী নীতি এবং পাশাপাশি রাজ্যে মমতার উন্নয়ন দেখেই এঁরা দল ছেড়েছেন। এত দিন মুর্শিদাবাদের কোনও পুরসভা তৃণমূলের হাতে ছিল না। এ দিন নয় কাউন্সিলর কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় ধুলিয়ান পুরসভা আমাদের হাতে এল।” পঞ্চায়েত ভোটের আগে কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার ঘটনায় মুকুলবাবুর দাবি, “পঞ্চায়েত ভোটে মুর্শিদাবাদে তৃণমূলই নির্ণায়ক শক্তি হয়ে উঠবে।”
দলত্যাগের ওই ঘটনাকে অবশ্য কোনও গুরুত্বই দেননি মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অধীরবাবু। তিনি বলেন, “দলত্যাগ যাঁরা করছেন, তাঁরা কংগ্রেসের উপকার করছেন। কারণ, দলত্যাগের ঘটনা কংগ্রেস কর্মীদের যাবতীয় দ্বন্দ্ব-বিরোধ ভুলিয়ে এককাট্টা করছে।” মুকুলবাবুর পুরসভা দখলের দাবি উড়িয়ে অধীরবাবু পাল্টা বলেন, “ধুলিয়ান পুরসভা এখন কারও দখলে নেই। প্রশাসন পুরসভা চালাচ্ছে।”
এ দিন তৃণমূল ভবনে উপস্থিত মাসুমা বেগম, মেহেবুব আলম, দিলীপ সরকার-সহ তৃণমূলে যোগ দেওয়া কাউন্সিলররা জানান, ২০১০ সালের পুরভোটে ১৯ আসনের ধুলিয়ান পুরসভায় ১০টি আসনে বামফ্রন্ট এবং নয় আসনে কংগ্রেস জয়ী হয়েছিল। গরিষ্ঠতা পেয়ে ক্ষমতায় বসেছিল বামফ্রন্ট। কিন্তু এক বছর বাদে সিপিএমের তিন জন এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের এক জন কংগ্রেসে যোগ দেন। ফলে কংগ্রেস ওই পুরসভার ক্ষমতা দখল করে। তবে গত নভেম্বরে ওই চার কাউন্সিলর ফের বামফ্রন্টে ফিরে যান। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, নয় কাউন্সিলর নিয়েই কংগ্রেস বোর্ড গঠন করে। তার বিরোধিতা করে বামেরা আদালতে যায়। এখনও বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়নি। কার্যত প্রশাসনই পুরসভা চালাচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে এ দিন নয় কংগ্রেস কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় ধুলিয়ান পুরসভা তৃণমূলেরই হল বলে দাবি করেছেন হুমায়ুন। তিনি বুধবার জেলায় ফিরে দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে পরে গ্রামে প্রচার শুরু করবেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। জেলায় তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে অধীরের পথেই প্রচার শুরু করতে চান হুমায়ুন।
তাঁর কথায়, “মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের শক্তিশালী সংগঠন নেই। আমি তৃণমূলের প্রতীক চিনিয়ে ৪০ হাজারের উপর ভোট পেয়েছি। সে জন্যই এ বার ধীরে ধীরে প্রচার করে জেলায় দলের শক্তি বাড়াতে চাই।” শুক্রবার হুমায়ুন মহাকরণে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করার পরেই তৃণমূলের অন্দরে গুঞ্জন উঠেছে আগামী লোকসভা ভোটে বহরমপুরের সাংসদ অধীরবাবুর বিরুদ্ধে তিনি প্রার্থী হতে পারেন। তবে এ দিন হুমায়ুনকে পাশে বসিয়ে মুকুলবাবু স্পষ্ট বলেছেন, “এখনই এমন কিছু বলার সময় আসেনি। মুর্শিদাবাদের প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি সিদ্দিকা বেগম, বিরোধী দলনেতা বাণী ইজরায়েলরা কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে এসেছেন। সুব্রত সাহার মতো মন্ত্রীও রয়েছেন। সেই তালিকায় হুমায়ুন সংযোজন মাত্র।”
রেজিনগরে উপনির্বাচনে পরাস্ত হলেও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী হুমায়ুনকে তাঁর দফতর এবং দলের কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই আগামী ১৯ মে পর্যন্ত মন্ত্রিত্ব চালাতে পারবেন তিনি। মন্ত্রী হিসেবে তাঁর জন্য পুলিশি নিরাপত্তা এবং লালবাতি লাগানো গাড়ি বহাল থাকছে। এ সবই অধীরের খাসতালুকে তাঁকে বিব্রত করার জন্য মমতার কৌশল বলে রাজনৈতিক শিবিরের অনেকেরই অভিমত।
তবে নৈতিকতার প্রশ্নে এ ভাবে মন্ত্রী থাকাটা সমীচীন কি না, তা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে মুকুলবাবু বলেন, “কাউকে মন্ত্রী রাখা, না-রাখা, সবটাই মুখ্যমন্ত্রীর এক্তিয়ারভুক্ত। তাঁর যদি ইচ্ছে হয়, ১৯ মে-র পরেও হুমায়ুনকে মন্ত্রী রাখতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। এ সবই সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রচলিত পরম্পরা।” |