নেই কোনও নতুন রেলের ঘোষণা। বাড়ানো হয়নি রাজধানী একপ্রেসের সময়ও। প্রাপ্তি বলতে গরিব রথের দিন সংখ্যা বাড়ানো। রেল বাজেট পেশ হওয়ার পরেই বিক্ষোভ শুরু হল ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন জেলায়।
এ রাজ্য থেকে আমদাবাদ, সেকেন্দ্রাবাদ, ইন্দোর কিংবা বেঙ্গালুরুর মতো জায়গাগুলিতে যাওয়ার জন্য ট্রেন বরাদ্দ করতে কয়েকদিন আগেই রেলমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখেছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লাতেহারের বরওয়াড়ি থেকে ছত্তীসগঢ়ের চিরিমিরির মধ্যে নতুন রেল লাইন আর গরবা জেলায় একটি এবং বোকারো ও রামগড় জেলার মধ্যে একটি নতুন রেল লাইনই উল্লেখযোগ্য প্রাপ্তি হল ঝাড়খণ্ডের। এই নিয়ে স্পষ্টতই ক্ষুব্ধ ঝাড়খণ্ডের মানুষ। ছোটনাগপুর প্যাসেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি অশোক নাগপাল বলেন, “লালু প্রসাদ, নীতিশ কুমার কিংবা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়রাও এতটা অবহেলা করেননি এখানকার মানুষকে।”
|
রেল বাজেটের পর, আজ দুপুরেই ধানবাদে বিক্ষোভ দেখায় জনতা দল ইউনাইটেড। রণধীর বর্মা চক এলাকা থেকে রেলমন্ত্রীর নকল শবদেহ নিয়ে গিয়ে ধানবাদের ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজারের অফিসের সামনে তা পোড়ানো হয়। জেডিইউ-এর ধানবাদ জেলার সভাপতি পিন্টু সিংহ বলেন, “খনিজ সম্পদ পরিবহণের কারণে প্রতি বছর ছ’হাজার কোটি টাকা রেল দফতর আলাদাভাবে ধানবাদ থেকেই পায়। অথচ এখানেই কিছু দেওয়া হল না।” বিকেলে রণধীর বর্মা চকেই রেলমন্ত্রীর কুশপুতুল জ্বালায় বিজেপি। সাঁওতাল পরগনার বিভিন্ন জেলাতেও এদিন রেলমন্ত্রীর কুশপুতুল দাহ করা হয়। ঝাড়খণ্ড বিজেপি-র সভাপতি দীনেশানন্দ গোস্বামী বলেন, “কংগ্রেস নেতৃত্ব দেখিয়ে দিল ঝাড়খণ্ডের মানুষের সুবিধার কথা তাঁরা ভাবেন না। ফলে একটিও নতুন ট্রেন তাঁরা এ রাজ্যের জন্য বরাদ্দ করেননি। বিধানসভা নির্বাচনেই আমরা এটা প্রচারে নিয়ে আসব।” |
ধানবাদের নিরসার বাম বিধায়ক অরূপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিধানসভা ভোটে অবশ্যই রেল বাজেটের প্রভাব পড়বে। এ রাজ্যে এখনও অনেক জেলা রয়েছে, যেখানে রেল লাইন পর্যন্ত পাতা হয়নি। সাধারণ মানুষ দেখলেন, কংগ্রেস কীভাবে তাঁদের বঞ্চনা করলেন।” জানুয়ারি থেকেই রাজ্যে সরকার পড়ে গিয়েছে। আপাতত এখানে রাষ্ট্রপতি শাসন চলছে। ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার সঙ্গে জোট বেঁধে এ রাজ্যে নতুন সরকার তৈরি করতে মরীয়া চেষ্টা চালাচ্ছে এখানকার কংগ্রেসের নেতারা। কারণ যে করে হোক মোর্চাকে সমর্থন করে রাজ্যে সরকার তৈরি করতে পারলে লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্য থেকে কংগ্রেসের আসন বাড়ানো সহজ হবে।
ফলে রেল বাজেট অস্বস্তি বাড়িয়ে দিয়েছে এখানকার কংগ্রেস নেতৃত্বের। এমনকী রাঁচির সাংসদ সুবোধকান্ত সহায় এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ বালমুচুরও। বালমুচু ফোন ধরেননি। সুবোধকান্ত বলেন, “খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। আমরা মাত্র ছ-সাতটি ট্রেনের জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলাম। কিন্তু কিছুই দেওয়া
হল না। তবে আমরা হাল ছাড়ছি না। সবে তো বাজেট পেশ হল। হাউসে তা পাশ হওয়ার আগে একবার শেষ চেষ্টা করে দেখব, যদি কিছু পরিবর্তন করানো যায়।”
|
রেল বাজেটে হতাশ বরাক
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলচর |
লামডিং-শিলচর ব্রডগেজ প্রকল্পের কথা রেলবাজেটে একবারও উচ্চারিত হয় না বলে বরাক উপত্যকার মানুষ অনেক দিন থেকেই ক্ষুব্ধ। আজ রেলমন্ত্রী পবনকুমার বনশল এই প্রকল্পে কাজ চলছে বলে একবার উল্লেখ করেছেন বটে, কিন্তু ওই একটি মাত্র বাক্যই। ফলে রেলবাজেট নিয়ে অসন্তোষ ব্যক্ত করেছে এই অঞ্চলের বিভিন্ন সংস্থা-সংগঠন। তাদের কথায়, কাজ যে চলছে তা তো সবারই জানা। দেড় দশক ধরে ২১৪ কিলোমিটার গেজ পরিবর্তনের কাজ কেন শেষ হচ্ছে না, তা নিয়ে কথা নেই কেন? আজ লোকসভায় রেল বাজেট পেশের পরই এই প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করার দাবিতে ফের আন্দোলনে নামার কথা জানিয়ে দিয়েছে আকসা যুব ফ্রন্ট। ২ মার্চ তাঁরা বরাক উপত্যকায় রেল অবরোধের ডাক দিয়েছেন। ফ্রন্টের মুখ্য উপদেষ্টা প্রদীপ দত্তরায়, সাধারণ সম্পাদক রাজীব সোম-রা অভিযোগ করেন, পরিবহণ লবি, রাজনীতিক ও রেলের আমলাদের যোগসাজসেই এই প্রকল্প এখনও বিশ বাঁও জলে। অন্য দিকে, শিলচর রেল স্টেশনকে ভাষা-শহিদ স্টেশন-শিলচর নামকরণের দাবিও দীর্ঘ দিনের। এ নিয়েও আশাবাদী ছিলেন এই অঞ্চলের মানুষ। কিন্তু সে আশা পূরণ না হওয়ায় অসন্তোষ ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। |