পুনর্জন্ম হয়েছে জগৎবল্লভপুরের একব্বরপুর উচ্চ প্রাথমিক স্কুলের।
‘শিক্ষার অধিকার আইন’ স্কুলের পরিকাঠামো বলতে যা যা চায়, তার অনেক কিছুই মজুত এই স্কুলে।
৬৬ বছরের পুরনো স্কুলটিকে দেখলে তাক লাগে। স্কুলভবন দোতলা হয়েছে। মিড-ডে মিলের জন্য হয়েছে রান্নাঘর। খাওয়ার জন্য ‘ডাইনিং রুম’। সামনে সুসজ্জিত বাগান, মাঠ। তৈরি হয়েছে গ্রন্থাগার। ট্যাপকলের মাধ্যমে পানীয় জল সরবরাহ করা হচ্ছে। যা দেখে জগৎল্লভপুর দক্ষিণ চক্রের স্কুল পরিদর্শক সুদীপ্ত পুততুণ্ড বললেন, “প্রতিটি স্কুলের দিকেই সরকার সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়। সেই সহায়তাকে পুঁজি করে কী ভাবে আদর্শ স্কুল গড়া যায়, তা এই স্কুলের দিকে তাকালে বোঝা যায়। প্রতিটি ক্ষেত্রেই যদি এমন কাজ হয়, তা হলে প্রাথমিক স্কুলগুলির চেহারা পাল্টে যাবে।”
স্কুলটি তৈরি হয় ১৯৪৭ সালে। প্রথম থেকে এটি ছিল একব্বরপুর হাইস্কুলের সঙ্গে। ১৯৮৯ সালে হাইস্কুলটি অন্যত্র উঠে যায়। তার পর থেকে বিপাকে পড়ে প্রাথমিক স্কুলটি। হাইস্কুলের সঙ্গেই ভবন মেরামতির জন্য সরকারি বরাদ্দ আসত। কিন্তু হাইস্কুলটি অন্যত্র চলে যাওয়ায় সেই বরাদ্দ বন্ধ হয়। |
মেরামতির অভাবে ক্রমশ পোড়োবাড়ির আকার নেয় স্কুলটি। এই অবস্থা চলে প্রায় ১৩ বছর ধরে। শেষ দিকে প্রধান শিক্ষককে বাদ দিলে মাত্র এক জন শিক্ষক ছিলেন। কমছিল ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও। সংস্কারের অভাবে স্কুলভবন ধ্বংসস্তূপের চেহারা নেয়। শেষ পর্যন্ত গ্রামবাসী এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের চেষ্টায় ২০০৫ সাল থেকে সরকারি বরাদ্দ পেতে শুরু করে স্কুল। তারপর থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং গ্রামবাসীরা টাকার সদ্ব্যবহার করেন।
নতুন স্কুলভবন পাঁচিলে ঘেরা। পাঁচিলের ভিতরের দেওয়ালে আঁকা হয়েছে মনীষীদের ছবি। এ ছাড়া প্রথম থেকে চতুর্থ পর্যন্ত প্রতিটি শ্রেণির সিলেবাস লিখে দেওয়া হয়েছে দেওয়ালে। গ্রন্থাগারে রয়েছে সুকুমার রায়, উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী থেকে শুরু করে হাঁদা-ভোদার গল্পের নানা সম্ভার। দোতলায় তৈরি হয়েছে বিজ্ঞানকেন্দ্র। মানব জগতের বিবর্তনের ইতিহাস সেখানে মডেলের সাহায্যে তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে বিজ্ঞান শিক্ষার নানা উপকরণ। প্রধান শিক্ষক বরুণ সাহা জানান, “গত বছর থেকে পড়ুয়ার সংখ্যা ফের বাড়ছে।” ‘শিক্ষাবন্ধু’ গোপাল ঘোষ বললেন, “ইংরেজি মাধ্যম স্কুল থেকেও অনেকে ছেলেমেয়েদের ছাড়িয়ে এনে এখানে ভর্তি করান।” গ্রাম শিক্ষা কমিটির সভাপতি পার্থ মাইতির কথায়, “স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমরা এর উন্নতির জন্য চেষ্টা করেছি।” শিক্ষক কম থাকায় স্কুলেরই প্রাক্তন শিক্ষক প্রফুল্লকুমার সামন্ত এখনও নিয়মিত স্কুলে আসেন। বিনা বেতনেই ছাত্রছাত্রীদের পড়ান। তিনি বলেন, “পোড়োবাড়ি থেকে স্কুলের পুনর্জন্ম হয়েছে। এই অবস্থায় আমি কী আর ঘরে বসে থাকতে পারি!” |