যাত্রা, বাউল গানে মেলা শুরু মাঘী পূর্ণিমায় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বারাবনি |
মাঘী পূর্ণিমা উপলক্ষে বিভিন্ন মেলায় মেতে উঠেছে খনি শিল্পাঞ্চল।
সোমবার শুরু হয়েছে সালানপুরের মুক্তাইচণ্ডী আনন্দমেলা। চলবে ২ মার্চ পর্যন্ত। প্রতি বছরই মাঘী পূর্ণিমার দিন এলাকায় লোকসংস্কৃতির মেলা বলে পরিচিত এই মেলা শুরু হয়। এ বছর মেলার উদ্বোধন করেন সালানপুরের জিএম অজয়কুমার সিংহ। উদ্যোক্তারা জানান, মঙ্গল থেকে বৃহস্পতি প্রতিদিনই সন্ধ্যায় থাকছে লীলাকীর্তনের আসর। ১ মার্চ থাকবে পরীক্ষিৎ বালার বাউল, আর শেষ দিন ম্যাজিক শোয়ের পর আসর বসবে কবিগানের। ১৯৬৪ সালে অসীমানন্দ সরস্বতীর শিষ্য বাসুদেবানন্দ এই মেলা শুরু করেন। এলাকার বাসিন্দারা জানান, প্রতি বছর একটু করে বাড়তে বাড়তে মেলা এখন উৎসবে পরিণত হয়েছে।
জামুড়িয়ার বীরকুলটিতে আবার মাঘী পূর্ণিমার এক দিন আগে মেলা শুরু হয়। রবিবার মেলা উপলক্ষে বীরকুলটি এককবৃত্ত মেলা মঞ্চ থেকে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, সাম্মানিক, স্নাতকোত্তর এবং গবেষণায় কৃতী ২১ জনকে সংবর্ধনা জানানো হয়। তিন দিনের এই মেলায় প্রতি দিনই থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
মাঘী পূর্ণিমা উপলক্ষে অন্ডালের উখড়ায় খোলসা বাবার দু’দিনের উৎসবও শুরু হয়েছে সোমবার। উদ্বোধন করেন বাঁকোলা এরিয়ার জিএম অভিজিৎ মল্লিক। দু’দিনই বাউল গান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকছে। এই উৎসব নিয়ে জনশ্রুতি আছে যে, ২৫০ বছর আগে এক পঞ্জাবি সাধক তন্ত্রসাধনা করতে উখড়ায় এসেছিলেন। তাঁর নাম ছিল খালসাবাবা, তবে লোকমুখে তিনি খোলসাবাবা নামেই পরিচিত। সিদ্ধিলাভের পর মাঘী পূর্ণিমার দিন থেকে উৎসব শুরু করেন তিনি। |
কুলটির সোদপুরের মেলা।—নিজস্ব চিত্র। |
বারাবনির তেতুলিয়া কন্যাপুরে মাঘী পূর্ণিমার দিন থেকেই পালাকীর্তনের আসর বসে। ১১৩ বছর আগে শেরগড় কনৌজ ব্রাহ্মণসমাজ মাঘী পূর্ণিমা থেকে তিন দিনের এই উৎসবের শুরু করেছিলেন। ১২টি গ্রাম নিয়ে এই মেলা হয়। প্রতি বছর একেকটি গ্রামে মেলা বসে। কুলটির সোদপুরের রামরাজা মেলা এ বার ৬৭ বছরে পড়ল। এই মেলাও মাঘী পূর্ণিমার দিন শুরু হয়। চলে ছ’দিন। এলাকার বাসিন্দারা জানান, লম্বোধর বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে বিহারে এই মেলা দেখে আসেন। এর পরে তিনি ঠিক করেন বাড়িতে রামচন্দ্রের পুজো করবেন। রাম, সীতা, লক্ষ্মণ, ভরত, শত্রুঘ্ন, হনুমান এবং জাম্বুবানের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পুজো শুরু হয়। বছর পাঁচেক হল বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির এই পারিবারিক পুজোকে ঘিরে মাউথডি রামরাজা পুজো কমিটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। প্রথম দু’দিন রামায়ণ গান, তার পর বাউল, আদিবাসীদের অনুষ্ঠান এবং দু’দিনের যাত্রা হয়। গ্রামের শিল্পীরাই যাত্রায় অভিনয় করেন। গ্রামের মানুষ যে যেখানেই থাকুন না কেন এই উৎসবে ফিরে আসেন সবাই। পুজোর তিন দিন অধিকাংশ বাড়িতেই নিরামিষ খাওয়া হয়। |