মাত্র চার মাস আগে রেলমন্ত্রী হয়েছেন। পবন বনশলের এটাই ছিল প্রথম রেল বাজেট। বাজেট পেশের পরেই বিরোধীদের দিক থেকে তাঁর ভাগ্যে জুটল নতুন শিরোপা ‘‘এ তো রায়বরেলীর বাজেট!’’
রায়বরেলী, অর্থাৎ কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর নির্বাচনী কেন্দ্র।
প্রধান বিরোধী দল বিজেপির অভিযোগ, এই বাজেটকে ‘রায়বরেলীর বাজেট’ না বলার কোনও কারণ নেই। কেন? বিজেপির যুক্তি, রায়বরেলীতে একটি কোচ কারখানা ছিলই। তা সত্ত্বেও সেখানে জাতীয় ইস্পাত নিগমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আর একটি চাকা কারখানা ঘোষণা করা হয়েছে। তার সঙ্গে ফৈজাবাদ থেকে রায়বরেলীতে নতুন লাইন বসবে। লখনউ থেকে রায়বরেলী হয়ে বারাণসী এক্সপ্রেস চালু হবে। কর্নাটক থেকে রায়বরেলী হয়ে লখনউ এক্সপ্রেস হবে।
শুধু কি সনিয়া গাঁধী? রাহুল গাঁধীর দিকেও খেয়াল কম রাখেননি রেলমন্ত্রী। কলকাতা থেকে রাহুল গাঁধীর নির্বাচনী কেন্দ্র অমেঠী আর রায়বরেলী হয়ে আগরা এক্সপ্রেস দেওয়া হয়েছে। অমেঠী-রায়বরেলী ডবল লাইনও হবে।
বিজেপি নেতা প্রকাশ জাভড়েকর বলছেন, “এত দিন জোট নেতাদের কটাক্ষ করত কংগ্রেস। তাঁরা অহেতুক জনপ্রিয় হতে গিয়ে নাকি রেলের সর্বনাশ করেছেন। কিন্তু ১৭ বছর পর রেল পেয়ে কংগ্রেস সেই জনপ্রিয় হতেই চাইল। পবন বনশলের দলীয় আনুগত্যের কোনও সীমা নেই!”
রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, গত ১৭ বছরে কখনও লালু, কখনও মমতা জোটের নেতাদের হাতেই দিতে হয়েছে রেলকে। আর রেলের দায়িত্বে এসে তাঁরাও একে একে হয়ে উঠেছেন কল্পতরু। এ বার যখন কংগ্রেস ফের রেল মন্ত্রক হাতে পেল, তখন সামনে নির্বাচন। আর রেলের ভাঁড়ার প্রায় শূন্য বললেই চলে। ফলে ইচ্ছা থাকলেও সামর্থ নেই। বনশল তাতেও চেষ্টা করেছেন, রেল প্রকল্পগুলো কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলিতে যতটা সম্ভব ছড়িয়ে দিতে। কংগ্রেস নেতারাও স্বীকার করছেন, রেলের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ। তার মধ্যেও রেলমন্ত্রী যতটা সম্ভব খড়কুটো কুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কংগ্রেসের দাবি, গোটা বাজেটে যদি ছ’বার রায়বরেলীর নাম উচ্চারণ হয়ে থাকে, তা হলে দশ বার আমদাবাদের নাম উচ্চারণ হয়েছে। বিরোধীরা সেটা ভুলে যাচ্ছেন কেন? বহু দিন ধরে জোট নেতাদের জনপ্রিয়তা কুড়োনোর ঠেলায় কংগ্রেসশাসিত রাজ্যগুলি উপেক্ষিত ছিল। এখন যদি রাজস্থানে কোচ নির্মাণ কারখানা হয় বা অন্ধ্রপ্রদেশে একটি ওয়র্কশপ হয়, তা হলে বিরোধীদের হল্লার কী কারণ? বিরোধীরা বলছেন, আগে বিহার-পশ্চিমবঙ্গে ঢালাও ঘোষণা হত! এখন বনশলের দৌলতে এক ভাবে হরিয়ানা, পঞ্জাব, জম্মু-কাশ্মীরে ঢালাও ঘোষণা হয়েছে। উত্তর-পূর্বে সিংহভাগ রাজ্যই কংগ্রেসের দখলে। বাজেটে সেখানকার উপরেও ঝোঁক অনেক বেশি। |