|
এক ঝলকে... |
পৃথিবী
২৪ ফেব্রুয়ারি - ২ মার্চ |
|
• রোম • ‘আমরা আগে সব কিছু ধ্বংস করতে চাই, তার পর নতুন করে গড়ে তুলব।’ না, ১৮৪৮-এর প্যারিস নয়, ইটালি ২০১৩। ‘অ-রাজনৈতিক’ মারিয়ো মন্তি-র (ছবি) সরকার কৃচ্ছ্রসাধনের দাওয়াই দিয়ে বিপন্ন অর্থনীতিকে কিছুটা সামলেছিল, কিন্তু নির্বাচনে হেরে গিয়েছে তাঁর দল। ভোটে এক নম্বরে আছেন মধ্য-বামপন্থী পিয়ের লুইজি বেরসানি, কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতা দূর অস্ত্। অগত্যা তিনি জোট গড়তে চান ফাইভ স্টার মুভমেন্ট-এর নেতা পেপে গ্রিলো-র সঙ্গে। এই ‘আন্দোলন’-এর বয়স চার বছর, বিবিধ রাজনৈতিক দল আর তার নেতাদের অপদার্থতা আর অনাচারে ক্ষুব্ধ বহু মানুষ গ্রিলোকে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, কাউকেই সমর্থন করবেন না, বড়জোর ‘বিষয়-ভিত্তিক’ সমর্থন করতে পারেন। তিনি চান, শিগগিরই আবার ভোট হোক, তখন তিনি একাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফিরে আসবেন। দুরাশা নয় মোটেই। এ বারের নির্বাচনে ভাল ভোট পেয়ে ফিরে এসেছেন সিলভিয়ো বের্লুস্কোনি। ঘোলা জলে মাছ ধরতে তিনি হাওয়ায় ভাসিয়ে দিয়েছেন ‘মহাজোট’-এর প্রস্তাব। কিন্তু তাঁর সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাম-ঘেঁষা বেরসানি স্থায়ী সরকার দিতে পারবেন, এমন কথা দেশে এক জনও বিশ্বাস করবেন না। তাই অচিরে আবার ভোট হতেই পারে। আশা একটাই। পেপে গ্রিলোর দলের নির্বাচিত সদস্যরা অনেকেই বেরসানির সঙ্গে জোট গড়ে সরকারে যেতে চান, তাঁদের চাপে দলনেতা শেষ অবধি রাজি হয়ে যেতে পারেন। তবে কি না, রাজনীতির আসরে নামার আগে পেপে গ্রিলো ছিলেন জনপ্রিয় কমেডিয়ান। অতএব ইটালি মহা আশঙ্কায়। ইউরোপও। জার্মানি ও ফ্রান্সের পরে ইউরো-অঞ্চলের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি যদি রাজনৈতিক অস্থিরতার ধাক্কায় নতুন করে বিপন্ন হয়, গোটা মহাদেশ তার অভিঘাত এড়াতে পারবে না।
|
• তেহরান • ইরান পরমাণু বোমা বানাচ্ছে, এ সন্দেহ পশ্চিমি দেশগুলোর বহু দিনের। ইরানের বক্তব্য, মোটেই না সম্পূর্ণ অসামরিক প্রয়োজনে পরমাণু প্রকল্প চলছে। বহু হুমকি, বহু কঠোর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা কিন্তু ইরান এত দিন অবিচলিত ছিল। ২০১২-র জুলাইয়ের পর এই প্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, চিন, রাশিয়া আর জার্মানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসলেন ইরানের প্রতিনিধিরা। কাজাখস্তানে। এবং এই প্রথম বার বৈঠক সেরে বেরিয়ে দুই পক্ষই বললেন, ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। সম্পর্কের বরফ কি তা হলে গলছে? ইরানের প্রতিনিধিদলের প্রধান সৈয়দ জালিলি (ছবি) বলেছেন, ‘ছ’টি দেশের প্রতিনিধিরা এই প্রথম নিজেদের অবস্থান আর ইরানের অবস্থানের মধ্যে দূরত্ব কমাতে সচেষ্ট হয়েছেন।’ সম্ভবত দু’পক্ষই খানিক জায়গা ছাড়তে রাজি। আর্থিক নিষেধাজ্ঞার চাপে ইরানের পিঠ দেওয়ালে ঠেকেছে। আর বিশ্ব-নেতারাও বুঝেছেন, ইরানকে আরও কোণঠাসা করার চেষ্টা করলে পশ্চিম এশিয়ার কূটনৈতিক ভারসাম্য টালমাটাল হয়ে যেতে পারে। অতএব, দু’পক্ষই মধ্যপন্থাকে শ্রেয় ভাবছে।
|
চাক হেগেলকে মনে আছে তো? যিনি ক’দিন আগেই ভারতে অতি নিন্দিত হলেন? ভারতীয়দের চটিয়ে দিয়েছিল তাঁর মন্তব্য: পাকিস্তানকে ‘টাইট’ দিতে আফগানিস্তানের বালুচিস্তানে নানা রকম কূটনীতি করে থাকে ভারত। কথাটা ভারতের অপছন্দসই হওয়ার কারণটা বোজাই যায়, তবে খুব ভুল বলেছেন কি হেগেল? অবশ্য এই ভদ্রলোকের অপ্রিয় অবস্থান নেওয়ার একটা বাতিকই আছে। কেবল ভারত কেন, প্রাক্তন এই রিপাবলিকান সেনেটর নিজের দলের মধ্যেও প্রিয় নন। কারণ? ইজরায়েলের তীব্র সমালোচক তিনি। এই সপ্তাহে মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব (ডিফেন্স সেক্রেটারি) পদে মনোনীত হলেন তিনি। অপ্রিয়তার মাত্রাটা বোঝা গেল যখন মার্কিন কংগ্রেসে তাঁর পক্ষে-বিপক্ষে নির্বাচন হলে দেখা গেল, হেগেল জিতেছেন মাত্র ৫৫-৪৫ ভোটে। অর্থাৎ ৫১ জন ডেমোক্র্যাট সদস্যের সঙ্গে হেগেলের নিজের দলের মাত্র চারটি ভোট এসেছে তাঁর পক্ষে। প্রসঙ্গত, মার্কিন রীতি অনুযায়ী, যে কোনও দলের সদস্যকেই প্রতিরক্ষা সচিব হিসেবে নির্বাচিত করা যায়। অর্থাৎ ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট-এর রিপাবলিকান প্রতিরক্ষা সচিব হতেই পারে। তবে প্রতি বার এও দেখা যায় যে, যে দলের সদস্যই প্রার্থী হোন না কেন, প্রায় সর্বদা ভোটের ফল হয় ১০০-০। অর্থাৎ মনোনয়ন নিয়ে আপত্তি না তোলাটাই দস্তুর। সেখানে হেগেলের ভোটের ফল স্পষ্ট বলে দেয়, মহাশয় সত্যিই অতি-বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব।
বিতর্ক তাঁর পিছু ছাড়ে না। একে তো ইজরায়েলের কড়া সমালোচক। তার উপর সম্প্রতিকালে ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন অবস্থানেরও সমালোচনা করেছেন তিনি, ইরানের সঙ্গে আলোচনার পরিসরটা যথেষ্ট পরীক্ষা করে দেখা হয়নি বলে আপত্তি তুলেছেন। রিপাবলিকানরা কেন কিছুতেই তাঁকে ভোট দিতে চাননি, বুঝতে কষ্ট হয় না। ওবামা অবশ্য রীতিমতো প্রীত হেগেলকে পেয়ে। তবে কি ইজরায়েলকে একটু নরমসরম দাওয়াই-এর উপরই রাখতে চলেছে দ্বিতীয় ওবামা প্রশাসন? |