সমস্যা উত্তর-পূর্বে
পরিবেশের সঙ্গে উন্নয়নের সংঘাত, থমকে তিন প্রকল্প
জাতীয় স্বার্থে নির্মীয়মাণ একাধিক প্রকল্পের কাজ থমকে গেল। কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের উপদেষ্টা কমিটির তরফে অরুণাচল সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, চিন সীমান্তে প্রস্তাবিত দু’টি প্রতিরক্ষা প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব জরিপ করে, প্রয়োজনে স্থান বদল করতে হবে। পাশাপাশি মণিপুর সরকারকে বলা হয়েছে, বনমন্ত্রকের ছাড়পত্র না পাওয়া অবধি বন্ধ রাখতে হবে ইম্ফল-জিরিবাম ব্রডগেজের কাজও।
অরুণাচল প্রদেশের দু’টি প্রকল্পই পশ্চিম কামেং জেলায় গড়ে ওঠার কথা। সেনা সূত্রে খবর, চিন সীমান্তে ভারতীয় সেনার শক্তি বৃদ্ধির উদ্দেশেই এই সেনা ঘাঁটি দু’টি নির্মাণ করা জরুরি। কিন্তু ঘাঁটি দু’টি তৈরির জন্য প্রায় ৪৫৫ হেক্টর অরণ্য ধ্বংস হবে। তা নিয়েই গোল বেধেছে। এমন বিপুল পরিমাণ সবুজ ধ্বংসের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের কাছে প্রতিবাদ জমা পড়ে। মন্ত্রকের উপদেষ্টা কমিটি এ নিয়ে বৈঠকের পরে রাজ্য সরকারকে জানিয়েছে, দু’টি প্রকল্পের জন্য পরিবেশের উপরে কী প্রভাব পড়বে অবিলম্বে তা সমীক্ষা করে রিপোর্ট তৈরি করতে হবে। প্রয়োজন হলে বিকল্প স্থানের ব্যবস্থা করা হোক।
পরিবেশ প্রেমীদের অভিযোগ, ১৯৮০ সাল থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের স্বার্থে পশ্চিম কামেঙের প্রায় ৯৫৪ হেক্টর অরণ্য ইতিমধ্যেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। যে এলাকায় প্রকল্প দু’টি হচ্ছে সেই এলাকা লাল পান্ডা-সহ বহু প্রাণীর বিচরণ ভূমি। বার্ডলাইফ ইন্টারন্যাশনালের তরফে এলাকাটিকে ‘ইমপর্ট্যান্ট বার্ড এরিয়া’ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। প্রাথমিক জরিপে জানা গিয়েছে, সেনা ঘাঁটি হলে এখানকার ৮২,০৫১টি গাছ কাটা পড়বে। কাজেই পাখি ও পশুদের উপরে এই ঘটনার ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। সেনাবাহিনী অরণ্য সাফ করার ভর্তুকি হিসাবে ৪৫৪.৫৯ হেক্টরে নতুন করে অরণ্য তৈরি করার প্রতিশ্রুতি দিলেও, বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকল্প হাতে নেওয়ার পরে ঘন অরণ্য গড়ে তোলায় বহু সময় লাগবে। প্রাচীন বনে পশু-পাখিরা যে ভাবে বাস্তুতন্ত্রের সঙ্গে একাত্ম হয়ে ছিল, অরণ্য সাফ হলে তা নষ্ট হবেই। উপদেষ্টা কমিটি সেনাবাহিনীকে পরামর্শ দিয়েছে, সেনা ঘাঁটি নির্মাণের কাজে, প্রতিপদে বন্যপ্রাণ ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে এগোতে হবে। পাশাপাশি, নির্মাণ শ্রমিকরা যেন পশু-পাখি হত্যা না করেন, জঙ্গলে কাঠ না কাটেন—সে দিকেও কড়া নজর রাখতে বলা হয়।
অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের উপদেষ্টা কমিটি মণিপুর সরকার ও উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলকে নির্দেশ দিয়েছে, বন মন্ত্রকের ছাড়পত্র না পাওয়া অবধি ইম্ফল-জিরিবাম ব্রডগেজ লাইনের কাজ বন্ধ রাখা হোক। ১২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেলপথের জন্য মঞ্জুর হয়েছে ৩০৫৬ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা। লাইন পাততে গেলে ৪৯১ হেক্টর বনাঞ্চল সাফ করতে হবে। এ নিয়েই বনমন্ত্রকের উপদেষ্টা কমিটির বিশেষ বৈঠক বসে। রেল বিভাগ মেনে নিয়েছে, জাতীয় স্বার্থে ছাড়পত্রের অপেক্ষা না করেই তারা ইম্ফল-জিরিবাম ‘জাতীয় প্রকল্প’-র জন্য বনাঞ্চল ও পাহাড় কাটার কাজ ২০১০ সাল থেকে শুরু করেছে। ১৫টি রেল সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, রেলপথের জন্য ৮৫৬২টি বিভিন্ন গাছ, ২০ হাজার বাঁশ ঝাড় সাফ করতে হবে। রেলের বক্তব্য, ১২৫ কিলোমিটার পথের ১১৫ কিলোমিটারই অরণ্যের ভিতর দিয়ে গিয়েছে। সে ক্ষেত্রে, বন সাফ করা ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু উপদেষ্টা কমিটির বক্তব্য, প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দিয়ে ছাড়পত্র যেমন নেওয়া হয়নি, তেমনই বহু ক্ষেত্রে অরণ্যবাসী পরিবারদের ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়নি, বকেয়া রাখা হয়েছে।

বিষ প্রয়োগেই বাঘের মৃত্যু
অসুস্থতা বা বার্ধক্য নয়, বিষ ক্রিয়ার ফলেই চলতি মাসে ওরাং জাতীয় উদ্যানে তিনটি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মৃত্যু হয়েছে। আজ ঘটনাস্থল ঘুরে, বনকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার পরে ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথরিটি বা এনটিসিএ-র প্রতিনিধি, ডি পি বাঁকওয়াল এমনটাই জানালেন। ৯, ১১ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ওরাং রাজীব গাঁধী জাতীয় উদ্যানের পাচনৈ বন শিবিরের কাছে তিনটি বাঘের দেহ মেলে। বনবিভাগের তরফে, প্রথম দু’টি বাঘের মৃত্যু ‘স্বাভাবিক’ বলে জানানো হলেও, গত কাল তৃতীয় বাঘের দেহ উদ্ধারের পর পশুপ্রেমী ও এনটিসিএ প্রতিনিধিদের চাপে বনকর্তারা বিষ প্রয়োগের ঘটনা বলে মানতে বাধ্য হন। আজ এনটিসিএ-র গুয়াহাটি শাখার প্রধান, বাঁকওয়াল ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃত বাঘের দেহ, ময়না তদন্ত রিপোর্ট খুঁটিয়ে দেখেন। তিনি জানিয়েছেন, বিষের প্রকৃতির ব্যাপারে ফরেনসিক পরীক্ষার পরে জানা যাবে। তবে বাইরে থেকে শরীরে বিষ ঢোকার ফলেই যে তারা মারা গিয়েছে তা মোটামুটি নিশ্চিত। কোনও রয়্যাল বেঙ্গলই মারা যাওয়ার মতো বৃদ্ধ ছিল না। তেমন অসুস্থতার ঘটনাও নজরে পড়েনি। বাঘ-মানুষ সংঘাত এড়াবার জন্য বাঁকওয়াল অবিলম্বে গ্রামের দিকে নজরদারি পোস্ট তৈরি ও বৈদ্যুতিন বেড়া বসাবার প্রস্তাব দেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.