‘মৃত’ তাই বার্ধক্য ভাতা নেই
বেঁচে থাকলেও সরকারি নথিতে হলদিবাড়ির থানার বড় হলদিবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের পড়ামানিকপাড়ার বাসিন্দা খলিজুদ্দিন মহম্মদ মৃত! তাই প্রায় ২ বছর ধরে তিনি বার্ধক্য ভাতা পাচ্ছেন না। ২০১১ সালের জুলাই মাসে শেষবার বার্ধক্য ভাতা পেয়েছেন। আর পাননি। কারণ জানতে যখন বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করলেন, তখন জানতে পারেন, সরকারি নথিতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে কে বা কারা উল্লেখ করেছেন। বেঁচে থাকতে তাঁর নাম কেমন করে মৃত ব্যাক্তিদের তালিকায় ঢুকলো তা ভেবেই পাচ্ছেন না বৃদ্ধ।
বৃদ্ধ খলিজুদ্দিন।
—নিজস্ব চিত্র।
এমনকী প্রশাসনের কেউ-ই এ ব্যাপারে মুখ খুলছেন না। তিনি যে মরেননি বেঁচে রয়েছেন দু’ বছর ধরে প্রশাসনের দরজার বারবার গিয়ে সেই আর্জিই তাঁকে জানাতে হচ্ছে ফের ভাতা পাওয়ার আশায়। ঘটনাটি জানার পরে হলদিবাড়ির বিডিও পুনরায় ওই বৃদ্ধের ভাতা চালু করার জন্যে চেষ্টা করছেন। খলিজুদ্দিনের স্ত্রী মারা গিয়েছেন। তিন ছেলে এবং তাঁদের পরিবার নিয়ে সংসার। সম্বল চার বিঘা জমি। চাষ করে তেমন কিছুই হয় না। খলিজুদ্দিনের বয়স ৮৮ বছর। হাড় জিরজিরে শরীর। যেন চলতে চায় না। ৩ ছেলে খেত মজুর। নিজেদের সংসারই তাঁরা চালাতে পারছেন না। তার উপর বৃদ্ধ বাবাকে না দেখে উপায়ও নেই? যে ভাতার উপর নির্ভর করে বৃদ্ধের চলত তা বন্ধ। ২০০১ সাল থেকে ওই ভাতাই ছিল বেঁচে থাকার ভরসা। আচমকা বন্ধ হওয়ার কারণ জেনে হতবাক বৃদ্ধ খলিজুদ্দিন। সেই থেকে একের পর এক দরখাস্ত দিয়ে চলেছেন। আর মাঝেমধ্যেই কোনও এক ছেলের হাত ধরে কোনও ক্রমে বিডিও অফিসে গিয়ে ধর্না দিচ্ছেন ফের ভাতা চালুর আর্জি নিয়ে। হলদিবাড়ির বিডিও দিব্যেন্দু মজুমদার বলেন, “তাঁর বার্ধক্য ভাতা ফের চালু করার চেষ্টা করছি।”
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কেবল খলিজুদ্দিনবাবু নন। হলদিবাড়ি ব্লকে এই ধরনের ১২টি ঘটনা ছিল। ১০টি ক্ষেত্রে ভাতা পুনরায় চালু করা হয়েছে। উত্তর বড় হলদিবাড়ি এবং বক্সিগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার দু’জন ব্যক্তির বার্ধক্য ভাতা পুনরায় চালু করা হয়নি। কেমন করে জীবিত ব্যাক্তিকে মৃত দেখানো হল? বিডিও অফিসেরই একটি সূত্র জানিয়েছে, সাধারণত পঞ্চায়েত প্রধানেরা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় মৃত ব্যাক্তিদের একটি নামের তালিকা বিডিও অফিসে পাঠিয়ে দেন। ২০১১ সালে উত্তর বড় হলদিবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রধানের পাঠানো রিপোর্টে খলিজুদ্দিন মহম্মদকে মৃত দেখানো হয়েছিল। সেই রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে খলিজুদ্দিন মহম্মদের বার্ধক্য ভাতা বন্ধ করার সুপারিশ করা হয়। এবং তা বন্ধ হয়ে যায়।
প্রশ্ন উঠেছে খলিজুদ্দিন জীবিত থাকতে তাকে মৃত দেখানো হল কেন? উত্তর বড়হলদিবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সিপিএমের মদন রায় বলেন, “উত্তর বড় হলদিবাড়িতে ১৪ জন পঞ্চায়েত সদস্য রয়েছেন। তাঁদের এলাকাগুলিতে কারা কবে কোথায় মারা যাচ্ছেন তাঁরাই নাম নথিভুক্ত করেন। আমি সই করে তা বিডিও-র কাছে পাঠিয়ে দিই। বৃদ্ধ খলিজুদ্দিনের নামও হয়তো সেই ভাবেই মৃতদের নামের তালিকায় ঢুকে গিয়েছে। আমার পক্ষে সবাইকে চেনা তো সম্ভব নয়।” এই প্রসঙ্গে উত্তর বড় হলদিবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের পরামানিক পাড়ার পঞ্চায়েত সদস্য এসইউসিআই দলের ভগবতী রায় বলেন, “আমি কখনই খলিজুদ্দিন মহম্মদকে মৃত বলে ঘোষণা করিনি। পঞ্চায়েত প্রধান কেমন করে মৃত ব্যক্তিদের তালিকায় তাঁকে রেখে তা বিডিও-র দফতরে পাঠালেন সেটা আমি বুঝে উঠতে পারছি না।” সোমবার ছোট ছেলে মজিবুল মহম্মদের সঙ্গে হলদিবাড়িতে বিডিও-র দফতরে এসে খলিজুদ্দিন বলেন, “আমি যে কী কষ্টে দিন কাটাচ্ছি সে আমিই জানি। বার্ধক্য ভাতার উপরে অনেকটাই নির্ভরশীল ছিলাম। আমি চাই আমার বার্ধক্য ভাতা পুনরায় চালু করা হোক।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.