|
এ ব্যথা কী যে ব্যথা
এ ব্যথা সারানো অবশ্যই যায়। হোক না ঘাড় বা কোমর।
হদিশ দিলেন ফিটনেস বিশেষজ্ঞ চিন্ময় রায় |
|
ঘাড়ে কী কোমরে ব্যথা তো এখন রোজনামচা বলা চলে।
অফিস হোক কী স্কুল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাড় গুঁজে কাজ করার জের যে কী মারাত্মক আকার নিতে পারে তা তো ভুক্তভোগীরাই জানেন।
রেহাই পাওয়ার উপায়টা তা হলে ঠিক কী? সেই গতে বাঁধা ডাক্তার দেখানো, ওষুধের ওপর ভরসা করে কাটিয়ে দেওয়া? না কি ফিটনেস বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া?
ব্যথামুক্তির উপায় জানতে গেলে অবশ্যই জেনে নেওয়া দরকার কী কী কারণে মেরুদণ্ডের এই ব্যথা হয়। |
মেরুদণ্ড থাক টানটান |
অফিসে হোক বা বাড়িতে, যখনই আমরা কম্পিউটারের সামনে কাজ করতে বসি তখন আমাদের শরীরের ভঙ্গিমাটাই যেন বদলে যায়। আর এই বদলানো দিয়েই শুরু হয় যত বিপত্তি। আমাদের মেরুদণ্ডটা আসলে ইংরেজি ‘এস’ অক্ষরের মতো। কিন্তু যে ভঙ্গিতে বসে আমরা কাজ করি, তাতে মেরুদণ্ড বেশির ভাগ সময়ই গোল আকার ধারণ করে। এতে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের ডিস্কের ওপর। হতে পারে কোমরের ‘ডিস্ক প্রোল্যাপস’। যার মানে সোজাসুজি দাঁড়ায় কোমরের দারুণ যন্ত্রণা।
শরীরের ভঙ্গিমা বা ‘পস্চার’ ঠিক রাখতে তাই বিশেষ ভাবে সতর্ক হতে হবে। যখনই চেয়ারে বসবেন, চেষ্টা করবেন পিঠ টানটান অবস্থায় রাখতে। মেরুদণ্ডের আকার ঠিক থাকছে কি না তা একটা ছোট্ট পরীক্ষার মাধ্যমে বুঝে নিতে পারেন আপনি নিজেই। চার ফুটের একটা লাঠি নিয়ে দু’হাতে পিঠের ওপর এমন ভাবে ধরুন যাতে লাঠির ওপরের অংশ আপনার মাথা ছুঁয়ে থাকে। দ্বিতীয় অংশটা যেন স্পর্শ করে থাকে ঘাড়ের নীচে পিঠের ওপরের অংশ। আর তৃতীয় অংশটিকে ঠিক কোমর ছুঁয়ে থাকতে হবে। এ ভাবে সামনের দিকে ঝুঁকলে যদি লাঠির অংশ আপনার শরীরের বিশেষ অংশগুলো ছুঁয়ে থাকে তা হলে বুঝবেন আপনার মেরুদণ্ড একদম টানটান আছে। যদিও বেশির ভাগ সময়ই সেটা হয় না।
তাই কম্পিউটার হোক কী চেয়ার, যখনই বসবেন চেষ্টা করবেন সোজা হয়ে বসতে। ঘাড় ঝোঁকালেই বিপদ।
|
|
ওজন থাকুক কাঁধও বাঁচুক |
ভারী ওজন দীর্ঘ সময় এক কাঁধে নিয়ে রাখাটা যেন একটা অভ্যেসের মধ্যেই পড়ে গিয়েছে অনেকের। যেমন কাজে বেরোনোর সময় প্রতিবারই নিয়ম করে ল্যাপটপের ভারী ব্যাগটা আপনি এক কাঁধেই নেন। এতে আপনার অজান্তেই বিপত্তি ঘটে যায়। হতে পারে স্কোলিয়োসিস-এর মতো দীর্ঘমেয়াদি অসুখ। মেরুদণ্ড বেঁকে যায় এই অসুখে।
তাই ভারী কিছু কাঁধে বইবার সময় খেয়াল করে কাঁধ পাল্টান। যদি ল্যাপটপ নিয়ে বেরোতে হয় তা হলে সঙ্গে নিন পিঠে নেওয়ার ল্যাপটপ ব্যাগ। আজকাল বিভিন্ন কোম্পানি এই সমস্যাগুলোর কথা চিন্তা করে পিঠে নেওয়া ল্যাপটপ ব্যাগই বাজারে নিয়ে আসছে। নিয়মিত ভাবে করুন শক্তি বাড়ানোর ওয়ার্ক আউটও। যেমন এক হাতে রোয়িং (জলের বোতল নিয়ে বা ডাম্বেল হাতে), এক হাতে সাইড বেন্ড। এতে আপনার যে দিকের কাঁধ ভারী ওজন নিতে নিতে ঝুঁকে গিয়েছে, তার উল্টো দিকের কাঁধের পেশিগুলোর শক্তি বেড়ে যাবে অনেক। |
হাই হিল যখন ডেভিল |
হিল জুতো ছাড়া আবার স্টাইল হয় না কি! এ রকম ভাবতে যে সব মহিলা অভ্যস্ত, তাঁরা এ বার একটু অন্য রকম ভাবুন। হিল পরে অনেকটা সময় দাঁড়িয়ে থাকলে বা হাঁটলে ‘পেলভিস বোন’ এক দিকে হেলে যায়। পোশাকি ভাষায় যাকে বলে ‘অ্যান্টেরিয়র টিল্ট’। এতে মেরুদণ্ড সাংঘাতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এই সমস্যা থেকে বাঁচতে গেলে হিল পরা একদম কমিয়ে দিতে হবে। আর যাঁদের ইতিমধ্যেই বিপদ ঘটেছে, তাঁদের করতে হবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কোর এক্সারসাইজ। প্ল্যাঙ্ক, বার্ড ডগ, ব্রিজ হোল্ড-এর মতো এক্সারসাইজগুলো করলে মেরুদণ্ড নিউট্রাল অবস্থায় এসে যাবে। বিপদ অনেকটাই কেটে যাবে তখন। |
বসুন কম চলাফেরা করুন বেশি |
অনেকেই আছেন যাঁরা বেশির ভাগ সময়টাই বসে কাটান। এঁদের কোর পেশি খুব দুর্বল হয়ে গিয়ে মেরুদণ্ডের ক্ষতি করে। কোর পেশিকে শক্তিশালী না করতে পারলে এঁদের সমস্যা কিন্তু কিছুতেই যাবে না।
তাই ছেলেমেয়ে উভয়ই করতে পারেন নিয়মিত ভাবে প্ল্যাঙ্ক, ডেড বাগ, কোবরা রেইজের মতো ওয়ার্ক আউট। দিন পনেরো করার পর অভ্যস্ত হয়ে গেলে এই ওয়ার্ক আউটগুলোই করতে পারেন স্যুইস বলের ওপর।
এতে শুধু আপনার কোর পেশিগুলোই শক্তিশালী হবে না, শরীরের ‘পসচার’ও ভাল হবে। |
ভুঁড়ি মানেই বাড়াবাড়ি |
যাঁদের ওজন বেশি, ভুঁড়ি আছে, তাঁদেরও মেরুদণ্ডে হতে পারে নানা অযাচিত সমস্যা। শরীরের মধ্যবর্তী অংশ বেশি স্ফীত হলে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের ওপর।
এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে করুন ওজন নিয়ে ব্যায়াম। সপ্তাহে তিন দিন, ১০-১২ বার ডাম্বেল নিয়ে স্কোয়াট করুন। পরে তিন বার রিপিট করুন। তিন দিন করতে পারেন বিরতিমূলক কার্ডিও, যেমন এক মিনিট জগিং আর এক মিনিট হাঁটা।
এতেই হয়ে যেতে পারে ম্যাজিক।
ব্যথার কথা তাই ভুলে যান। নিয়মিত ভাবে কিছু কোর এক্সারসাইজ বা ফ্রি-হ্যান্ড, স্ট্রেচিং করে ব্যথাকে করে দিন ক্লিন বোল্ড। জীবন হোক ব্যথামুক্ত।
|
টিপস |
• ঘাড়ে বা কোমরে ব্যথা মানে আসলে কিন্তু মেরুদণ্ডের ব্যথা। তাই শুধু ওষুধের ওপর ভরসা না করে করুন কোর এবং স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ। এতে উপকার হবে আপনারই।
• অফিসে দীর্ঘক্ষণ ডেস্কে কাজ করার ফাঁকে মাঝে মাঝে উঠে পায়চারি করুন। করুন সহজ কিছু স্ট্রেচিং এক্সারসাইজও। এতে কাঁধ বা পিঠের আরাম হবে। কাজে আসবে গতি।
• বেশিক্ষণ বসে থাকার ফলে পায়ের হ্যামস্ট্রিং পেশি সঙ্কুচিত হয়ে যায় যা ক্ষতি করে মেরুদণ্ডেরও। তাই হ্যামস্ট্রিং পেশিকে ঠিক রাখতে গেলে স্ট্রেট লেগ রেঞ্জ করতে হবে।
• যে কোনও ভারী ওজন তোলার সময় খেয়াল রাখুন ওজনটা যেন শরীরের কাছাকাছি থাকে। মেরুদণ্ডের আকার ঠিক থাকলে যত ভারী ওজনই হোক তুলে নিতে পারবেন।
• চেয়ারে বসে থাকার সময় মেরুদণ্ড যেন টানটান অবস্থায় থাকে। অযথা মেরুদণ্ড বেঁকাবেন না। এতে মেরুদণ্ড গোলাকার
হয়ে ডিস্কের ওপর চাপ পড়ে। যার থেকে হতে পারে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা।
• মেরুদণ্ড ঠিক রাখতে বাড়িতেই জলের বোতল বা ডাম্বেল হাতে রোয়িং, কোবরা রেইজের মতো ওয়ার্ক আউট করে নিতে পারেন।
• মেরুদণ্ডের ব্যথা কমাতে গিয়ে ভুল ওয়ার্ক আউট করবেন না। ভাল কোনও ফিটনেস বিশেষজ্ঞের থেকে পরামর্শ নিয়ে সঠিক নিয়ম মেনে করুন ওয়ার্ক আউট বা ব্যায়াম। |
|
|