অস্ট্রেলিয়া সিরিজ জেতার পাশাপাশি ভারতের টেস্ট দলে অলরাউন্ডার হিসাবে রবীন্দ্র জাডেজাকে স্থায়ী করে তোলাটাও কি অধিনায়ক ধোনির আপাতত লক্ষ্য? মুখচোখে ঠিক সেই দ্যুতি, যেটা কারও নিজের কষা পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হওয়ার পর দেখা যায়। ভারত অধিনায়ককে টেস্ট-উত্তর সাংবাদিক সম্মেলনে সে রকমই ঝকঝকে দেখাচ্ছিল। প্রায় ঘোষণার ভঙ্গিতে বলে দিলেন, “যত দিন দলে রবীন্দ্র জাডেজা থাকবে, আমি ছ’নম্বরেই ব্যাট করব।”
অলরাউন্ডার জাডেজাকে খেলাতে গিয়ে চিপকে ভারতের বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান একজন কম ছিল। অধিনায়ককে সে কারণে ব্যাটিং অর্ডারে এক ধাপ উঠে আসতেই শুধু হয়নি। সেই একজন কম বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানের রানটা করার চাপও নিতে হয়েছিল। “হ্যাঁ, জাডেজাকে টেস্ট ব্যাটিংয়ে উন্নতি করতে হবে। তবে ওকে সেই সুযোগটা আমাদের দেওয়া উচিত। যাতে ও টেস্ট ক্রিকেটের সঙ্গে সড়গড় হয়ে ওঠে,” ভবিষ্যৎ ভারতীয় টেস্ট দলের প্রেক্ষিতে এ দিন খুব তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেন ধোনি।
ধোনির জন্য অবশ্য টেস্টে ছয় নম্বর পজিশন পয়া। গত ইংল্যান্ড সিরিজেই নাগপুরে ছয় নম্বরে নেমে লড়াকু ৯৯ করে রান আউট হন। চিপকে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে করলেন ২২৪। বিপক্ষ অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক যে ইনিংসকে ‘দ্য গেম চেঞ্জার’ বলে গেলেন সাংবাদিক সম্মেলনে এসে। অশ্বিনের ম্যাচে ১২ উইকেট টপকে যা ধোনিকে ম্যান অব দ্য ম্যাচ-এর পুরস্কার এনে দিলেও স্বয়ং ধোনিকে ইনিংসটা নিয়ে তেমন কিছু আহ্লাদিত দেখাচ্ছে না। এমনকী একগাদা রেকর্ড ভাঙা ডাবল সেঞ্চুরিকে উৎসর্গও করছেন না কাউকে। “এটাকে আমি নিজের জন্যই রাখছি,” বলে দিলেন তিনি।
|
ম্যাচের সেরা ধোনি। ছবি: পিটিআই |
জীবনের সেরা ইনিংস? তা-ও না। “আমি তুলনায় যেতে চাই না। যেমন বলছি না এটাই আমার সেরা ইনিংস। টেস্টে আমার ক’টা মাত্রই বড় ইনিংস আছে। যে কারণে তার মধ্য থেকে সেরা বাছাটা হয়তো সহজ। আবার একই সঙ্গে কাজটা কঠিনও। বরং দু’হাজার সাতে লর্ডসে সত্তরের ঘরে করা রানটা আমার অন্যতম সেরা ইনিংস। কারণ, তুমি কত রান করেছ সেটা আসল নয়। আসল হল, তোমার রানটা দলের জয়ের পিছনে কতটা অবদান রাখল।” বিপক্ষ বোলিংকে ধ্বংস করা ডাবল সেঞ্চুরির মালিকের মুখে এমন ব্যাখ্যাও আশ্চর্যের। আগের সিরিজের নাগপুর ইনিংসের প্রসঙ্গ উঠে এল। ধোনি বলছেন, “এখানকার চেয়ে নাগপুর টেস্টের পরিস্থিতি অন্য রকম ছিল। এখানে লিয়ঁ ভাল বল করছিল। ওদের ক্লোজ-ইনে বাড়তি ফিল্ডার হটানোর জন্য বড় হিট নেওয়ার দরকার ছিল। পরিকল্পনাটা খেটে গিয়েছিল। ওরা তার পরে ফিল্ডিং ছড়িয়ে দেয়।”
গত দেড় বছরে টেস্টে ভারতের জঘন্য পারফরম্যান্সের প্রেক্ষিতে ধোনির উপর সমালোচনার এত চাপ! তা সত্ত্বেও ধোনি মানতে রাজি নন যে, ছয় নম্বরে নেমে নিজেকে বাড়তি চাপে ফেলেছিলেন। “ছয় নম্বরে নেমে নিজের উপর বড় রান করার বাড়তি বোঝা চাপানোর কোনও ব্যাপার ছিল না। আমি কাগজ পড়ি না। নিউজ চ্যানেল দেখি না। সে জন্য যাবতীয় বিতর্ক, আলোচনা, সমালোচনার থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারি। এটা আমার কাজে লেগেছে। আমার ব্যাটিংয়ের ধরনও অপরিবর্তিত আছে। নব্বইয়ের ঘরেও আমি ঠুকঠুক করিনি। মারার বল পেলে মেরেছি।”
অস্ট্রেলিয়া দলে বেশ কয়েক জন বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান থাকায় জোড়া অফস্পিনার খেলিয়েছেন। টেস্ট ক্রিকেটে দ্বিতীয় বার অস্ট্রেলিয়ার কুড়ি উইকেটই তুলে নেওয়া স্পিনারদের বোলিংকে ‘অসাধারণ’ আখ্যা দিয়েও ধোনি ফাঁস করলেন, “প্রথম ইনিংসে ভাজ্জি নার্ভাস ছিল। তবে ও দ্বিতীয় ইনিংসে সাপোর্টিং বোলারের ভূমিকা ঠিকঠাক নিয়েছে।” চেন্নাইয়ে ভারতের একমাত্র আশঙ্কা ওপেনিং জুটির পাশেও দাঁড়াচ্ছেন অধিনায়ক। “বীরু পাজি যখন রান পায়, তখন প্রত্যেকে ওর শটের প্রশংসা করে। আবার যখন ও রান পায় না, সেই লোকগুলোই ওকে নিয়ে প্রশ্ন তোলে। কিন্তু ও এক নিমেষে খেলার রং পালটে দিতে পারে। বিজয়কেও স্বচ্ছন্দ হয়ে ওঠার জন্য আমাদের সময় দেওয়া উচিত। ওদের জুটিই খেলুক।”
ভারত অধিনায়কের কথা গৌতম গম্ভীর শুনলেন কি? |