ঘর ভাঙল দাঁতাল, মারধর বনকর্মীকে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
রাতে হামলা চালিয়ে ৬ টি বাড়ি ভাঙচুর করল একটি দাঁতাল। মঙ্গলবার গভীর রাতে ডাবগ্রাম রেঞ্জের চুটকিয়াভিটা এলাকার কমাতপাড়ায় ঘটনাটি ঘটেছে। হাতির হামলায় ১জন মহিলা গুরুতর জখম হয়েছেন। তাঁকে উত্তরবঙ্গে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। গ্রামে হাতি ঢোকার খবর পেয়েও প্রায় দেড় ঘন্টা দেরিতে বনকর্মীরা গিয়েছেন অভিযোগ তুলে ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা একজন বনকর্মীকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। জখম অবস্থায় ওই বনরক্ষী অসীম পোদ্দারকে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। বনকর্মীকে মারধরের ঘটনায় পুলিশে বন দফতরের তরফে অভিযোগ দায়ের করাও হয়েছে। মারধরের তাঁর ঠোটের নিচে ৪টি সেলাই পড়েছে। রাত সওয়া ৪টে নাগাদ বনকর্মীরা পটকা ফাটিয়ে ভোর রাতে হাতিটিকে বৈকুন্ঠপুর জঙ্গলে ফেরায়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সময় মতো বনকর্মীরা না যাওয়াতেই দাঁতালটি এতগুলি বাড়ি ভাঙচুর করেছে।
বন দফতর এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জখম মহিলার নাম পার্বতী রায়। বছর চল্লিশের ওই মহিলা রাতে বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন। হাতিটি সে সময় হামলা চালায়। ধারার বেড়া দেওয়া ঘর প্রায় ভেঙে ফেলে। স্বামী চাকাতুবাবু ঘুমন্ত পার্বতীদেবীকে তোলার আবসর পাননি। ঘুমের ঘোরে পার্বতীদেবী যখন টের পান ততক্ষণে হাতিটি শুড় দিয়ে তাঁর কোমর ধরে বিছানা থেকে ফেলে দিয়েছে। কাছেই কুপি জ্বলছিল। তা উল্টে লেপে আগুন ধরে যায়। তিনি চিৎকার করলে বাসিন্দারা ছুটে আসে। আগুন, বাসিন্দারা হইচইয়ে দাঁতাল পিছু হটে। বাসিন্দারা মহিলাকে উদ্ধার করেন।
বৈকুন্ঠপুর ডিভিশনে ডাবগ্রাম রেঞ্জের মধ্যে কামাতপাড়া এলাকাটি। ডাবগ্রামের রেঞ্জার সমীর দাস বলেন, “একটি দাঁতাল হামলা চালিয়ে চুটকিয়াভিটা এলাকায় ৬ টি বাড়ি ভাঙচুর করেছে। এক মহিলা জখম হয়েছেন। বন দফতরের তরফে তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।” তবে ক্ষতিগ্রস্তরা সকলেই আবেদন করেননি বলে বন দফতর জানিয়েছে। প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছেন চাকাতুবাবু ছাড়া, সুরেশ রায়, নৃপেন রায়, সাজেন রায়, ফুলেশ্বর রায়, ছবিশ্বর রায়ের বাড়ি ক্ষতগ্রস্ত হয়েছে। বনকর্মীর উপর বাসিন্দাদের হামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বনাধিকারিকরা। সমীরবাবু বলেন, ‘‘গ্রামবাসীদের রক্ষা করতেই বনকর্মীরা গিয়েছিলেন। বাসিন্দারা তাঁদের মারধর করলে মনবল ভেঙে যাবে। তাঁরা কাজ করতে চাইবেন না। তাতে সমস্যা বাড়বে।”
বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাত আড়াইটের পর দাঁতালটি গ্রামে ঢোকে। খাবারের লোভে এলাকার বাসিন্দা সুকেশ রায়, নৃপেন রায়দের ধারার বেড়া দেওয়া রান্না ঘর ভেঙে খাবারের খোঁজ করে। হাতি গ্রামে ঢুকতে উপদ্রব শুরু করার পর খবর দিলেও প্রায় দেড় ঘন্টা পর কয়েকজন বনকর্মী যান। তাঁরা গিয়ে উল্টে বাসিন্দারা হইচই করে হাতিটিকে বিরক্ত করেছে, অন্য দিকে তাড়াচ্ছে বলে দোষারোপ শুরু করে। তাতেই কিছু লোকজন উত্তেজিত হয়ে ওঠে। এলাকার বাসিন্দা বাবলু রায় বলেন, ‘‘বনকর্মীরা সময় মতো এলে ওই বাড়িগুলি ভাঙার আগেই দাঁতালটিকে তাড়ানো যেত। তবে বনকর্মীকে আমরা কেউ মারধর করিনি। তাঁকে কেউ মেরেছে বলে জানা নেই।” হাসপাতালে শয্যাশায়ী জখম বনকর্মী অসীম পোদ্দার জানান, বাসিন্দাদের স্বার্থেই তাঁরা হাতি তাড়াতে গিয়েছিলেন। অথচ তাঁদের একাংশ মারধর করার তিনি ভেঙে পড়েছেন। প্রথমে তারা ৩ জন বনকর্মী যান। পরে আরও ৪ জন আসেন। হাতিটিকে তাড়ানোর সময় পিছ থেকে তাঁর কানের পাশে ঘুষি মারলে তিনি পড়ে যান। তার পর লাথি, ঘুষি মেরেছে বাসিন্দারা। জখম অবস্থায় অপর এক বনকর্মীর ছেলে তাঁকে উদ্ধার করে। |