খাস কোতুয়ালিতেই ঠিক এক ভোট পিছিয়ে শেষ করলেন কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। তাই ইংরেজবাজার উপনির্বাচনে বিরাট ব্যবধানে এগিয়ে থাকতে অসুবিধা হল না তৃণমূলের।
কোতুয়ালিতেই বরকত গনি খানের পারিবারিক ভিটে। তাঁর পরিবারের অনেকে সেখানে থাকেনও। সেই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বুথগুলি থেকে কংগ্রেস এ বার পেয়েছে মোট ৫০০৭টি ভোট। কৃষ্ণেন্দু পেয়েছেন ৫০০৬টি। তখনই যেন জয় তাঁর হাতের মুঠোয়। ইংরেজবাজারের পুরপ্রধানেরও তখন চোখে জল। মালদহেরই মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের বক্তব্য, “এই তথ্যটাই বুঝিয়ে দেয়, খাস কোতুয়ালির লোকেরা এখনও গনি খানের পাশে রয়েছেন, কিন্তু তাঁর পরিবারের সঙ্গে নেই।” কৃষ্ণেন্দু বলেন, “গনি খানের মন্দির তাঁর পরিবারের লোকরা অপবিত্র করে দিয়েছিলেন। সেই মন্দির শোধন করতে মালদহের মানুষ আমাকে জিতিয়েছেন।” গনি খানের ছোট ভাই তথা জেলা কংগ্রেস সভাপতি আবু হাসেম খান চৌধুরীর (ডালু) অবশ্য সোজা কথা, “গনি-মিথ অটুট। অঢেল টাকা ছড়িয়ে এ বার সেই মিথকে কলঙ্কিত করল তৃণমূল।”
|
কংগ্রেসের টিকিটে গনি খানের কথা বলেই গত বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে জিতেছিলেন কৃষ্ণেন্দু। তারপরে তিনি তৃণমূলে যোগ দেওয়াতেই এখানে উপনির্বাচন হয়। কংগ্রেস দাবি করেছিল, মালদহে গনি খানের ভাবমূর্তি যা, তাতে কংগ্রেস ত্যাগ করে অন্য দলে যোগ দিয়ে কারও পক্ষে ভোটে জেতা অসম্ভব।
বৃহস্পতিবার কিন্তু উপনির্বাচনের ফলে দেখা গেল ২০ হাজার ৪৫২ ভোটে জিতেছেন কৃষ্ণেন্দুই। তবে তাঁর ভোট কমেছে। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তিনি পেয়েছিলেন ৫১.৭৯% ভোট। এ বার পেয়েছেন ৩৯.৩৪% ভোট। তবে আগের বার কংগ্রেস-তৃণমূল জোট বেঁধে লড়েছিল। এ বার জোট নেই। কংগ্রেস প্রার্থী নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি পেয়েছেন ২৫.১৬% ভোট।
এ বার যে কৃষ্ণেন্দুই আবার জিততে চলেছেন তা অবশ্য বোঝা গিয়েছিল গত বিধানসভা ভোটে যে এলাকায় ৬০০ ভোটে পিছিয়ে ছিলেন, প্রথম রাউন্ডে সেই বিনোদপুর অঞ্চলেই তাঁর ১২১২ ভোটে এগিয়ে যাওয়া দেখে। হাত মুঠো করে কৃষ্ণেন্দু চাপা স্বরে বলে উঠেছিলেন ‘ইয়েস’। |
আর অদূরে দাঁড়ানো নরেন্দ্রনাথবাবু তখন হতাশায় ঘাড় নাড়ছেন। দ্বিতীয় রাউন্ডে সেখানে ২৯৮০ ভোটে এগিয়ে কৃষ্ণেন্দু। পঞ্চম রাউন্ডের শেষে ৩৮১৫ ভোটে ‘লিড’ দেখার পরেই গণনা কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে পড়েন কৃষ্ণেন্দু। তাঁকে ঘিরে জয়ধ্বনি শুরু তখনই। হতাশ কংগ্রেসকর্মীরা। সাবিত্রীদেবীর কটাক্ষ, “কংগ্রেস বলে মালদহে আগামী দিনে কিছু থাকবে না।” কংগ্রেসের পুরনো কর্মীরা যে কথা শুনে স্তম্ভিত হয়ে বলেছেন, “মালদহে বসে কোনওদিন এ কথা শুনতে হবে ভাবিনি!” পঞ্চায়েত ভোটের আগে কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি মালদহে এই ফলে দলের প্রদেশ নেতৃত্বও বিস্মিত। কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়া বলেন, “ইংরেজবাজারের ফল বিস্ময়কর!” ডালুবাবুকে বুথওয়ারি ফল বিশ্লেষণ করে প্রদেশ দফতরে অবিলম্বে পাঠাতে বলা হয়েছে। মানসবাবুর কথায়, “আমরা ফল পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার করে আগামী দিনের সিদ্ধান্ত নেব।”
পরাজিত সিপিএম প্রার্থী কৌশিক মিশ্র এ দিন প্রথমে বলেন, “মালদহের মানুষ যাঁকে যোগ্য মনে করেছেন, তাঁকে জিতিয়েছেন।” কয়েক মুহূর্ত পরেই কী ভেবে তিনিই অভিযোগ করলেন, “এটা অপ্রত্যাশিত পরাজয়! টাকার খেলা হয়েছে। আবেগে আপ্লুত কৃষ্ণেন্দু বলেন, “এটা দিদির জয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শের জয়!”
|
|
|
|
প্রার্থী |
দল |
ভোট |
শতকরা |
|
কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী |
তৃণমূল |
৭০,৭৯১ |
৩৯.৩৩ |
কৌশিক মিশ্র |
সিপিএম |
৫০,৩৩৯ |
২৭.৯৭ |
নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি |
কংগ্রেস |
৪৫,২৭১ |
২৫.১৫ |
সঞ্জিত মিশ্র |
বিজেপি |
৯,৪৪২ |
৫.২৪ |
|
কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী (কংগ্রেস) |
কংগ্রেস-তৃণমূল জোট |
৮৯,৪২১ |
৫১.৭৯ |
সমরেন্দ্র রায় |
সিপিএম |
৬৭,৫৯২ |
৩৯.১৫ |
গোবিন্দচন্দ্র মণ্ডল |
বিজেপি |
১০,১১৬ |
৫.৮৬ |
|
|