দূষণ কমাতে পরিকল্পনা এসজেডিএ-র |
অনির্বাণ রায় • জলপাইগুড়ি |
যানজট, ঘিঞ্জি রাস্তা, দূষণ সমস্যা মেটাতে ২০৩০ সালকে মেয়াদ ধরে সাড়ে ছ’হাজার কোটি টাকার পরিকল্পনা তৈরি করেছে শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। মাস ছয়েক ধরে এসজেডিএর অধীন এলাকাগুলিতে সমীক্ষা চালিয়ে সুসংহত যান চলাচল পরিকল্পনা তৈরি করেছে মুম্বইয়ের এক সংস্থা। মঙ্গলবার এসজেডিএ অফিসে একটি কর্মশালায় এই পরিকল্পনার চূড়ান্ত প্রস্তাবগুলি পেশ করা হয়েছে।
পরিকল্পনা রূপায়ণে সাড়ে ছ’ হাজার টাকার মত বিপুল অঙ্কের অর্থ দরকার। তাই রাজ্য সরকারের মাধ্যমে তা কেন্দ্রের কাছে পাঠাবে এসজেডিএ। চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, “অনেকেই মনে করতে পারেন, এত পরিমাণ টাকার পরিকল্পনা কী জরুরি ছিল? অথবা কোথা থেকে এই টাকা আসবে? কিন্তু যে ভাবে দুই শহরের জনসংখ্যা ও যানবাহন বাড়ছে, তাতে পরিকাঠামো উন্নতি না হলে ১০ বছরে দু’শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা থমকে যাবে। সে কারণেই ২০৩০ সালকে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। পরিকল্পনাটি ভারত সরকারের কাছে পাঠানো হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের নগরায়নের বিভিন্ন প্রকল্পে ট্রাফিক পরিকল্পনায় বরাদ্দের আর্জি জানানো হবে।” এসজেডিএ সূত্রে খবর সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, শিলিগুড়ি শহরের ওপর দিয়ে প্রতিদিন যত পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করে তার মধ্যে ৪২ শতাংশের শহরে ঢোকার কোনও প্রয়োজনই নেই। ৩৪ শতাংশ যাত্রিবাহী বাস বা অনান্য গাড়িও শিলিগুড়ি শহরকে শুধুমাত্র এক জায়গা থেকে অন্যত্র যাওয়ার করিডর হিসেবে ব্যবহার করে। এক সমস্যা জলপাইগুড়ি শহরেও। ফলে যানজট বাড়ছে।
এই সমস্যা সমাধানে দুই শহরকে ঘিরে দুটি রিং রোড তৈরির কথা বলা হয়েছে। শিবমন্দির থেকে হিলকার্ট রোড ধরে চম্পাসারি, শালুগাড়া ছুঁয়ে ইএম বাইপাস ফুলবাড়ি, রাঙাপানি হয়ে ফের শিবমন্দিরে গিয়ে প্রস্তাবিত রিং রোড মিশবে। ৪৯ কিলোমিটার প্রস্তাবিত এই রিং রোডে মাত্র ২০ কিলোমিটার রাস্তা নতুন করে তৈরি করতে হবে। জলপাইগুড়ির ক্ষেত্রে পাহাড়পুর, রানিনগর, হলদিবাড়ি মোড় হয়ে প্রস্তাবিত ২৯ কিলোমিটার রিং রোডের মধ্যে প্রায় ১৪ কিলোমিটার ইতিমধ্যেই রয়েছে। পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, রিং রোড তৈরি হলে, প্রতিদিন অসংখ্য পণ্যবাহী ট্রাক এবং গাড়ির দুই শহরের ভেতরে ঢোকার প্রয়োজন হবে না। রিং রোড ধরেই গন্তব্যে যাবে।
শিলিগুড়ির ইএমবাইপাস থেকে আমবাড়ি, রংধামালি হয়ে শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি বিকল্প সড়ক তৈরির প্রস্তাবের কথাও পরিকল্পনায় রয়েছে। দুই শহরের ব্যস্ত রাস্তার পুরানো বাসস্ট্যান্ড সরিয়ে, তুলনামুলক ফাঁকা জায়গায় নিয়ে যাওয়া, শিলিগুড়ির জলপাইমোড়ে মহানন্দা নদীতে এবং সেবকের কাছে তিস্তা নদীতে নতুন দুটি সেতু তৈরির প্রস্তাবও রয়েছে। পাশাপাশি দুই শহরের সব রাস্তার সম্প্রসারণ, নিউ জলপাইগুড়ি থেকে হলদিবাড়ি পর্যন্ত রেলের ডবল লাইন তৈরি এবং প্রতি ঘণ্টায় প্যাসেঞ্জার ট্রেন চালানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। জলপাইগুড়ি এবং শিলিগুড়ি লাগোয়া নতুন ট্রাক টার্মিনাল তৈরির প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। শিলিগুড়ি থেকে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে যাওয়ার নতুন রাস্তা, জলপাইগুড়ি শহরের ভেতরের রাস্তা সম্প্রসারণের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
এদিনের কর্মশালায় পুর চেয়ারম্যান ছিলেন না। কর্মশালার শেষে রুদ্রনাথ বলেন, “পুরসভার চেয়ারম্যান থাকলে ভাল হত। ওঁর সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করা যেত।” পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু জানান, তিনি পুরসভার কাজে ব্যস্ত থাকায় প্রতিনিধি হিসেবে পরিষদের সদস্যদের পাঠিয়েছিলেন। |