উত্তর ২৪ পরগনার হাবরা-১ ব্লকে তৈলবীজ ও ভুট্টার চাষের এলাকা বৃদ্ধি ও উৎপাদন বাড়াতে উদ্যোগী হল কৃষি দফতর। সেই উদ্দেশ্যে এলাকার চাষিদের তৈলবীজ ও ভুট্টার চাষ সম্পর্কে হাতে কলমে ধারণা দিতে ব্যবস্থা করা হল প্রশিক্ষণের। স্থানীয় নকপুল এলাকায় কৃষি খামারে চাষিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্লকের বেড়গুম-১ ও ২, রাউতারা ও কুমড়ো-এই ৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকে ৫০ জন চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। চাষ সম্পর্কে তাদের নানা পরামর্শও দিয়েছেন কৃষি আধিকারিকেরা। জেলার সহ কৃষি অধিকর্তা (তথ্য) সুবল দাস, বারাসত-ব্যারাকপুর মহকুমার সহ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) শান্তিরঞ্জন সরকার, হাবরা-১ ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তা দেবব্রত পাল-সহ কৃষি অধিকর্তা ঋষিকৃষ্ণ দে সহ বিশিষ্ট আধিকারিকরা উপস্থিত থেকে চাষিদের প্রশিক্ষণ দেন। কৃষি দফতর সূত্রের খবর, এখন জেলায় হাবরা-১ ব্লকে সর্ষে চাষ হয় ১৫০০ হেক্টরে, ভুট্টা হয় ১০ হেক্টরে, তিল হয় ৮৫০ হেক্টরে, বাদাম হয় ২০০ হেক্টরে এবং সূর্যমূখী হয় ৫ হেক্টরে। দেবব্রতবাবু বলেন, “প্রশিক্ষণের শিবিরের মাধ্যমে তৈলবীজ জাতীয় ফসল ও ভুট্টা চাষের এলাকা আরও বাড়ানোর উপর নজর দেওয়া হয়েছে।” তিনি জানান, কোনও কৃষক ওই সব ফসলের চাষ করলে কৃষি দফতরের কাছ থেকে পক্ষ থেকে তাকে প্রযুক্তিগত পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করা হবে। প্রদর্শনীর মাধ্যমেও তাদের চাষ সম্পর্কে জানানো হবে।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন কুল গাছ কেটে ফেলার সময়। কুলচাষ নেট লাগিয়ে হয়। |
খেত থেকে কুলগাছ কেটে ফেলার পর সেখানে সূর্যমুখী করবার জন্য চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কারণ সূর্যমুখী চাষে কুলচাষের জন্য ব্যবহৃত নেটগুলি ব্যবহার করা যাবে। টিয়া পাখির উপদ্রব ঘটবে না। পাশাপাশি এখানে মূলত ফাল্গুন মাসে বাদাম চাষ হয়। কিন্তু বর্ষাকালে বাদাম চাষ করা হলে ওই বীজ দিয়েই এই সময়ে চাষ করা সম্ভব। চাষিদের এ সম্পর্কে সচেতন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বাইরে থেকে চাষিদের বীজও কিনতে হবে না। খরচও কমে যাবে। দেবব্রতবাবু বলেন, “সূর্যমুখীর তেল সর্ষের তেলের থেকে অনেক বেশী স্বাস্থ্যসম্মত এবং লাভজনক। সে জন্যই সূর্যমুখী চাষের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর দিকে লক্ষ্য রাখা হয়েছে।
কী বলছেন শিবিরে প্রশিক্ষণ নিতে আসা চাষিরা? কুমড়ো এলাকার কৃষক তরুণ মজুমদার বলেন, “কৃষি দফতরের পরামর্শ নিয়ে আমাদের এলাকার দু’জন কৃষক বাদাম চাষ করেছিলেন। কৃষি কর্তারা আমাদেরও নানা বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। এখানে প্রশিক্ষণ নিলে খরচ বাঁচানো যাবে। অন্য চাষিভাইদেরও এ বিষয়ে বলব।” সোনাকানিয়া গ্রামের কুলচাষি পিনাকি পাল বলেন, “এখানে এসে জানতে পারলাম কুলগাছ কেটে সেই জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করলে উপকৃত হতে পারব। তা ছাড়া কুলগাছে ব্যবহৃত নেটও সূর্যমুখী চাষে কাজে লাগানো যাবে।”
শুধু বাদাম বা সূর্যমুখী চাষই নয়, ভুট্টা, তিল, সর্ষের আধুনিক চাষ সম্পর্কেও তাঁদের সম্যক ধারণা তৈরি হয়েছে বলে জানালেন কৃষকরা। স্বভাবতই এরকম প্রশিক্ষণ শিবিরে অংশ নিতে পেরে খুশি সকলে। |