ফুটপাথ বদল হয় মধ্যরাতে। তখন, হাওড়া শাসন করে একটি বাহিনী। তাদের ভয়ে পথচারী কিংবা দুচাকা-আরোহীর দেওয়ালে দেওয়াল, কার্নিশে কার্নিশ!
বাহিনীটি সারমেয়দের। কার্যত রাতের হাওড়ার দখল নিয়েছে এই ‘প্রভুভক্ত’রাই!
একা কোনও সাইকেল বা মোটরবাইক আরোহী পেলেই সদলবলে তার উপর চড়াও! রাত যত বাড়ে তত গৃহস্থের নিশ্চিন্ত নিদ্রায় হানা দেয় তাদের উল্লাস কিংবা বিষাদের চিৎকার।
জেলা হাসপাতাল সূত্রে খবর, গত ছ’মাসে শুধু হাওড়া শহরেই কুকুরের কামড়ে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৭০। অভিযোগ, কোনও নিয়ন্ত্রণ না থাকার ফলেই ব্যাপক হারে বেড়ে চলেছে কুকুরের সংখ্যা। রাতে আতঙ্ক বাড়তে থাকে। ফুটপাথ জুড়ে এদের সাম্রাজ্য, তাই রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন মানুষ। আবার চলন্ত গাড়ির সামনে হঠাৎই কুকুর এসে পড়ায় সমস্যায় পড়ছেন চালকেরা। বেশ কয়েক বার দুর্ঘটনাও ঘটেছে বলে অভিযোগ। শিবপুরের বাসিন্দা স্নেহা ঘোষের কথায়: “কুকুরের চিৎকারে কান পাতা দায়। ছোটরা বাইরে বেরোতে ভয় পায়। সাইকেল চালিয়ে গেলেও এক দল কুকুর তেড়ে আসে।” দশম শ্রেণির ছাত্রী মোনালিসা দাস বলছে, “এক বার টিউশন থেকে বাড়ি ফেরার সময় কদমতলার কাছে হঠাৎ প্রায় ১৪-১৫টি কুকুর ঘিরে ধরে।
|
আমার চিৎকার শুনে দোকানদারেরা এসে বাঁচান। তার পর থেকে বাবা অথবা মা আমাকে আনতে যান।” সালকিয়া, শিবপুর, হাওড়া ময়দান, কদমতলা, রামরাজাতলা-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় ভয়াবহ আকার নিয়েছে কুকুরের দাপট। কেউ কেউ কুকুর সামলাতে সাহায্য নিচ্ছেন আদিম পদ্ধতির। যেমন, রাণা মিত্র। বললেন, “গত মাসে রাতে বাড়ি ফেরার সময় হাওড়া ময়দানে মোটরবাইকের সামনে হঠাৎ একটি কুকুর এসে পড়ে। কোনও রকমে বাঁচালেও ভয় পেয়ে ক্ষেপে যায় সে। তার চিৎকারে মুহূর্তে একটা দল এসে ঘিরে ফেলল। ভাগ্যিস আমার পকেটে দেশলাই ছিল। কাঠি জ্বালিয়ে ছুঁড়তে থাকি। তাতেই ওরা একটু ভয় পেলে কোনও রকমে বাড়ি আসি।”
এই বাহিনীর কোনও পরিসংখ্যান পুরসভায় নেই। কুকুরের জন্ম নিয়ন্ত্রণ আইন খাতায়-কলমে থাকলেও পুরসভায় এ ধরনের কোনও পরিকাঠামো নেই বলেই জানা গিয়েছে পুরসভা সূত্রে। যদিও এ বার পুরসভা উদ্যোগী হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মেয়র মমতা জয়সোয়াল। তিনি বলেন, “কুকুর ধরে রাখা সম্ভব নয়। তবে সম্প্রতি একটি এনজিও-র সঙ্গে কথা হয়েছে। হাওড়া টেলিফোন ভবনের কাছে পুরসভা থেকে একটি ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। ওই এনজিও কর্মীরাই কুকুর ধরে নির্বীজকরণ করে আবার যথাস্থানে ছেড়েও দিয়ে আসবেন। আশা করি এ ভাবে কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।”
সুতরাং আপাতত পরিবার পরিকল্পনাই ভরসা। কুকুর বলে কি মানুষ নয়! |