ফল ১-১-১, তবে বিধি এখনও বাম
তিন প্রধান প্রতিপক্ষের ঝুলিতেই একটি করে আসন! ফলে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে কংগ্রেস, তৃণমূল এবং বাম তিন পক্ষই প্রাপ্তির ভাঁড়ারে কিছু রসদ দেখাতে পারছে! কিন্তু একই সঙ্গে তিন পক্ষকেই বিঁধছে কিছু অস্বস্তি।
তবে উপনির্বাচন থেকে উঠে-আসা তথ্যের আসল নির্যাস হল তিন কেন্দ্রেই বেশ ভাল রকম কমেছে বামেদের ভোট। নলহাটিতে কমেছে ৬%-এর একটু বেশি। ইংরেজবাজার এবং রেজিনগরে প্রায় ১২% করে। যে তথ্য বুঝিয়ে দিচ্ছে, সেই ২০০৮-এর পঞ্চায়েত ভোট থেকে বামেদের যে রক্তক্ষরণ শুরু, তা এখনও বন্ধ হয়নি! ২০০৮-এর পঞ্চায়েত, ২০০৯-এ লোকসভা ভোট, ২০১০-এ পুরভোট হয়ে ২০১১-র পরিবর্তনের বিধানসভা ভোটে যা ফল হয়েছিল, তার পরে তাঁদের আর হারানোর কিছু নেই বলেই বাম নেতৃত্ব মনে করছিলেন। কিন্তু এই উপনির্বাচনে সেই ধারণা ভেঙে চুরমার! এ ভাবে ভোট কমতে থাকলে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তাঁদের ভাগ্য, জানেন না আলিমুদ্দিনের কর্ণধারেরা। বিশেষত, সামনেই যেখানে আরও একটি পঞ্চায়েত ভোট।
ভোটপ্রাপ্তির হারে ভাল রকম ধস সত্ত্বেও কংগ্রেস এবং তৃণমূলের ভোট কাটাকাটির জেরে নলহাটি আসনটি জিতে নিয়েছে বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক। বাম-বিরোধী ভোট ভাগ হয়ে গেলে পরিণাম কী হতে পারে, নলহাটিই তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ছেড়ে বেরিয়ে আসার পরে তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করেছিলেন, বাম-বিরোধী সব ভোট তাঁদের দিকেই আসবে। কিন্তু বাস্তব চিত্র বলছে, তাতে ভাল রকম ভাগ বসাচ্ছে কংগ্রেস। সমর্থন হ্রাস সত্ত্বেও ভোট বিভাজনের জেরে বামেদের একটি আসন জিতে যাওয়া এবং কংগ্রেসের ভাল রকম ভোট পাওয়া এই জোড়া তথ্যই আগামী লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফের জোটের দরজায় নিয়ে আসতে পারে।

দীপক চট্টোপাধ্যায়

রবিউল আলম চৌধুরী

কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী
বস্তুত, সেই সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেননি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। প্রাক্তন মন্ত্রী, কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়া আরও সরাসরি বলেছেন, “বাংলার মাটিতে কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে কোনও শক্তি যে সিপিএম বা বামফ্রন্টকে পরাস্ত করতে পারবে না, আবার প্রমাণ হয়ে গেল!” স্বয়ং মমতা অবশ্য বিশদ কোনও মন্তব্যে যাননি। মহাকরণ ছাড়ার আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শুধু বলেছেন, “ইংরেজবাজারে ভাল ফল হয়েছে। আমি ওকে (কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী) অভিনন্দন জানিয়েছি। ওখানে তো একটা তা-ও হল। সব জায়গাতেই ভাল হয়েছে!”
তবে ঘটনা হল, ইংরেজবাজারে তৃণমূল বা রেজিনগরে কংগ্রেস কোনওটাই সেই অর্থে দলের জয় নয়। ব্যক্তিগত ক্যারিশমার জয়। এলাকাভিত্তিক ‘জমিদারে’রা নিজেদের তালুক ধরে রাখতে পেরেছেন! ইংরেজবাজারে যা করেছেন সদ্য তৃণমূলে যাওয়া কৃষ্ণেন্দু, রেজিনগরে তা-ই করে দেখিয়েছেন কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী। যার জন্য কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে গিয়ে মন্ত্রী হওয়া হুমায়ুন কবীর রেজিনগরে তৃতীয় হয়েছেন! বীরভূমের নলহাটি অবশ্য ৪২ বছর ধরে বাম হেফাজতে ছিল। দু’বছর আগে পরিবর্তনের হাওয়া এবং জোটের জেরে আসনটি জিতেছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পুত্র, কংগ্রেসের অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। ভোট কাটাকাটির সুযোগ নিয়ে এ বার নলহাটি পুনরুদ্ধার করেছেন ফ ব-র দীপক চট্টোপাধ্যায়।
রেজিনগর আর নলহাটি শাসক তৃণমূলের বিড়ম্বনার কারণ। মুকুলবাবু অবশ্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন, “পঞ্চায়েত ভোটে দল ভাল ফল করবে। তিনটি আসনে কংগ্রেস এগিয়ে, এই জায়গা থেকে আমরা শুরু করেছিলাম। কিন্তু এখন আমরা অনেকটাই এগিয়ে। ভোট বিভাজনে বামেদের সুবিধা হবে, এমন মনে করারও বিন্দুমাত্র কারণ নেই। যাঁরা বিভাজিত, তাঁরা এ বারের ফল থেকে শিক্ষা নিলেন। আগামী দিনে এটা মেরুকরণ হয়ে যাবে।” তৃণমূলের স্বস্তি, উত্তরবঙ্গে এবং গনি খানের তালুকে তারা আরও প্রভাব বাড়িয়ে নিতে পারল কৃষ্ণেন্দুর বিপুল জয়ে। উত্তরবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটে যা তাদের পালে হাওয়া জোগাতে পারে।
ভাটার টান
কেন্দ্র ২০১১ ২০১৩
নলহাটি ৩৯ ৩৩
রেজিনগর ৪৪ ৩২
ইংরেজবাজার ৩৯ ২৮
বামেদের ভোট শতাংশের হিসেবে
ইংরেজবাজার যদি কংগ্রেসের অস্বস্তি হয়, তা হলে স্বস্তির কারণ, রেজিনগরে অধীর-দুর্গ অটুট রেখে মন্ত্রীকে ধরাশায়ী করা। নলহাটিতেও তৃণমূলকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় হওয়া। অর্থাৎ বাম-বিরোধী ভোটের তারা যে বড় দাবিদার, ভাল ভাবেই তা প্রমাণ করতে পেরেছে অধীরের দল। প্রদীপবাবু যে কারণে বলেছেন, “গ্রামীণ এলাকা বেশি আছে, এমন দুই কেন্দ্রে তৃণমূল যে ভাবে তৃতীয় হয়েছে, তাতে সুষ্ঠু পঞ্চায়েত ভোট হলে তাদের কপালে দুঃখ আছে! কংগ্রেস আস্তাকুঁড়ে চলে যাবে যারা বলেছিল, তাদের এখন নাক-কান মুলে বলতে হবে কংগ্রেস সাইনবোর্ড হয়ে যায়নি!”
বামেদের স্বস্তি, ক্ষমতা হারানোর প্রায় দু’বছর পরে ভোট কাটাকাটির জন্য হলেও অন্তত একটি আসন তারা পেয়েছে। গত বিধানসভা ভোটের পরে বামেদের বিধায়ক সংখ্যা ছিল ৬২। সিপিএম বিধায়ক মুস্তাফা বিন কাশেমের মৃত্যুর পরে বসিরহাটের একটি আসন তৃণমূল জিতে নিয়েছিল। নলহাটির দৌলতে বামেরা আবার ৬২-ই হল! কিন্তু এর চেয়ে অনেক বড় অস্বস্তির কারণ, তিন কেন্দ্রেই ভোটের হারে বড়সড় বিপর্যয়। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান তথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর প্রাথমিক ব্যাখ্যা, “তিনটি কেন্দ্রেই রাজনৈতিক সংগঠন হিসাবে ভোটের কাজ করার মধ্যে খামতি ছিল। আপ্রাণ চেষ্টা করেও সিপিএমের পক্ষ থেকে তা পূরণ করা যায়নি।” সিপিএমেরই একাংশের মতে, তৃণমূলের কাজকর্মে অসন্তোষ তৈরি হলেও জনমানসে বামেদের বিশ্বাসযোগ্যতা এখনও ফেরেনি।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, জঙ্গিপুরের মতো বিজেপি এ বার উপনির্বাচনে বিশেষ দাগ কাটতে পারেনি। একমাত্র নলহাটিতে গত বিধানসভা ভোটের তুলনায় তাদের ভোট সামান্য বেড়েছে। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের ব্যাখ্যা, “যে পরিমাণ টাকাপয়সা খরচ হয়েছে, তাতে বিজেপি পাল্লা দিতে পারেনি। নলহাটিতে আমাদের ফল আর একটু ভাল হত। কিন্তু প্রশাসন পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে অসহযোগিতা করেছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.