আমরি-কাণ্ড থেকেও শিক্ষা নেয়নি বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুরের জনবহুল বাজারগুলি। শিয়ালদহের সূর্য সেন মার্কেটের অগ্নিকাণ্ডের পর বৃহস্পতিবার দুই শহরের বাজারগুলি ঘুরে দেখতে গিয়ে সেই অব্যবস্থাই নজরে পড়ল।
প্রায় এক বছর আগে বাঁকুড়া শহরের চকবাজারের আলুপট্টিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। একাধিক দোকানের লক্ষাধিক টাকার মালপত্র আগুনে পুড়ে গিয়েছিল। তারপরেও এই বাজারে সচেতনতা নজরে আসেনি। গায়ে গা ঘেঁষে সারি সারি দোকান। মাঝ খানে সংকীর্ণ রাস্তা। দমকলের গাড়ি ঢোকার জায়গা নেই। অথচ দোকানগুলির ভিতর বৈদ্যুতিক তারের জট পাকিয়ে রয়েছে। শটসার্কিট হয়ে যে কোনও সময় অগ্নিকাণ্ড ঘটতেই পারে। |
শুধু ক্রেতারাই নন, কিছু ব্যবসায়ীও এমনটাই আশঙ্কা করছেন। বিপদের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিয়েছে, যত্রতত্র হুকিং করে দোকানে বিদ্যুত নেওয়ার ঘটনাও। এই বাজারেই দেখা গিয়েছে, আতশবাজির দোকানের উপর ত্রিপলের ছাউনি। তার উপর দিয়ে গিয়েছে বিদ্যুতের ও কেব্ল টিভির তার। ক্রেতাদের প্রশ্ন, “ওই তার ছিঁড়ে ত্রিপলের উপর পড়লে অগ্নিকাণ্ড ঠেকাবে কে?” এক ব্যবসায়ীর দায়সারা জবাব, “এ ভাবেই তো চলছে। মাঝেমধ্যে ছোটখাটো আগুন লাগা ছাড়া বড় ঘটনা তো ঘটেনি। সব কিছু ঠিকঠাক করতে গেলে বিরাট খরচ।” এই শহরের লালবাজার, নতুনগঞ্জ প্রভৃতি এলাকার বাজারগুলি প্রায় একই রকম জতুগৃহ হয়ে রয়েছে।
বাঁকুড়ার পুরপ্রধান শম্পা দরিপা বলেন, “আমরা অনেকবার ব্যবসায়ীদের সতর্ক করছি। অথচ কিছু ব্যবসায়ীকে কোনও ভাবেই সচেতন করা যাচ্ছে না। তাই বড়সড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এখানেও ঘটতে পারে।” পরিদর্শনে যান? |
পুরপ্রধানের দাবি, পরিদর্শনে গেলেই নানা বিপত্তি ঘটছে। তাই নিয়মিত পরিদর্শন যে হচ্ছে এ কথাও বলা যাবে না।” তাঁর আশ্বাস, চকবাজারে বাঁকুড়া পুরসভার নিজস্ব মার্কেট কমপ্লেক্স চালু হতে যাচ্ছে। সেখানে সব রকম ব্যবস্থা থাকবে। তবে বাঁকুড়া দমকল কেন্দ্র এই পরিস্থিতির জন্য পুরসভাকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে। দমকল কেন্দ্রের ওসি সুপ্রিয় মণ্ডল বলেন, “বাঁকুড়া শহরের বাজার এলাকাগুলি যে নিরাপদ নয়, এ কথা পুরসভাকে বারবার বলা হয়েছে। দমকলের ছাড়পত্র ছাড়াই দোকানগুলি বিপজ্জনক ভাবে চলছে। অথচ পুরসভা এ সব চিন্তা না করেই বছর বছর দোকানগুলির ট্রেড লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ করাচ্ছে।” বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) মৌমিতা বসুর আশ্বাস, “বাজারগুলির অবস্থা খতিয়ে দেখতে আমরা দমকল বাহিনীর সঙ্গে পরিদর্শনে বের হব। পুরসভার সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
চকবাজার ব্যবসায়ী উন্নয়ন কমিটির সম্পাদক তথা বাঁকুড়া পুরসভার প্রাক্তন উপ-পুরপ্রধান করুনাময় চন্দ বলেন, “কোনও রকম অগ্নিকাণ্ড হলে জলের যোগান দিতে সম্প্রতি চকবাজার এলাকার একটি বড় কুয়ো সংস্কার করানো হয়েছে। তা ছাড়া ব্যবসায়ীরাও সতর্ক। শুনছি খুব তাড়াতাড়ি পুরসভার মার্কেট কমপ্লেক্সটিও খোলা হচ্ছে। সেটি চালু হলে অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনা এড়ানো যাবে।” |