|
|
|
|
প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে মাধ্যমিকে মলয়, দেবতোষ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • এগরা |
ছোট থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও শুধু মনের আর অধ্যবসায়ের জোরেই সাফল্য এসেছে মলয় প্রহরাজ আর দেবতোষ পালের। দু’জনেই এগরা শহরের বাসিন্দা। এগরা ঝাটুলাল হাইস্কুলের ওই দুই ছাত্র এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। স্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দন শিট বলেন, “ওরা যে ভাবে লড়াই করছে, তাতে শুধু ছাত্রছাত্রী নয় যে কোনও মানুষই প্রেরণা পাবে।”
উনিপুরের বাসিন্দা মলয়ের বাবা সূর্যকান্তবাবু দোকানের কর্মী। মা খুকুরানিদেবী গৃহবধূ। ছোটবেলায় মলয় হামাগুড়ি দিতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে গেলে মাথায় গুরুতর আঘাত পায়। সেই আঘাত থেকেই তার শারীরিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। মলয়ের মা জানান, “আঘাত পাওয়ার পর, লাগাতার চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচার করিয়েও লাভ হয়নি। প্রাথমিক স্কুলে বাড়ির লোকজন কোলে করে বসিয়ে দিয়ে এলেও পরে বাড়ি থেকে দু’কিলোমিটার দূরে হাইস্কুলে গিয়েছে বন্ধুদের সাইকেলে চেপে।” |
মাদুরে বসেই পরীক্ষা মলয় ও দেবতোষের। এগরা স্বর্ণময়ী গার্লস স্কুলে কৌশিক মিশ্রের ছবি। |
বন্ধু তথা সহপাঠী দিগন্ত শী, সঞ্জয় আচার্য, সুধীর পয়জ্যারা বলে, “মলয়ের মনের জোর প্রবল। কখনই নিজেকে অসহায় ভাবে না। শুধু বলে, তোরা আমাকে একটু সহযোগিতা কর। ও প্রথম বিভাগে পাশ করবেই। আমরা সকলে ওর পাশে আছি।” বাবা সূর্যকান্ত প্রহরাজ জানান, “শারীরিক কারণে ওর স্কুলে যাওয়া অনিয়মিত ছিল। দশম শ্রেণিতে উঠলেও শারীরিক সমস্যায় লিখতে না পারায় গতবার মাধ্যমিক দিতে পারেনি। শুধু মনের জোরেই আবার লিখতে শুরু করে। বড় হয়ে ও শিক্ষক হতে চায়।”
মলয়ের মতো প্রতিবন্ধকতা আছেকসবা এগরার বাসিন্দা দেবতোষেরও। ওর বাবা সৌমিত্র পাল ব্যবসায়ী, মা নির্মলাদেবী গৃহবধূ। দেবতোষ জন্ম থেকেই সেরিব্রাল পলসিতে ভুগছে। লাগাতার চিকিৎসা করিয়েও সারেনি অসুখ। হাতে-পায়ে জোর নেই, অবলম্বন ছাড়া দাঁড়াতে পারে না। হাত-পা বেঁকে গিয়েছে। সৌমিত্রবাবুই দেবতোষকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলে বসিয়ে দিয়ে আসতেন। সমস্যার জেরে তার পর থেকে স্কুলে যাওয়া বন্ধ হলেও নিয়মিত দিয়েছে স্কুলের পরীক্ষা।
মা নির্মলাদেবী বলেন, “ওর জেদ আছে, পড়াশুনো করতেও ভালোবাসে।” দেবতোষ ভালোবাসে গান শুনতে, প্রিয় বিষয় জীবনবিজ্ঞান। ওর বাবা সৌমিত্রবাবু গর্বের সঙ্গে জানান, “জীবনের কোনও ক্ষেত্রে আমরা নিরুৎসাহিত হলেই আমাদের মনের জোর বাড়ায়। ছেলের এই লড়াই আমার কাছেই অনুপ্রেরণার।” |
|
|
|
|
|