|
|
|
|
|
দায়িত্ব বাড়ল, হিসেব
কষছে মানিকের সরকার
সন্দীপন চক্রবর্তী • কলকাতা |
|
জ্যোতি বসুর থেকে আর মাত্র এক কদম দূরে! প্রয়াত বসুর নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গে বামেরা সরকার গড়েছিল পাঁচ বার। তাঁর নেতৃত্বে ত্রিপুরার মুকুট এই নিয়ে চার বার বামেদের মাথায়। মুকুটের উজ্জ্বলতম মানিক্য তবু নতুন করে হিসাব কষতে বসছেন! এবং এখনও দাবি করছেন, তাঁর কোনও কৃতিত্ব নেই! সব কৃতিত্ব জনতার! “অনেক কাজ বাকি। মানুষ যে আস্থা রেখেছেন, তার মর্যাদা দিতে হবে। আরও কাজ করতে হবে।” নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় দেশের এক মাত্র বাম রাজত্ব রক্ষা করার পরে বৃহস্পতিবার রাতে মানিক সরকারের গলায় উচ্ছ্বাস নেই! আছে শুধু স্বস্তি। একটু আগেই ধনপুর থেকে বিজয়ীর শংসাপত্র নিয়ে ফিরেছেন। দলের সদর দফতরে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন। আগরতলার দশরথ দেব ভবন থেকে তার পরে আনন্দবাজারকে বলছেন সিপিএমের নয়নের ‘মানিক’ “মানুষকে বলেছিলাম, আমাদের বেশি আসন দিন। বেশি ভোটও দিন। বিনম্র ভাবে বলছি, মানুষ আমাদের আবেদনে সাড়া দিয়েছেন। দায়িত্ব বেড়ে গেল! আরও কাজ করতে হবে। মানুষ যা দিয়েছেন, রক্ষা করতে হবে।” ‘বিনম্র ভাবে বলছি’ না বললেও চলত! পাশের রাজ্যে কুড়ি মাসের সরকারের মুখে ‘১০০% কাজ করে দিয়েছি’ শুনতে শুনতে অভ্যস্ত কানে ত্রিপুরার ‘সরকারে’র বিনয় এমনিই ধরা পড়ছিল! |
|
কাণ্ডারী: অটুট দেশের একমাত্র বাম দুর্গ ত্রিপুরা। জয়ের পরে দলের সদর দফতরে মানিক
সরকারের সাংবাদিক সম্মেলন। বৃহস্পতিবার আগরতলায় উমাশঙ্কর রায়চৌধুরীর ছবি। |
চতুর্থ বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর পাসপোর্ট হাতে নিয়ে মানিকবাবুর বিশ্লেষণ, তিন মন্ত্রে বাজিমাত করতে পেরেছে তাঁর সরকার। “প্রথমত, অনেক লড়াই করে যে শান্তি এসেছে রাজ্যে, তাকে রক্ষা করার কথা বলেছিলাম। শান্তি বিঘ্নিত করার চেষ্টা যে চলছে, সেই সম্পর্কে সতর্ক করেছিলাম। দ্বিতীয়ত, ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবেশ বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছিলাম। তৃতীয়ত, গণতান্ত্রিক কাঠামো রক্ষা করার কথা বলেছিলাম। গণতন্ত্র মানে শুধু পাঁচ বছর অন্তর ভোট দেওয়া নয়। মত প্রকাশের স্বাধীনতা। এই সব আবেদনেই সাড়া দিয়েছেন মানুষ।” বলছেন সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য। কংগ্রেসের জোটসঙ্গী আইএনপিটি এ বার একটিও আসন না-পাওয়ায় স্বস্তি গোপন করছেন না। এই আইএনপিটি-র সঙ্গে দোস্তির জন্যই বিরোধীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদীদের মদত দেওয়ার প্রচার চালিয়েছিল সিপিএম। যে কারণে ত্রিপুরাবাসীকে অভিনন্দন জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু এ দিন কলকাতায় বলেছেন, “সন্ত্রাসবাদী শক্তির পরাজয় হয়েছে এ বারের নির্বাচনে।”
বস্তুত, ভোটের পরে ত্রিপুরা সিপিএমের অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট ছিল, গত বারের ৪৯ টপকে এ বার অন্তত ৫০টি আসন পাবে বামফ্রন্ট। ফলগণনার পরে বামেদের খাতায় ঠিক ৫০টি আসন! সিপিএম ৪৯, সিপিআই ১। আরএসপি-র এক মন্ত্রীর পরাজয় ছাড়া টানা পাঁচ বারের জন্য ত্রিপুরায় সরকার গড়ার পথে বামেদের জন্য কোনও অস্বস্তি নেই। গত বারের ৫১.২৫%-এর চেয়ে আরও কয়েক শতাংশ ভোট বেড়েছে। জেতা ৫০টি আসনের মধ্যে ৪৫টিতেই ৫০%-এর বেশি ভোট পেয়ে জয়। যার মধ্যে বাদল চৌধুরীর ৬৪% ভোট পেয়ে জয়ও আছে। স্বভাবতই স্বস্তি সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য গৌতম দাশের “পঞ্চাশ ছুঁতে পেরেছি! আইএনপিটি-র বিজয় রাঙ্খলও পরাস্ত!” ‘পরিবর্তনে’র ডাক দিয়ে ভোটে-লড়া প্রদেশ কংগ্রেসের নেতা অশোক সিংহ মেনে নিয়েছেন, তাঁদের আবেদন মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। প্রদেশ কংগ্রেস ভবনের সামনে ‘পরিবর্তনে’র কাউন্ট ডাউন ঘড়িও স্তব্ধ। সিপিএমের এক জয়ী বিধায়ক ঠাট্টা করছেন, “এই হাওয়া বুঝেই আপনাদের দিদির তৃণমূল এ বার এখানে লড়তেই নামেনি!”
পশ্চিমবঙ্গে বাম ভোটের হার ক্রমশ কমছে। ত্রিপুরায় ক্রমশ বাড়ছে! এমতাবস্থায় আলিমুদ্দিন-সহ গোটা দেশের সিপিএম থেকে একের পর অভিনন্দন বার্তা পৌঁছচ্ছে আগরতলায়। এ রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ফোনটা অবশ্য মানিকবাবু ‘মিস’ করেছেন। “তখন আগরতলায় ছিলাম না। নিজের কেন্দ্রে (যেখানে এ বার ব্যবধান বাড়িয়ে ৬ হাজার পার করেছেন) যেতে হয়েছিল তো! ভোটের দিন বুদ্ধদা’র সঙ্গে কথা হয়েছিল। ওঁর তো শরীরটা ভাল যাচ্ছে না।” একটু উদ্বিগ্ন শোনাল দেশের একমাত্র কমিউনিস্ট মুখ্যমন্ত্রীকে।
শপথের দিনক্ষণ ঠিক হবে দিনদুয়েকেই। “জাঠা শেষে ১৯ মার্চ দিল্লির সমাবেশে কিন্তু থাকছি।” রেকর্ড ভাঙতে ভাঙতেও সর্বক্ষণ দলের অনুগত সৈনিক ত্রিপুরার ‘সরকার’!
|
ত্রিপুরা ফল |
বামফ্রন্ট: ৫০ |
• সিপিএম: ৪৯ |
• সিপিআই: ১ |
কংগ্রেস: ১০ |
|
|
|
|
|
|