দুশ্চিন্তার একরাশ ভাঁজ-সহ
এগোনো গেল ১-০
নিংসের দু’মিনিটও ভাল ভাবে আপলোড করা হয়েছে কি না সন্দেহ। তবু মঙ্গলবার সকালে ইউ-টিউবে দেখা গেল মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ২২৪ রানের ন্যূনতম ঝলক দেখার জন্য ইতিমধ্যে বারো হাজারের ওপর হিট হয়েছে। ওয়ান ডে ফাইনালে হয়। বিশ্বকাপ-টিশ্বকাপের মোড় ঘোরানো ইনিংস হলে হয়। টেস্ট ইনিংস দেখার জন্য সাধারণত এত হিট হয় না।
কিন্তু ইউ-টিউব তো নিছকই পারফর্মারের হালফিলের কীর্তি সংরক্ষণের জন্য প্রযুক্তিগত ছোট ব্যবস্থা। এ দিন চিপকে আরও নিশ্চিত হওয়া গেল যে, ধোনির ইনিংস ভারতের জন্য প্রথম টেস্টে অক্সিজেন টিউবের কাজ করেছে! জেতার জন্য ৫০ রান তাড়া করতে গিয়েই যেমন অস্বাচ্ছন্দ্য লক্ষ্য করা গেল, তাতে প্রথম ইনিংসে ১৯২ রান লিড না হলে তো কেলেঙ্কারি অনিবার্য ছিল মনে হচ্ছে।
বীরেন্দ্র সহবাগ এত বছর বোলারদের ত্রাস ছিলেন। বিশ্বব্যাপী শোলে-র সেই বিখ্যাত সংলাপের অনুকরণে বেয়াড়া ফাস্ট বোলারকে বলার সুযোগ ছিল, ঠিকঠাক ব্যবহার কর, নইলে বীরুকে সামনে ছেড়ে দেব! চিপকের দুই ইনিংসে চশমা পরা এই যে ভদ্রলোক গুটিগুটি নামলেন, তিনি ভয় পাওয়াবেন কী! নিজেই তো নিপাট দশটা-পাঁচটা সরকারি অফিসের কর্মীর মতো শান্তিপ্রিয় মনোভাব নিয়ে চলাফেরা করছেন। উদ্ধত সেই শরীরী ভাষাটাই নেই যে, একই বল ডিপ থার্ডম্যান থেকে মিড উইকেট যথেচ্ছ পাঠাতে পারে। আর দুটো ডেলিভারি খেলার ফাঁকে মনঃসংযোগ করে জোরে জোরে কিশোরকুমারের গান গেয়ে। সবই যেন অতীত হয়ে গিয়েছে। প্রণব রায় এ দিন হিসেব দিচ্ছিলেন চশমাতে অভ্যস্ত হতে গিয়ে প্রথম টেস্টে তাঁর কিংবদন্তি পিতাও রান পাননি। স্রেফ বাদ দিয়ে দেওয়া হয় পঙ্কজ রায়-কে। সেই সিরিজেই দুটো সেঞ্চুরিতে ঘটে পঙ্কজের প্রত্যাবর্তন। তার শেষটা সেই ওপেনিং উইকেটে বিনু মাঁকড়ের সঙ্গে ৪১৩ রানের বিশ্বরেকর্ড!
জয় হিন্দ
• একাসনে সৌরভ-ধোনি। অধিনায়ক হিসাবে দু’জনেই ২১ টেস্ট জিতেছেন। সৌরভ ৪৯ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়ে, ধোনি ৪৪ টেস্টে।
• ভারতের সবচেয়ে বেশি টেস্ট জয় এসেছে চেন্নাইয়ে (১৩)। এর পরে দিল্লি (১১)।
• অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে রান তাড়া করে এ বারেরটাই ভারতের সবচেয়ে বড় টেস্ট (৮ উইকেটে) জয়। সব মিলিয়ে আট বার রান তাড়া করে জিতেছে ভারত।
• ঘরের মাঠে সবচেয়ে সফল টেস্ট অভিষেক অশ্বিনের (ম্যাচে ১২ উইকেট)। এর আগে ছিল দিল্লিতে বিষেণ সিংহ বেদীর (ম্যাচে ৯ উইকেট)।
ইতিহাস তাই চশমার নতুন সহবাগের সঙ্গে। সমস্যা হল, অন্য ওপেনার মুরলী বিজয়ও তো রান পাচ্ছেন না। প্যাটিনসনের গতির সামনে এমন কাদামাটির সারফেসেই বিজয়কে অসহায় দেখাচ্ছিল।
সিরিজে এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে যে শ্যাম্পেনের বোতলের ফেনা-টেনা ওড়ার মন্তাজ তৈরি হওয়া উচিত, তা মনে হয় না চিদম্বরম স্টেডিয়াম থেকে ভেসে উঠল বলে! না আছে ওপেনিং বোলার! না আছে ওপেনিং ব্যাটসম্যান! কী করে বলা যাবে অস্ট্রেলিয়াকে এই যে চেপে ধরলাম, আর মুঠো আলগা করব না। ভারতীয় ড্রেসিংরুমে সেই জন্যই বোধহয় কোনও উৎসব-টুৎসব হয়নি।
ধোনি অবশ্য তাঁর মতো করে প্রাচীনকালে ভারতীয় নেতৃত্বে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীকে টোটকা দিতেই পারেন!
বীরু, টিভি দেখো না।
কাগজ পড়ো না।
রেডিও শুনো না।
কোনও ফোন ধরতে যেও না।
তা হলে দেখবে তোমার খোলা মনে খেলা আবার ফেরত এসেছে।
মাইকেল ক্লার্ক? তিনিই বা এই ম্যাচ থেকে নিজামের শহরে কোন ব্যালেন্স ক্যারি-ফরোয়ার্ড করছেন! চেন্নাইয়ে আট উইকেটে হেরে শুরু করার পরেও ক্লার্ক সম্পর্কে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটমহল খুব সপ্রশংস। সিডনি, মেলবোর্ন, পার্থ, বিভিন্ন শহরে এ দিন ফোন করেও ক্লার্ক সম্পর্কে কোনও ক্রিকেটারের অসূয়া শোনা গেল না। ভারত হলে যেটা ভাবাই যেত না।
ক্লার্ককে অদ্ভুত একটা সম্মানের সরণিতে বসায় অস্ট্রেলীয়রা। বলে গত পঁচিশ বছরের সেরা অস্ট্রেলীয় অধিনায়কদের মধ্যে ক্লার্ক নাকি তিন নম্বরে। ইয়ান চ্যাপেল, মার্ক টেলরের পরে। যে কেউ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করবে স্টিভ ওয় কি তা হলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্যাপ্টেন্সি করতেন? বা রিকি পন্টিং?
ওরা তখন বুঝিয়ে দেবে স্টিভ ছিলেন লিডার। যাকে বলে দিশারী। দুঁদে ক্যাপ্টেন নন। স্টিভ কখনও ক্লার্কের মতো চেত্তা খাওয়া টিম নিয়ে খেলেননি। স্টিভের হাতে একঝাঁক বিশ্বজয়ী প্লেয়ার ছিল। যা বংশানুক্রমিক সূত্রে পরে পান পন্টিং। সেখানে ক্লার্ককে সব কিছু তৈরি করতে হচ্ছে।
ক্লার্কের প্রতি সহানুভূতির তীব্রতা এত বেশি যে, চেন্নাই টেস্টে তাঁর ট্যাকটিক্যাল ভুল নিয়েও দিগ্গজরা ভীষণ আলোড়িত হতে নারাজ। ক্লার্ক যে একজন পেসার বেশি খেলিয়েছেন। তাঁর টিম কম্বিনেশনে জেভিয়ার ডোহার্টির অবশ্যই থাকা উচিত ছিল সেটা অনেকেই বলছেন। খুব নিস্তেজ ভাবে। চিপকে তাঁর ফিল্ড প্লেসিং নিয়েও অনেক প্রশ্ন উঠতে পারত। ক্লার্ক সম্ভবত প্রথম অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক যিনি ভারত সফরে এসে দ্বিতীয় নতুন বলে কোনও স্লিপ রাখেননি। ধোনি যখন তাঁর গদা ঘোরানো শুরু করেননি, তখনই তো স্লিপ হটানো ছিল। প্রসঙ্গটা এ দিন ফোনে তোলায় জনৈক অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার বললেন, “পুরো ছকটাই ভেবে তৈরি। ওর যা টিম, রান চোক করতেই হবে। আর ভুল তো করেনি। স্লিপ দিয়ে একটাও ক্যাচ গিয়েছে কি?” ক্রিকেটারটির নাম লেখা গেল না। তবে ইনি চ্যাপেল পরিবারের এতই ঘনিষ্ঠ যে, এটা হয়তো চ্যাপেল ভাইদেরও বিচার হতে পারে! রাতে বাঙালি রেস্তোরাঁয় ডিনার সারার ফাঁকে গ্রেগ চ্যাপেল বললেনও তাই, “ক্লার্ক দুর্ধর্ষ ক্যাপ্টেন।”
গুরু গ্রেগ অবশ্য টিভিতে দেখার সুযোগ পাননি যে, নিয়মরক্ষার পর্যায়ে চলে যাওয়া শেষ দিনের চিপক একবারই আলোকিত হয়ে পড়েছিল। যখন টেস্টে শেষ বারের জন্য এ মাঠে ব্যাট নিয়ে দাঁড়ালেন সচিন তেন্ডুলকর! একটু সংশোধন করে নিই। যখন নাথন লিয়ঁ-র বিরুদ্ধে ব্যাট নিয়ে দাঁড়ালেন সচিন তেন্ডুলকর! প্রথম ইনিংসে অফস্পিনারের স্বপ্নের ডেলিভারিতে তাঁকে আউট করে হাত-পা ছুড়েছিলেন নাথন। আজ প্রথম বলটাই তাঁর ছক্কা গেল। পরেরটাও। টেস্ট ক্রিকেটে লুডোর দান দিয়ে গত পঁচিশ বছরে কখনও শুরু করেননি সচিন। দু’ছক্কা পুট।
তা হলে বাকি তিনটে টেস্টে ব্যক্তিগত শোধ তোলারও একটা ‘টেস্ট’ চলবে? এসএমএসে সিনিয়র ভারতীয় ক্রিকেটারের কাছে জানতে চাওয়ায়, মঙ্গলবার রাতে উত্তর এল হাস্যমুখ—স্মাইলি।
ক্রিকেটারের নাম? সহজ তো—সচিন তেন্ডুলকর!

অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস: ৩৮০
ভারত প্রথম ইনিংস: ৫৭২
অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংস (আগের দিন ২৩২-৯)

এনরিকে নঃআঃ ৮১
লিয়ঁ ক মুরলী বো জাডেজা ১১
অতিরিক্ত ১৭
মোট ২৪১।
পতন: ৩৪, ৬৪, ৬৫, ১০১, ১২১, ১৩১, ১৩৭, ১৬১, ১৭৫।
বোলিং: অশ্বিন ৩২-৬-৯৫-৫, হরভজন ২৭-৬-৫৫-২,
জাডেজা ৩১-৮-৭২-৩, ইশান্ত ৩-১-২-০।

ভারত দ্বিতীয় ইনিংস
মুরলী ক এনরিকে বো প্যাটিনসন ৬
সহবাগ ক ক্লার্ক বো লিয়ঁ ১৯
পূজারা নঃআঃ ৮
সচিন নঃআঃ ১৩
অতিরিক্ত
মোট ৫০-২।
পতন:১৬, ৩৬।
বোলিং: প্যাটিনসন ৩-১-১৩-১, লিয়ঁ ৫.৩-০-২৯-১, সিডল ৩-২-৪-০।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.