মহেন্দ্র সিংহ ধোনি ‘মাইন’ পুঁতছেন! আর কোথাও নয়, নিজামের শহরে! তবে স্পিনের।
আগের টেস্টেই ১২ উইকেট নিয়েছেন। তবু রবিচন্দ্রন অশ্বিনের অফস্পিন গ্রিপ পুরোপুরি পছন্দ হচ্ছে না সচিন তেন্ডুলকরের। হাতে ধরে বুঝিয়ে দিচ্ছেন, অফস্টাম্প লাইন থেকে কী করে বলটা ভেতরে আনতে হবে!
মহা মুশকিলে পড়েছেন মাইকেল ক্লার্ক। অশ্বিনদের পালটা টোটকা বার করতে নেটে চেয়েছিলেন বাড়তি স্পিনার। কিন্তু চাইলেই বা দিচ্ছে কে? কপালে তো জোটেইনি বরং হায়দরাবাদ ক্রিকেট সংস্থার কর্তাদের থেকে পত্রপাঠ জবাব গিলতে হয়েছেও সব হবে-টবে না। নেট বোলার চেয়েছ, কুড়ি জন দিয়েছি। কিন্তু স্পিনার দেব তো বলিনি।
উত্তেজক মহাযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে যা যা হয়, যে সব মশলার দরকার পড়ে, হেঁসেলে সবই আছে। নইলে কেন-ই বা পিচ নিয়ে বোর্ড মারফত আগাম নির্দেশ স্থানীয় ক্রিকেট সংস্থাকে দিয়ে বসবেন ভারত অধিনায়ক? এমএসডি-র নির্দেশের সারমর্ম নাকি এ রকম: টেস্ট সাড়ে তিন বা চার দিনে শেষ করা চাই। ভারত অধিনায়ক ঠিক যতটা উদগ্র ইচ্ছে নিয়ে ব্যাগি গ্রিনকে ‘নিশ্চিহ্ন’ করতে চাইছেন, ঠিক ততটাই আকুতি লিটল মাস্টারের চোখমুখে। চেন্নাই-উত্তর ব্যাটে আবার রানের সন্ধান, কিন্তু নাথন লিয়ঁ নামক কাঁটা পুরোপুরি উপড়ে গেল কি? চিপকের প্রথম ইনিংসের কোথাকার কোন লিয়ঁ-র বলে বোল্ডের বদলা দ্বিতীয় ইনিংসে শুধুমাত্র পরপর দুই ছক্কায় শোধহয় না কি?
ধোনিকে তবু হায়দরাবাদ কর্তারা বোঝাতে পারছেন। তাঁকে অন্তত বলা যাচ্ছে যে, প্রথম দিন থেকে বল ঘুরলে বিপদ আছে। অহেতুক পিচ নিয়ে হইচই বাঁধবে। তার চেয়ে জল দেওয়া কমিয়ে দ্বিতীয় দিন থেকে মারণ-ঘূর্ণির বন্দোবস্ত রাখা ভাল। কিন্তু মিস্টার ইন্ডিয়ান ক্রিকেট-কে কে বোঝাবে? তিন-তিন বার নেটে ঢুকলেন। টেনিস বলের একটা সেশন হল। তার পরে এক সাপোর্ট স্টাফের ছোড়া বলে নকিং ঠিক পছন্দ না হওয়ায় তাঁকে হালকা বকুনি দিয়ে এ বার রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ডাক পড়ল। কিন্তু সেখানেও শেষ পর্যন্ত বিরক্ত চোখমুখ নিয়ে প্যাড না খুলেই একেবারে হাতে-কলমে ক্লাস! দেশের এক নম্বর অফস্পিনারকে নিয়ে।
কিন্তু এত করেও নিজামের থমথমে শহরকে সে ভাবে জীবনে ফেরানো যাচ্ছে কই? চল্লিশ ছুঁইছুঁই কিংবদন্তি ক্রিকেট-শিল্পীর মায়াবী প্রত্যাবর্তন কিংবা চিপকে এম এস-এর শাসনের চাবুকঠিক কতটা ছুঁয়ে যাচ্ছে টাটকা টাটকা জঙ্গিদের বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠা সাইবার-সিটির মননকে? |
স্টেডিয়ামের ভেতরে টিম ইন্ডিয়া প্র্যাকটিস করছে, অথচ গেটের বাইরে উৎসুক উঁকিঝুঁকি নেই। সিরিজে এগিয়ে থাকা ধোনির ভারতের ঠিক পরের টেস্টই দেখার টিকিটের জন্য হাহাকারের অভাবটাও চোখে লাগবে। টিকিট বিক্রির বাজারের খোঁজ চাইলে কর্তাদের অতি কষ্টে হেসে “ভাল” বলতে হচ্ছে। কিন্তু তাঁরাও জানেন, ভাল নয়। শহরের ভিভিআইপিদের নিমন্ত্রণ করলেও নিশ্চিত নয়, তাঁরা আসবেন কি না। সঙ্গে জুড়েছে নিরাপত্তার বজ্রআঁটুনি। মিডিয়া কোন ছাড়, নেট বোলারদেরই বৃহস্পতিবার সাতসকালে দাঁড়িয়ে থাকতে হল ঝাড়া এক ঘণ্টা। অস্ট্রেলিয়ার নেট ততক্ষণে শুরু হয়ে গিয়েছে তো কী! হাতে ‘এন্ট্রি পাস’ নেই যখন, স্টেডিয়ামে প্রবেশ নিষেধ।
বরং দুপুরের ছবিটাকে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক মনে হবে। |
আকাশের দিকে এঁকেবেঁকে উঠে যাওয়া একটা লোহার সিঁড়ি। কেউ যেন অসীম শক্তিতে সেটাকে আরও দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছে। সিঁড়ির কোলের নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে এক টুকরো টিনের ফালি। আদতে সাইনবোর্ড। দুপুরের কাঠফাটা রোদকে ব্যাকফুটে ঠেলে ঢুলছে জনা পাঁচেক পুলিশ। বিধ্বস্ত, প্রায় চুরমার তিন তলা বাড়িটার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকা কিছু পথচলতির মুখ। প্রতিবেশী দোকানির আর্তনাদ, “ওরে বাবা, ঠিক এক সপ্তাহ আগে এই দিনই তো...সন্ধেয় একটা বিকট আওয়াজ শুনলাম পাঁচ হাত দূরে...ধোঁয়ায় ঢেকে গেল সব মুহূর্তে...ধোঁয়া সরতে দেখলাম আমার দোকানেই একটা লোক পড়ে...নাড়িভুঁড়ি সব বেরিয়ে এসেছে...কে যাবে এ সবের মধ্যে প্রাণ হাতে করে ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে...জীবনের গ্যারান্টি আছে নাকি....স্টেডিয়াম ফাঁকা থাকবে মিলিয়ে নেবেন...।”
দিলসুখনগর।
সত্যি তো। রক্তের দাগ শুকোয়নি যেখানে, সেখানে আর কীসের ক্রিকেট! কীসের অজি-সংহার!
|