বছর চোদ্দো আগের কথা। দিল্লির এক ঘিঞ্জি বস্তি এলাকায় গিয়ে চুপিসারে একটা বাড়ির দেওয়ালে কম্পিউটার লাগিয়ে দিয়ে এসেছিলেন তিনি। উদ্দেশ্য ছিল, দেখা কী হয়!
এত সব কিছু যিনি করেছিলেন, তিনি এক প্রবাসী বাঙালি। নাম সুগত মিত্র, পেশায় অধ্যাপক, থাকেন ব্রিটেনে। এবং এ বছরের ‘টেড’-জয়ী। সাউথ ক্যালিফোর্নিয়ার লং বিচ শহরে পুরস্কার নেওয়ার সময় নিজেই জানালেন, তাঁর কুড়ি বছর আগের অভিজ্ঞতার কথা। |
“ভেবে ছিলাম কম্পিউটারটা টেনে-উপরে তুলে নিয়ে চলে যাবে ওরাা। তার পর বাজারে বিক্রি করে দেবে”, বললেন সুগত। কিন্তু না, তেমন কিছুই হয়নি। বরং যা হয়েছিল, তাতে বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলেন এই পদার্থবিদ। আট ঘণ্টা পরে তিনি ফিরে এসে দেখেন, কম্পিউটার ঘিরে বসে রয়েছে একঝাঁক কচিকাঁচা। তারা নিজেরা একা-একাই ইন্টারনেট ঘাটছে। সুগত বললেন, “আমি সে দিন বুঝতে পেরেছিলাম, দারুণ কিছুর খোঁজ পেয়েছি।” কী? প্রযুক্তির জোরে দ্রুত বদলে যাচ্ছে চারপাশটা। আর এই প্রেক্ষাপটে ছোটদের পড়াশোনার একটা নতুন ধরন খুঁজে পেয়েছেন সুগত। বিভিন্ন দেশ, নানা সমাজ সব ক্ষেত্রেই কিন্তু একই ফল পেয়েছিলেন তিনি। ছোটরা তাদের পড়াশোনা নিজেরাই চালাতে পারে, যদি ইন্টারনেট থাকে। তার জন্য বড়দের নাগাড়ে তাড়া দেওয়ার কোনও দরকার নেই।
ক্লাসরুমের পরিচিত ছবিটা টেনে সুগত বলেন, “যত নিয়ম মেনে, সারি বেঁধে ওদের বসতে বলবেন, শান্ত থাকতে বলবেন, ততই দেখবেন ঝগড়া-হুলুস্থুলু বেঁধে গিয়েছে। কিন্তু একটা যন্ত্র দিয়ে বসিয়ে দিন। তার পর পিছন থেকে লক্ষ করন...।”
হ্যাঁ, লক্ষ করার মতোই। আর সে কথা মাথায় রেখেই প্রযুক্তির জালে একটা ক্লাসরুম তৈরি করার কথা ভাবছেন তিনি। ইন্টারনেটের সেই দুনিয়ায় ছোটরা এক সঙ্গে পড়াশোনা করবে, আর তাদের সাহায্য করবে বিশ্বের নানা প্রান্তের শিক্ষকরা।” ‘টেড’-এর টি হল টেকনোলজি বা প্রযুক্তি, ‘ই’ হল এনটারটেনমেন্ট বা বিনোদন, ‘ডি’ হল ডিজাইন বা নকশা। সুগত ‘টেড’ সম্মান পেলেন অবশ্যই টেকনোলজি বিভাগে। এর আগে এই সম্মান পেয়েছেন বিল গেটস, গুগলের প্রতিষ্ঠাতা, আমেরিকার প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যাল গোর-সহ অনেকে। এ বছর পুরস্কারের মূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ লক্ষ ডলার। সুগত বলেছেন, সেই টাকা দিয়ে তিনি ভারতে একটা ‘পড়াশোনার গবেষণাগার’ তৈরি করবেন, যেখানে তাঁর ‘স্কুল ইন ইন্টারনেট ক্লাউড’-এর স্বপ্নপূরণ হবে। সুগত বললেন, “যেখানেই থাকুন, ছোটদের জন্য নতুন কিছু ভাবুন, আর তা ভাগ করে নিন সকলের সঙ্গে।”
|