|
|
|
|
তারাবাজি |
সচিন নিয়ে শেষ কথা বলা যায় না |
তাঁর রেকর্ড ওয় বা পন্টিংয়ের পাশে রাখার মতো ঝকঝকে মোটেও নয়। কিন্তু, তাঁকে, মাইকেল ক্লার্ক্-কে বলা
হচ্ছে গত পঁচিশ বছরের সেরা অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক। গৌতম ভট্টাচার্য-কে সফরকারী
অধিনায়ক বিশেষ সাক্ষাৎকার দিলেন আনন্দplus-এর জন্য |
স্টিভ ওয় বিপক্ষকে দুরমুশ করার জন্য যে নীতি নিয়েছিলেন, তাকে আখ্যা দিয়েছিলেন ‘মেন্টাল ডিসইন্টিগ্রেশন’। অর্থাৎ মাঠে এমন সব উত্তেজিত কথা বলো যাতে তাদের মানসিক বুনোটটাই নড়ে যায়! আপনার পরিচালিত অস্ট্রেলিয়ায় এখনও উগ্র স্লেজিংয়ের খোঁজ নেই। কেন?
আমি ওটায় বিশ্বাস করি না। আমি বিশ্বাস করি, মাঠে অ্যাগ্রেসিভ খেলায়। আবার দিন শেষে বিপক্ষকেই যেন জড়িয়ে ধরে বিয়ারের গ্লাসের দিকে নিয়ে যেতে পারি।
তা হলে কি স্টিভের ব্যাগি গ্রিনের নীতিটাও খারিজ হয়ে গেল? তাঁর যে সিদ্ধান্ত ছিল প্রথম দু’ঘণ্টায় গোটা টিমকে অস্ট্রেলীয় ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে ব্যাগি গ্রিন পরেই নামতে হবে?
সে তো এখনও আমরা বহাল রেখেছি। ফিল্ডিং-এর সময় প্রথম দু’ঘণ্টা ব্যাগি গ্রিন মাস্ট। সবাইকে পরতেই হবে।
কিন্তু শেন ওয়ার্নের নেতৃত্বে একটা গ্রুপ যে সেই স্টিভের আমলেই বিদ্রোহ করেছিল যে কোন টুপি পরে নামব, ক্যাপ্টেন ঠিক করবে কেন। তার আঁচ পরবর্তী কালে আপনাকে ক্যাপ্টেন হিসেবে পোয়াতে হয়নি?
(দৃঢ় গলা) সিদ্ধান্তটা খুব পরিষ্কার। ব্যাগি গ্রিন আমাদের ক্রিকেটের গর্বের প্রতীক। ওটা প্রথম দু’ঘণ্টা পরতেই হবে। তার পর আর জোর করার মানে হয় না। কেউ যদি মনে করে সারা দিন ওটা পরে থাকলে তার গরম লাগবে। সে তা হলে হাওয়া খেলে যেগুলোতে সেই ফ্লপি টুপিতে চলে যেতেই পারে। ব্যাগি গ্রিন নিয়ে কড়াকড়ির সময় এটাও সত্যি ভেবে দেখা উচিত যে উপ-মহাদেশে এখন এত বেশি খেলতে হয়। হাওয়া খেলানো টুপি যদি কেউ পরতে চায় তার সুবিধের দিকটাও বিবেচনা করা উচিত।
কিন্তু আপনিই তো জীবনে প্রথম সেঞ্চুরির আগে হেলমেট খুলে ব্যাগি গ্রিন আনিয়ে ছিলেন ড্রেসিংরুম থেকে। এই পর্যায়ের রোম্যান্টিসিজম স্টিভও দেখাননি যে এক দিকে কুম্বলে বল করছেন। আর এক দিক থেকে ইন্ডিয়ান মিডিয়াম পেসার। তখনও যে কেউ হেলমেট খুলে ফেলতে পারে। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে ঘটনাটা দেখে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল সবাই।
আরে তখন বয়স অনেক কম ছিল। অনেক ইম্প্র্যাকটিক্যাল ছিলাম বলে মনে হয়। সেই কবে বাবাকে বলেছিলাম, একদিন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলব। আর যখন জীবনের ফার্স্ট টেস্ট সেঞ্চুরি করব, তখন আমার মাথায় থাকবে ব্যাগি গ্রিন। এগুলো শৈশবের আবেগ ভরা ভাবনা। বাস্তবে গিয়ে বিশেষ দাম থাকে না। |
|
মাইকেল ক্লার্ক |
পরবর্তী কালে আর কখনও সেঞ্চুরি-ট্রিপল সেঞ্চুরির আগে হেলমেট খোলেননি?
নাঃ (হাসি)। এখন দু’দিকে স্পিনার থাকলেও আমার হেলমেট পরা থাকে। এখন বয়স বেড়েছে তো (হাসি)!
এই দাপুটে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট টিমকে দেখে কারও বোঝারই উপায় নেই আপনার নেতৃত্বে যে কী শুরুতেই কালো দিন হাজির হয়েছিল! কেপটাউনে ৪৭ অল আউট
হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া! যাকে আখ্যা দেওয়া হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের লজ্জাকর দিন হিসেবে!
একটা কথা বলি, জীবনের সব চেয়ে অন্ধকার সময়েই মানুষ তার সব চেয়ে উপকারী শিক্ষাগুলো পায়। আমি যখন টেস্ট টিম থেকে বাদ পড়ি, তখন সেটা মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা ছিল। পরে কিন্তু মনে হয়েছিল, যা যা শেখার ছিল এই সময়টাতেই সেগুলো শেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। একই ভাবে আমাদের টিমটাও পিছনে তাকিয়ে এখন ভাবে, কেপটাউনটাই টার্নিং পয়েন্ট ছিল! ৪৭ রানের সেই মহা অসম্মানের পর গোটা টিম আমরা মিটিংয়ে বসে ছিলাম। ওখানেই কথা হয়েছিল, কী কী ভুল আমরা করে যাচ্ছি। কোন কোন জায়গায় আমাদের তাড়াতাড়ি বদলাতেই হবে। কেপটাউন আমাদের বুঝিয়েছিল, মাত্র কয়েক ঘণ্টায় কী ভাবে পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে! শিখিয়েছিল কোনও কিছুকে নিশ্চিত বলে ধরে নিতে নেই। লাগাতার পড়ে থাকতে হয়। এমন নয় যে আমরা জানতাম না। কিন্তু ৪৭ রানের ধাক্কাটা দরকার ছিল।
৪৭ অল আউট থেকে গতবারের সিরিজে ভারতকে ৪-০ গুঁড়িয়ে দেওয়া! কী চমকপ্রদ ছিল অজি টিমের উত্থান। যেখানে সবাই ভেবেছিল সচিনের ভারত হাওয়া
করে দেবে আপনাদের!
দেখুন ভাই, আমরা ৪-০ জিতেছিলাম ঠিকই। স্কোর বোর্ড বোঝাতে পারবে না প্রথম দু’টো টেস্টে কী প্রচণ্ড লড়াই হয়েছিল। পিছন ফিরে মনে হয় আমরা নিজেদের মধ্যে জেতার খিদেটা সমবেত ভাবে জাগাতে পেরেছিলাম। এটা একজন-দু’জনের মধ্যে জাগলে হত না। পয়েন্ট নম্বর টু আমাদের ট্রেনিংটা তুখোড় হয়েছিল। তিন, প্ল্যান সব কিছু খেটে গিয়েছিল।
সেটা না-ও হতে পারত। |
রিকি-সচিন এই টাইপের প্লেয়াররা
যখন টিমে থাকে তখন তারা একটা
কর্মসংস্কৃতিও তৈরি করে দেয় |
আমি যখন টেস্ট টিম থেকে বাদ পড়ি, তখন সেটা মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা ছিল। পরে কিন্তু মনে হয়েছিল, যা যা শেখার ছিল এই সময়টাতেই সেগুলো শেখার সুযোগ পেয়েছিলাম |
|
ভারত যখন অস্ট্রেলিয়া সফর করছিল, তখন পারথ টেস্ট চলাকালীন তেন্ডুলকরের ব্যর্থতার পর পরই নীল হার্ভি মন্তব্য করেছিলেন, ‘সচিনের মুভমেন্ট সামান্য স্লো হয়েছে। আর সেকেন্ডের ভগ্নাংশের ওইটুকুর হেরফেরই ব্যাটসম্যান সচিনকে নামিয়ে দিচ্ছে।’ আপনি একমত?
(মুখ সামান্য গম্ভীর) আমি মনে করি না। সচিনের পর্যায়ের ক্রিকেটারকে নিয়ে শেষ কথা বলা যায় বলে আমি কখনও মনে করি না। এরা সব সময়ই আপনাকে বিস্মিত করার জন্য তৈরি থাকে। আমি যা দেখেছি গত দশ বছরে সচিনই সেরা! হ্যাঁ (একটু ভেবে) ওর চেয়ে ভাল কাউকে দেখিনি।
অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক হিসাবে আপনার বৈশিষ্ট্য কী? মানে কোন কোন জায়গায় আপনি ইতিমধ্যে ছাপ ফেলেছেন বলে মনে করেন?
আমি বিশ্বাস করি প্রস্তুতিতে। নিবিড় প্রস্তুতিতে। আমি বিশ্বাস করি সমবেত ভাবে গতকালের চেয়ে আজ উন্নতি করায়। আমি বিশ্বাস করি প্রতিনিয়ত এক্সেলেন্সকে তাড়া করায়। মনে হয় সেটা গ্রুপকে বোঝাতে পেরেছি।
একটা জিনিস জানতে কৌতূহলী। রিকি পন্টিংকে আপনি সামলেছিলেন এমন সময়ে যখন পন্টিং প্রচণ্ড চাপে। রান পাচ্ছেন না। টিম খারাপ খেলছে। যখন পন্টিংয়ের ঘনিষ্ঠতম সাংবাদিক পর্যন্ত লিখছেন, “ওহে রিকি তোমার সময় শেষ।” তখন ওঁকে সাপোর্ট করে আপনি সেরাটা বার করে নিয়েছিলেন কী করে?
রিকিকে আমি ভিতর থেকে শ্রদ্ধা দেখিয়েছিলাম। সেটার যথেষ্ট সম্মান ও নিজেও করেছিল। আসলে লোকে বুঝতে চায় না, রিকি-সচিন এই টাইপের প্লেয়াররা যখন টিমে থাকে তখন তারা একটা কর্মসংস্কৃতিও তৈরি করে দেয়। ড্রেসিংরুমে যেটা ভীষণ দরকার। লোকে শুধু গ্রেটদের রান আর উইকেট দিয়ে হিসেব করে। বোঝে না মাপতে হয় গোটাটা দিয়ে। এদের মাপা উচিত রান আর সাংস্কৃতিক রানের যোগফল দিয়ে! তাতেও পুরোটা ধরা যায় না! |
|
|
|
|
|