ভারত যে মঙ্গলবার সকাল সকালই ম্যাচটা জিতে হোটেলে ফিরে যেতে পারবে, সেই আশাই করেছিলাম। এবং তা-ই হল।
ওদের দেশে গিয়ে ০-৪-এ সিরিজ হেরে ফিরে আসার ঘটনার পর এমন জয়ের স্বাদ যে বেশ কয়েক গুন বেড়ে গিয়েছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তবে শুধু তা কেন? টস জিতে শুরুতে ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়া ৩৮০ তুলে ফেলার পরও ম্যাচটা বের করে নেওয়ার মধ্যেও কম কৃতিত্ব নেই। ওই অবস্থা থেকে শেষ পর্যন্ত আট উইকেটে টেস্ট জিতে নিজেদের প্রত্যয় ও চরিত্রের দৃঢ়তার প্রমাণ দিল ধোনিরা।
এমন জয়ে সাধারণত দলের এক জনকেই অতিমানবিক হয়ে উঠতে দেখা যায়। এই ম্যাচে সে ধোনি ছাড়া আর কে। অশ্বিনের ১২ উইকেট, কোহলির সেঞ্চুরি, সচিনের ৮১চিপকে গত কয়েক দিনে একাধিক স্মরণীয় ঘটনা ঘটলেও ধোনির ইনিংসটাই যে ম্যাচের ফলটা তৈরি করে দিল, এই নিয়ে কোনও দ্বিমতই নেই।
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেষ টেস্টে ওর ব্যাটে ৯৯ রান থাকা সত্ত্বেও বহু চাপ মাথায় নিয়ে ধোনিকে চেন্নাইয়ে মাঠে নামতে হয়। মাথা বরফের মতো ঠান্ডা রেখে যে ভাবে সেই চাপ সামলাল ক্যাপ্টেন, তা অনবদ্য। ওর ঠান্ডা মাথাটা ঈশ্বরেরই উপহার। কারণ, চেষ্টা করে বা প্রচুর ঘষে-মেজে চরিত্রের এই বৈশিষ্ঠ্য তৈরি করা যায় না। তবে শুধু গুনটা থাকলেই হয় না, তাকে কাজে লাগিয়ে নিতে হয়। ধোনি এই কাজেই বিশেষজ্ঞ।
শুধু ২২৪ রানের ইনিংস গড়াটাই ওর কৃতিত্ব নয়, যে ভাবে, যে গতিতে ও দাপটে টেস্টের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিটা ধোনি করল, তা অনেক বেশি কৃতিত্বের। আসল মুহূর্তটাকে বুঝে নিয়ে তাতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করার যে দক্ষতা ওর মধ্যে রয়েছে, এর প্রশংসা করতেই হবে। চিপকে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি সেটাই করে দেখাল।
তৃতীয় দিন সকালে যখন ধোনি ব্যাট হাতে নামে, তখন ম্যাচের রাশ অস্ট্রেলীয়দের হাতেই। সচিনের উইকেট পাওয়ার পর আত্মবিশ্বাসের চূড়ায় পৌঁছে গিয়েছিল নাথন লিয়ঁ। বেশ ছন্দেও ছিল ও। প্রথম এক ঘন্টায় উঠল মাত্র ২১ রান। কিন্তু ধোনিই চাপটা ঘুরিয়ে ওদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়। ধোনির পাল্টা আক্রমণে লিয়ঁদের আত্মবিশ্বাস ভেঙে চুরমার করে দেওয়াটাই এই ম্যাচের সবচেয়ে বড় ঘটনা। এই জায়গা থেকেই ম্যাচের মোড় ঘুরে গেল। কোহলি ও জাডেজার সঙ্গে ধোনির পার্টনারশিপগুলো দুর্দান্ত ঠিকই। তবে ভুবনেশ্বর কুমারের সঙ্গে ওর পার্টনারশিপই গুরুত্বের দিক থেকে সেরা। সচিনের সেঞ্চুরি না পাওয়াটা যেমন হতাশা কাটাল কোহলির সেঞ্চুরি। ছেলেটা প্রতি মুহূর্তে উন্নতি করছে। সেঞ্চুরির পরও আউট হয়ে যেরকম হতাশ দেখাল ওকে, তাতে বোঝা গেল এতেও সন্তুষ্ট নয় ও।
দ্বিতীয় ইনিংসে ধোনি স্পিনারদের আগের চেয়ে অনেক ভালভাবে ব্যবহার করেছে। তারই ফল পেল। তবে সে তো ক্যাপ্টেন নিজেই আগে থেকে তৈরি করে রেখেছিল। |