নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
ঠিক প্রশ্ন দিয়েও তা ফিরিয়ে নেওয়ায় বেলতলা গার্লস হাইস্কুলের তিন ছাত্রী পরীক্ষা দিয়েছে ভুল প্রশ্নপত্রে। অনেকটা একই অভিযোগ আদর্শ হিন্দি হাইস্কুলের ২৪ জন ছাত্রেরও। অভিযোগ, আগাগোড়া ভুল প্রশ্নপত্রে হিন্দি প্রথম ভাষার পরীক্ষা দিতে বাধ্য করানো হয়েছে তাদের। ওই ২৪ জনের আসন পড়েছে ন্যাশনাল হাইস্কুল ফর বয়েজে।
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু মঙ্গলবার জানান, কেন এমন ভুল, তা খতিয়ে দেখে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, “দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে পর্ষদকে। ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থ যাতে বিঘ্নিত না-হয়, পর্ষদ তা দেখবে। ওই ছাত্রছাত্রীরা আগ্রহী হলে তাদের পুনরায় পরীক্ষার বন্দোবস্ত করা যায় কি না, তা-ও দেখতে বলা হয়েছে পর্ষদকে।” তবে এ ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, পর্ষদকর্তারা তা জানাতে চাননি। ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থরক্ষার আশ্বাস দিলেও কী ভাবে তা করা হবে, সেটাও জানাননি পর্ষদের প্রশাসক কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়।
গত বছর থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা হচ্ছে শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যক্রমের ভিত্তিতে। আদর্শ হিন্দি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক উমাকান্ত মিশ্র এ দিন বলেন, “সোমবার নয়া পাঠ্যক্রমের ২৪ জন ছাত্রকে পুরনো পাঠ্যক্রমের প্রথম পত্রের প্রশ্নে পরীক্ষা দিতে বাধ্য করানো হয়েছে।” বিভাজিত পাঠ্যক্রমে একটি করে পত্রের পরীক্ষা হলেও পুরনো পাঠ্যক্রমে প্রথম ভাষার দু’টি পত্রের পরীক্ষা হয়। মঙ্গলবার ছিল পুরনো পাঠ্যক্রমের দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা। সোমবার প্রথম ভাষা প্রথম পত্রের পরীক্ষা দেওয়ায় ওই ২৪ জন এ দিন দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা দিতে হাজির হয় ন্যাশনাল হাইস্কুলে। তখনই বোঝা যায়, সোমবার তাদের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে ভুল প্রশ্নপত্রে। কারণ মঙ্গলবার এই ছাত্রদের কোনও পরীক্ষাই ছিল না। এ দিন কেবল পুরনো পাঠ্যক্রমের পরীক্ষার্থীদেরই পরীক্ষা দেওয়ার কথা। উমাকান্তবাবু জানান, ন্যাশনাল হাইস্কুল ও পর্ষদকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তাঁর কথায়, “পর্ষদকে লিখিত ভাবে বিষয়টি জানাচ্ছি। আশা করি, ওঁরা ছাত্রস্বার্থের কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেবেন।”
তবে পর্ষদকর্তাদের দাবি, ফোনে ওই ঘটনার কথা তাঁদের জানানো হলেও লিখিত ভাবে কেউ কিছু জানাননি। যদিও ন্যাশনাল হাইস্কুলের তরফে স্বীকার করা হয়, একটা ‘ভুল’ হয়েছে। স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি এস রাধাকৃষ্ণন বলেন, “অধ্যক্ষের কাছে রিপোর্ট চেয়েছি। কেন এমনটা ঘটল, তার তদন্ত হচ্ছে। এই ধরনের ভুল তো কোনও ভাবেই হওয়া উচিত নয়।” তিনি জানান, পর্ষদের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতেই পরীক্ষা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও কী ভাবে এমন ভুল হল, সেই প্রশ্ন উঠছে।
বেলতলা গার্লস হাইস্কুলের তিন ছাত্রী সোমবারেই লিখিত ভাবে পর্ষদকে জানিয়েছে, প্রথমে ঠিক প্রশ্ন দিয়েও পরে তা ফিরিয়ে নিয়ে তাদের ভুল প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়। বেলতলা গার্লসের ২২ জন ছাত্রীর আসন পড়েছে অন্ধ্র হাইস্কুলে। পর্ষদের প্রশাসক মঙ্গলবার বলেন, “ওই ছাত্রীরা নতুন পাঠ্যক্রমের পরীক্ষার্থী। তাই এ দিন তাদের পরীক্ষা দেওয়ার কথা নয়। সোমবারেই তাদের জানানো হয়েছিল, তারা যেন ফের বুধবার দ্বিতীয় ভাষার পরীক্ষা দিতে আসে।” তিনি জানান, কার ভুলে ওই ঘটনা ঘটেছে, সেই ব্যাপারে এখনও পুরো খবর মেলেনি। তাঁর দাবি, অন্ধ্র হাইস্কুলের তরফে ভুল প্রশ্নপত্র দেওয়ার কথা অস্বীকার করা হয়েছে।
যে-সব ছাত্রী পুরনো পাঠ্যক্রমের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিয়েছে, তাদের ব্যাপারে পর্ষদ কী সিদ্ধান্ত নেবে, প্রশাসক কল্যাণময়বাবু তা জানাননি। তিনি শুধু বলেন, “ভুল প্রশ্নে পরীক্ষা দিলেও এ ক্ষেত্রে কী করণীয়, পর্ষদ তা বিবেচনা করবে।” কিন্তু ঘটনার অভিযোগ পাওয়ার পরে এক দিন কেটে গেলেও পর্ষদ সেই বিষয়ে খোঁজখবর করে কেন কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারল না, তার সদুত্তর মেলেনি প্রশাসকের কাছে। ফলে বিভ্রান্তি বেড়েছে ভুক্তভোগী ছাত্রছাত্রীদের। |