বিধানসভা চত্বরের মধ্যে প্রস্তাবিত নতুন বিধানসভা ভবনের শিলান্যাসের ফলক সরানো নিয়ে মতান্তর ঘটছে সরকার ও বিরোধী পক্ষের।
বিধানসভা চত্বরে হাইকোর্টের দিকের বাগানে নতুন ভবন তৈরির জন্য প্রকল্পের শিলান্যাস করেছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। সেটা ২০০১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। তখন থেকে ফলকটি ওই বাগানের মধ্যেই রয়েছে। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, প্রস্তাবিত ওই নতুন ভবন আর তৈরি করা হবে না। তাই এখন ফলকটি সরিয়ে ফেলতে উদ্যোগী হয়েছেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ইতিমধ্যেই বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের সঙ্গে কথাও বলেছেন বলে স্পিকার মঙ্গলবার জানিয়েছেন। কিন্তু বিরোধীরা এই প্রকল্প বাতিলের বিরুদ্ধে। শেষ পর্যন্ত বিরোধীদের আপত্তি উপেক্ষা করেই রাজ্য সরকার শিলা সরিয়ে দেয় কি না, তা-ই এখন দেখার! স্পিকার বিমানবাবু এ দিন বলেন, “বিরোধী দলনেতা আমাকে বলেছেন, আপনি সিদ্ধান্ত নিন।” বিরোধী দলনেতার বক্তব্য, তাঁদের মত ছিল, আলাপ-আলোচনা করে সরকার নতুন ভবন নির্মাণ প্রকল্পের জট ছাড়ানোর চেষ্টা করুক। তা না-করে সরকার প্রকল্পটিই বাতিল করে দিচ্ছে। সূর্যবাবুর কথায়, “এক সময় আমাদের সঙ্গে এই নিয়ে কথা হয়েছিল। আমরা বলেছি, এতে আমাদের আপত্তি আছে। আলোচনা করে সমস্যা দূর করার কথা বলেছিলাম। কিন্তু সরকার এখন প্রকল্প বাতিল করতে চাইছে।”
বিধানসভা চত্বরের মধ্যেই নতুন ভবন তৈরি করার ব্যাপারে হাইকোর্ট এবং হেরিটেজ কমিশনের আপত্তি আছে বলে সরকারি সূত্রের খবর। কিন্তু সূর্যবাবুর বক্তব্য, বাম জমানায় সব দিক বিবেচনা করেই ওখানে নতুন ভবন গড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার সমাধান বার করার কথাই তাঁরা সরকার পক্ষকে আগে বলেছিলেন। সূর্যবাবুর কথায়, “বিধানসভায় এখন জায়গার অভাব। সব দলকে বসার জায়গা দেওয়া যায় না। গ্রন্থাগারও সঙ্কুচিত হয়ে গিয়েছে। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বিধানসভা ভবনের পুনর্বিন্যাস দরকার। রাজারহাট-নিউ টাউনে নতুন বিধানসভা হতে পারে। কিন্তু তাতে আমাদের আপত্তি আছে। এটা সুসংহত প্রকল্প হিসাবে দেখতে হবে।” বিরোধী দলনেতার মতে, ব্রিটিশ আমল থেকে কলকাতা শহরের মধ্যে চালু-থাকা বিধানসভা ছেড়ে বিধায়কদের রাজারহাটে পাঠানোর অর্থ হয় না। সেই জন্যই সহস্রাব্দ ভবন প্রকল্প বাতিলে আপত্তি করছে বিরোধীরা।
শিলান্যাসের সময় বিধানসভার স্পিকার ছিলেন হাসিম আব্দুল হালিম। তাঁর বক্তব্য, “২০০১ সালে যখন নতুন ভবন তৈরির সিদ্ধান্ত হয়, তখন জানা গিয়েছিল, বিধানসভা এলাকার নতুন করে সীমানা বিন্যাসের ফলে বিধায়ক সংখ্যা ২৯৪ থেকে বেড়ে ৩৫০ হয়ে যাবে। বর্তমান ভবনে অত জন বিধায়ক বসানো সম্ভব নয়। তাই নতুন ভবনের পরিকল্পনা করা হয়।” বর্তমান স্পিকার বিমানবাবু বলেন, “হেরিটেজ কমিশনের অনুমতি না-পাওয়ায় আগের সরকারের আমলেই নতুন ভবন তৈরির প্রকল্পটি বাতিল হয়। এখন আমরা শিলাটি সরিয়ে দিতে চাই। সূর্যবাবু সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব আমাকে দিয়েছেন।” সূর্যবাবু অবশ্য জানিয়েছেন, নতুন করে এই নিয়ে তাঁদের সঙ্গে আর কোনও আলোচনা হয়নি। গোটা ঘটনাপ্রবাহ দেখে এক বাম বিধায়কের সরস মন্তব্য, “প্রকল্প হবে না বলে জ্যোতিবাবুর বসানো একটা শিলা খুলে দিতে চাইছে রাজ্য সরকার। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন, তখন বহু প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন, যেগুলির আর বাস্তবে রূপ পাবে না! সেই সব শিলা কি সরিয়ে দেওয়া হবে?” |