গরম পড়তে শুরু করেছে। আগামী গ্রীষ্মে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার একাংশ হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জলের সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা। তাই জেলার কিছু হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জলপ্রকল্প গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে জেলা প্রশাসন। যেখানে সমস্যা বেশি হতে পারে, আপাতত সেখানেই নতুন প্রকল্প গড়ে তোলার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, ঝাড়গ্রাম মহকুমার সব মিলিয়ে ৯টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং গ্রামীণ হাসপাতালে নতুন জল প্রকল্পের কাজ হবে। এ জন্য পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ থেকে প্রায় ২ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। টেন্ডার এবং ওয়ার্ক অর্ডারও হয়েছে। জেলার পরিকল্পনা ও উন্নয়ন আধিকারিক প্রণব ঘোষের বক্তব্য, “নতুন প্রকল্পের কাজ দ্রুত শুরুর চেষ্টা চলছে।”
পশ্চিম মেদিনীপুরে গ্রীষ্মে জলের সমস্যা নতুন নয়। মাটির নীচের জলস্তর ক্রমশ কমছে। অথচ, জলের অপব্যবহার বন্ধ হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে প্রশাসনও। আবার অনেক এলাকায় বৃষ্টির জল ধরে রাখার মতো ব্যবস্থা নেই। ফলে, গরম পড়তে না পড়তেই জলের জন্য হাহাকার শুরু হয়। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের বক্তব্য, “মাটির নীচে জলস্তর যে ভাবে কমছে, তাতে এখন থেকে সতর্ক না হলে পরবর্তী সময় সমস্যা আর বড় হয়ে দেখা দেবে না। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বৃষ্টির জল সংরক্ষণে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।” তাঁর কথায়, “কিছু এলাকায় জল প্রকল্প করতে গিয়েও পিছিয়ে আসতে হচ্ছে। কারণ, জলস্তর বহু নীচে। জঙ্গলমহলের বিভিন্ন এলাকায় দেখা যাচ্ছে, এক-একটি নলকূপের জন্য ৫০০ থেকে ৫৫০ ফুট পাইপ লাইন নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তা-ও সে ভাবে জলস্তর মিলছে না। সঙ্গে পাথুরে জমি হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে।”
বস্তুত, গ্রীষ্মে যে জেলার বিভিন্ন এলাকায় জলের সমস্যা হতে পারে, মাস দুই আগে জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ স্থায়ী সমিতির বৈঠকেও সেই আশঙ্কার কথা ওঠে। মূলত, সজলধারা এবং জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি বিভাগের জল সরবরাহ প্রকল্পের মাধ্যমে পানীয় জলের উৎস সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে এতে আলোচনা হয়। সঙ্গে সামগ্রিক কাজের অগ্রগতি ও পর্যালোচনা করা হয়।
এই বৈঠকেই জেলার এক উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, “গ্রীষ্মে সাঁকরাইল, সবং, ডেবরা, গড়বেতা ১, নয়াগ্রাম, নারায়ণগড় ব্লকে জলের সমস্যা হবে।” পরে অবশ্য উপস্থিত জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি বিভাগের আধিকারিকেরা তাঁকে আশ্বস্ত করে জানান, এই এলাকায় সমস্যা রয়েছে। তবে সমস্যা মেটাতে পদক্ষেপও করা হচ্ছে। কেমন? বৈঠকে জানানো হয়, সবং ব্লকে দুশোটি নলকূপ তৈরি হয়েছে। একটি জল সরবরাহ প্রকল্পও চালু হয়েছে। নয়াগ্রামে বড়ঝরিয়া জল সরবরাহ প্রকল্পের নলকূপ চালু হয়েছে। ৫০টি নলকূপ তৈরির কাজ চলছে। নারায়ণগড়ে ৫০টি নলকূপ তৈরির কাজ চলছে। গড়বেতা ১ ব্লকে ৬০টি এবং ডেবরায় ২০টি নলকূপ তৈরি হয়েছে। সমস্যা খতিয়ে দেখতে বৈঠক করেছে জেলা প্রশাসনও। সেই বৈঠকেও সামনের গ্রীষ্মে জেলার একাংশ হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জলের সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।
এরপরই নতুন জলপ্রকল্প তৈরির তোড়জোড় শুরু হয়। আপাতত, লালগড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, চিচিড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, তপসিয়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, খড়িকামাথানি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ভাঙাগড় ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, গোপীবল্লভপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, চিল্কিগড় ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বিনপুর গ্রামীণ হাসপাতাল এবং বেলপাহাড়ি গ্রামীণ হাসপাতাল এই ন’টি জায়গায় জলপ্রকল্পের কাজ হবে। এ জন্য পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ প্রায় ২ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের বক্তব্য, “হাসপাতাল-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জলের সমস্যা হবে রোগীর পরিবারের লোকেদের সমস্যায় পড়তে হয়। আগামী দিনে আরও কয়েকটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নতুন জলপ্রকল্প তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে।” |