নিয়ম ভাঙার ‘নিয়ম’ আছে
শিয়ালদহে বাজারগুলিই রান্নাঘর
য়েকশো ফুট দূরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ভস্ম হয়ে গিয়েছে সূর্য সেন মার্কেট, মারা গিয়েছেন ১৯ জন। ২৪ ঘণ্টা পরে বৃহস্পতিবার সেই শিয়ালদহের বাজারে ঘুরে দেখা গেল, রোজের মতোই সেখানে আগুন জ্বালিয়ে রান্না করছেন দোকানিরা। ছোট্ট ঘুপচি রান্নাঘরে ডাঁই করে রাখা গ্যাস সিলিন্ডার। বাজারের বারন্দায় বিপজ্জনক ভাবে ঝুলে থাকা বৈদ্যুতিক তার সরিয়েই যাতায়াত করছেন সাধারণ মানুষ।
দুপুর সাড়ে বারোটা। বৈঠকখানা বাজারের মুড়িপট্টিতে তখন পাম্প দেওয়া স্টোভে ভাত চাপিয়েছেন এক দোকানদার। স্টোভের চারিদিকে চটের বস্তা ভর্তি মুড়ি। সিলিংয়ে বিপজ্জনক ভাবে ঝুলছে বিদ্যুতের তার। ওই দোকানি জানালেন এখানেই তাঁর দোকান। এখানেই রান্না করেন, বাড়ি যেতে দেরি হলে দোকানেই শুয়ে পড়েন। সূর্য সেন মার্কেটের দুর্ঘটনার খবর তিনি জানেন। তিনি জানেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দোকানিদের জীবনের সুরক্ষার জন্যই দোকানের আশপাশে রান্না করতে নিষেধ করেছেন। তবু তাঁর বক্তব্য, “এতদিন রান্না করছি। কিছু তো হয়নি! রোজ হোটেলে গিয়ে খেয়ে আসার পয়সা নেই। তাই দোকানেই রান্না করি।”
বৈঠকখানা বাজার: বস্তাবোঝাই ঘরেই চলছে রান্নাবান্না। শিয়ালদহের একটি বাজারে বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র
ওই বাজারের সব্জি পট্টি, পান পট্টিতেও জ্বলছে গ্যাসের স্টোভ। স্টোভের পাশেই পড়ে রয়েছে প্লাস্টিকের প্যাকেট থেকে শুরু করে নানা দাহ্য পদার্থ। শিয়ালদহ বৈঠকখানা বাজারের লাগোয়া ১০ নম্বর এপিসি রোডের চারতলা বাড়িটা দেখলে সূর্য সেন মার্কেটের পোড়া বাড়িটার সঙ্গে যেন অনেক মিল পাওয়া যায়। অপ্রশস্ত সিঁড়ি। সিঁড়ি দিয়ে উঠলে সরু বারান্দার এক দিকে ছোট ছোট ঘর। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন এখানে বেশির ভাগ ঘরই ভাড়া দেওয়া। কিছু অফিসও রয়েছে। ওই সরু বারান্দার পাশ দিয়েই মাকড়সার জালের মতো ঝুলছে বিদ্যুতের তার। ওই তার সরিয়েই কার্যত মানুষ যাতায়াত করছেন। দু’একটি তারের প্লাস্টিকের মোড়ক খুলে গিয়ে বিপজ্জনক ভাবে খোলা তার বেরিয়ে আছে। স্থানীয় বাসিন্দারা ভাল ভাবেই জানেন, ওই খোলা তারে জল পড়ে শর্ট সার্কিট হতে পারে। ওই বারান্দা থেকেই দেখা গেল, বাজারের টিনের চালের উপরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে প্লাস্টিকের প্যাকেট। টিনের চালে একটি বিড়ি বা সিগারেটের আগুন থেকেই ঘটে যেতে পারে অগ্নিকাণ্ড। সূর্য সেন মার্কেটের অগ্নিকাণ্ডের পরে অবশ্য বাসিন্দাদের কেউ কেউ জানালেন, ওই প্লাস্টিকগুলি পরিষ্কার করে দিতে হবে। বৈঠকখানা বাজার সমিতির এক অংশের সম্পাদক গোপালচন্দ্র দাস বলেন, “সূর্য সেন মার্কেটের কাছে তো তবু দমকল আসতে পেরেছিল। এখানে দমকলের গাড়ি ঢোকাও খুব কঠিন। কাছাকাছি জলও নেই। আমাদের নিজেদেরই জল কিনে খেতে হয়।” বাজার সমিতির সদস্যেরা জানালেন, বাজারের বিপজ্জনক তার সরিয়ে ফেলা নিয়ে তারা স্থানীয় বিধায়ককে জানিয়েছেন। স্থানীয় বিধায়ক শিখা মিত্র অবশ্য বলেছেন, “আমি মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে জানিয়েছিলাম যে, শিয়ালদহ উড়ালপুলের আশপাশে স্টোভ জ্বালিয়ে রান্না হয়। জায়গাটি জতুগৃহ।”
শুধু বাজারের মধ্যেই নয়, শিয়ালদহ এ জে সি বসু রোড লাগোয়া উড়ালপুলের দুই পাশের সরু গলির ভিতরে লস্যির দোকান থেকে শুরু করে নানা ধরনের দোকানের পাশেও চলে উনুন জ্বালিয়ে রান্না। এক দোকানদার জানালেন, সারাদিন কাজের শেষে বাড়ি ফিরতে দেরি হলে দোকানেই শুয়ে পড়েন তিনি। ছোট দোকানের ভিতরে সারাদিন উনুন জ্বলে। দোকানে অগ্নি-নির্বাপক ব্যবস্থা কী আছে? তাঁরা জানালেন, আগুন নেভানোর জন্য ছোট সিলিন্ডারের স্প্রে রয়েছে। দোকানে কোথাও অবশ্য ওই অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্রটি চোখে পড়ল না।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.