এ বার ‘গোপনে’ উন্নয়ন বৈঠক হলদিয়ায়
স্থান পরিবর্তন করেও তৃণমূলের বাধা এড়াতে পারলেন না। বৃহস্পতিবার তাই ‘গোপনে’ বাম কাউন্সিলারদের নিয়ে হলদিয়া পুরসভার ষষ্ঠ উন্নয়নমূলক বোর্ড মিটিং করলেন পুরপ্রধান তমালিকা পণ্ডা শেঠ।
এ দিনের বৈঠক নির্বিঘ্নে করতে আগেই স্থান পরিবর্তন করেছিলেন পুর-কর্তৃপক্ষ। পুরভবনের বদলে ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ‘নিবেদিতা সদনে’ বেলা ১১টায় বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। চিঠি দিয়ে পুরসভার ২৬ জন কাউন্সিলারকে জানানোও হয়েছিল তা। কিন্তু এ দিন সকাল ৯টা থেকেই নিবেদিতা সদনে ভিড় জমাতে শুরু করেন তৃণমূল সমর্থকেরা। নিবেদিতা সদনে আসার পথে তা জানতে পেরে পুরপ্রধান তমালিকা পণ্ডা শেঠ পুরভবনের উদ্দেশে রওনা দেন। গণ্ডগোল চলছিল সেখানেও। পুরভবনের মূল ফটকের সামনে জমায়েত করেছিলেন বিরোধী তৃণমূল কাউন্সিলাররা। এই দেখে গাড়ি থেকে না-নেমে কাছেই গাঁধীনগরে চলে যান তমালিকাদেবী ও বাম কাউন্সিলাররা। অবশেষে পুরসভার সভাকক্ষ ‘গাঁধীভবনে’ বিরোধী কাউন্সিলার ছাড়াই বৈঠক শুরু করে দেন পুরপ্রধান। বেলা ১২টা থেকে ঘণ্টাখানেক বৈঠক চলে সেখানে।
পুরভবনের গেট আটকে জমায়েত।
পুরপ্রধান তমালিকাদেবীর অভিযোগ, “ভাঙড়ের আরাবুলের মতো এখানকার তৃণমূল নেতা আজিজুল রহমান বন্দরের শ্রমিকদের নিয়ে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করছিল নিবেদিতা সদনে। পুরভবনেও তৃণমূল কাউন্সিলার দেবপ্রসাদ মণ্ডলের নেতৃত্বে বহিরাগত গুন্ডারা ছিল। আমি সংঘর্ষে যেতে চাইনি। তাই গাঁধীভবনে সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশকে নিয়ে সুষ্ঠু ভাবে বোর্ড মিটিং করেছি।”
তৃণমূল নেতা আজিজুল রহমানের অবশ্য বক্তব্য, “নিবেদিতা সদনে এ দিন জল, নিকাশি-সহ নানা সমস্যা নিয়ে সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত গ্রাম কমিটির মিটিং চলছিল। আমি আমন্ত্রিত ছিলাম। ওঁরা পরে তো বোর্ড মিটিং করতেই পারতেন।”
আর পুরসভার বিরোধী দলনেতা তৃণমূলের দেবপ্রসাদ মণ্ডলের অভিযোগ, “বৈঠকে ডেকেও ওঁরা নিবেদিতা সদনে যাননি। পরে যেখানে বৈঠক হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে, সেখানে আমাদের ডাকা হয়নি।” দেবপ্রসাদবাবুর হুঁশিয়ারি, “এই ভাবে নিয়ম-নীতি বিরুদ্ধ কাজ করেন যাঁরা, তাঁরা প্রতারক। এই প্রতারকদের কোনও জায়গা নেই পুরসভায়। আগামী দিনে পুরপ্রধান ও উপপুরপ্রধান পুরসভায় ঢুকলে আমরা প্রতিহত করব।” যা শুনে তমালিকাদেবীর জবাব, “ওঁদের বৈঠকে যোগ দেওয়ার মানসিকতাই নেই। থাকলে এ দিন পুরভবনের গেট না আটকে নিবেদিতা সদনে যেতেন। তাই কোথায় মিটিং হচ্ছে সেটা জানানোর দায়বদ্ধতা আমার আর নেই। পুরসভায় আমাদের ঢুকতে না দিলে যথাযথ পদক্ষেপ করব।”
অন্যত্র বোর্ড মিটিং করার পরে সাংবাদিক বৈঠক পুরপ্রধানের।—নিজস্ব চিত্র।
গত বছর ৩ জুন পুর-নির্বাচনে হলদিয়া পুরসভা পুনর্দখল করে বামেরা। ২৬ জুন সিপিএম নেত্রী তমালিকা পণ্ডা শেঠ পুরপ্রধান হিসেবে চতুর্থ বারের জন্য দায়িত্ব নেন। এর পর থেকে প্রতি মাসে উন্নয়নমুলক বোর্ড মিটিং ‘অবৈধ’ ঘোষণার দাবি জানিয়ে লাগাতার বিক্ষোভ চালিয়েছেন তৃণমূল কাউন্সিলররা। ২৬ ডিসেম্বর পুরসভার ছ’মাস পূরণের দিন পঞ্চম বোর্ড মিটিংয়েও চূড়ান্ত অশান্তি হয়। তখন সমস্যার কথা রাজ্যপালকে জানান পুরপ্রধান। এরপরেই ২৯ জানুয়ারি থেকে পুরসভায় টানা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তৃণমূল কাউন্সিলাররা। সেই বিক্ষোভের জেরে ৩০ জানুয়ারি ষষ্ঠ উন্নয়নমূলক বোর্ড মিটিং ডেকেও স্থগিত করেন পুর-কর্তৃপক্ষ। না-হওয়া সেই বোর্ড মিটিং-ই বৃহস্পতিবার নিবেদিতা সদনে হবে বলে জানানো হয়েছিল কাউন্সিলারদের। মাত্র এক দিন আগে বৈঠকের চিঠি হাতে পাওয়াটা ‘চক্রান্ত’ বলে মনে করছিলেন তৃণমূল কাউন্সিলাররা। এমনকী নিবেদিতা সদনের বদলে অন্যত্রও গোপনে বৈঠক হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন দেবপ্রসাদবাবু।
তাঁর আশঙ্কা সত্যি করেই এ দিন বৈঠক হয় গাঁধীভবনে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বোর্ড মিটিংয়ে প্রতিটি ওয়ার্ডে রাস্তা, পুকুর বাঁধানো, নর্দমা নির্মাণ-সহ নানা উন্নয়ন প্রকল্পে মোট সাড়ে ৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। এর মধ্যে বিরোধী তৃণমূল কাউন্সিলারের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের রাস্তাঘাটের জন্যই ১ কোটি ৬৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুরপ্রধান।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.