গাছে বাঁধার তেজ হারিয়ে
জুড়োলেন হুমায়ুন
চা-টা জুড়িয়ে জল।
লম্বা বেঞ্চিতে ঠক করে ভাঁড়টা নামিয়ে উঠে দাঁড়ান। চলকে পড়ে চা। পাজামাতেও ছিটে লাগে। শেষ বেলায় সে সব আর কে দেখে!
তাঁকে উঠতে দেখে বুকে আড়াআড়ি কার্বাইন ঝুলিয়ে রাখা দোহারা-সিকিউরিটি এগিয়ে আসতে বলেই ফেলেন, “আর পাহারা দিয়ে কী করবেন ভাই!”
সাত সকালে মন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে কাউন্টিং সেন্টারে ঢুকে কিছুক্ষণের মধ্যেই অকাল-ভোটের ফলে সদ্য ‘প্রাক্তন’ হয়ে যাওয়া হুমায়ুন কবীর এ বার গাড়ির দিকে এগোতে থাকেন।
বেলা প্রায় পৌনে একটা। তৃণমূলের দলীয় কর্মীরা বহরমপুর গার্লস কলেজের কাউন্টিং সেন্টার দ্রুত ফাঁকা করে ফিরে যাচ্ছেন। খানিক আগেই গাড়ির কালো কাচ তুলে সেখান থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন হুমায়ুনও। বহরমপুর ট্যুরিস্ট লজের কোণার ঘরটায় সব কটা জানলা খোলা থাকলেও সব রোদ্দুর যেন উধাও। এক ফালি খাটের উপরে আধ শোয়া হুমায়ুন। সেই দাপট, সপার্ষদ প্রতিপত্তি এমনকী দেড় মাসের প্রচারে সর্বক্ষণ লেপ্টে থাকা ম্যাজেন্টা পাঞ্জাবিটাও উধাও। একেবারেই সাদা পাজামা-পাঞ্জাবির নিরাভরণ হুমায়ুন বিড় বিড় করছেন, “দু-দিন আগে থেকেই মনে হচ্ছিল কোথাও একটা হিসেব হয়ে গিয়েছে। সেই ভয়টাই সত্যি হল জানেন!” কী হিসেব? ফ্যাল ফ্যাল করে খানিক তাকিয়ে তৃণমূল প্রার্থী বলেন, “সব টাকার খেলা। কংগ্রেস টাকা ছড়িয়ে ভোটটা কিনে নিল, বুঝলেন না!”
শক্তিপুরের মাঠে, এই তো সে দিন, তাঁর ঘোর প্রতিপক্ষ, রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীকে কুড়োল গাছে বেঁধে ‘পাওনা’ টাকা আদায়ের হুমকি দিয়েছিলেন? মনে করিয়ে দিতে মৃদু হাসেন হুমায়ুন। বলেন, “অমন কত কী বলেছি। তবে কী জানেন, প্রয়োজন হলে সে টাকা কী করে আদায় করতে হয় তা হুমায়ুন জানে।” এবং হুমায়ুন জানেন, ট্যুরিস্ট লজের বাইরে যে সোল্লাসটা থেকে থেকেই গর্জন করে উঠছে সেটা তার ‘পুরনো দলের সহকর্মীদের’। পাঞ্জাবির খুঁট দিয়ে কপাল মুছে নিজেই সান্ত্বনা খোঁজেন তিনি, “হার-জিত তো আছেই। তবে খুব মন খারাপ লাগছিল জানেন। যখন দেখলাম, মাস তিনেক আগেও যাঁরা সহকর্মী ছিলেন সেই সব কংগ্রেস কর্মীরা আমাকে নিয়ে কুৎসিত সব মস্করা করছেন।” পুরনো কথা তাহলে মনে পড়ছে?
জবাব দিতে যাচ্ছিলেন, আচমকা সাদা মোবাইলটা বেজে উঠতেই “হ্যাঁ দাদা, বলুন...” ঘরের এক প্রান্তে সরে যান তিনি। মিনিট দশেক পরে ফিরে আসেন।
“মুকুলদা (মকুল রায়) ফোন করেছিলেন।” কী বললেন?
নিজের মনেই বিড় বিড় করতে থাকেন, “সাহস জোগালেন। বললেন, ভেঙে পড়লে চলবে না। সংগঠনটা মজবুত করতে হবে।” তারপর নিজেকেই সাহস জোগান যেন, “ফেরার আর রাস্তা নেই জানেন। কালই কলকাতা যাব। দেখি, ঘুরে দাঁড়াতেই হবে আমাকে।”
যা শুনে দিল্লি থেকে তাঁর ‘প্রাক্তন’ দাদা অধীর বলছেন, “চাইলেই কী আর ঘুরে দাঁড়ানো যায়! শুধু কংগ্রেস নয়, রেজিনগরের মানুষকে অপমান করেছেন উনি। তাঁরা কি ঘুরে দাঁড়াতে দেবেন ওঁকে?” দিল্লি থেকে পরক্ষণেই অধীর বলেন,“পশ্চিমবঙ্গে ত্রিমুখী লড়াই হলেও কংগ্রেস একা একা জিততে পারে রেজিনগরের মানুষ প্রমাণ করে দিয়েছে।”
সবুজ আবিরের মিহি গুঁড়োয় ছেয়ে আছে রাস্তা। ভিড় এড়িয়ে হুমায়ুনের সাদা স্করপিও ফিরে যাচ্ছে তাঁর পুরনো ঠিকানা মানিক কোহার গ্রামে। হাত নাড়েন, “চলি, আবার কোনও দিন দেখা হবে!”
ক্ষমতা থেকে ছিটকে গিয়ে বেলাবেলি এক ভাঁড় ঠান্ডা চায়ের মতোই জুড়িয়ে গেছেন হুমায়ুন!

উপনির্বাচনের ফল
রেজিনগর

প্রার্থী দল ভোট শতকরা
রবিউল আলম চৌধুরী কংগ্রেস ৬৬,৮৭৬ ৩৯.০৭
সিরাজুল ইসলাম মণ্ডল আরএসপি ৫৫,১৫৪ ৩২.২৩
হুমায়ুন কবীর তৃণমূল ৪০,৯১১ ২৩.৯০
অরবিন্দ বিশ্বাস বিজেপি ৩,৭২০ ২.১৭
হুমায়ুন কবীর (কংগ্রেস) কংগ্রেস-তৃণমূল জোট ৭৭,৫৪২ ৪৯.৭৪
সিরাজুল ইসলাম মণ্ডল আরএসপি ৬৮,৭৮১ ৪৪.১২
অরবিন্দ বিশ্বাস বিজেপি ৬,৭৩৩ ৪.৩২



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.