|
|
|
|
হুল্লোড় |
ছোট থেকেই বিবাহিত নারীদের প্রেমে পড়ি |
পরিচালক কিউ-এর সঙ্গে সাতাশ বছরের বন্ধুত্বের ইতি। কেন? টলিউডের
অন্যতম ব্যস্ত সুরকার ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের মুখোমুখি প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত |
আপনি হঠাৎ রাগী চিরদীপ থেকে শান্ত ইন্দ্রদীপ হয়ে গিয়েছেন কেন? না না। রাগ নেই তা নয়। আমি আজকাল সহজে কিছুতেই রিঅ্যাক্ট করি না।
হঠাৎ এই বদলটা কেন? ৪ এপ্রিল ২০১১। আমার মেজদা চলে গেলেন সে দিন। তার পরেই এটা হয়েছে। লিভারের অসুখে মারা যান মেজদা। মাত্র সাতচল্লিশ বছর বয়সে। তা ছাড়া সেই ২০০৭ থেকে একা থাকি। এত দিনে আমার মধ্যে ‘সেন্স অফ ডিটাচমেন্ট’ এসে গিয়েছে।
‘ডিটাচমেন্ট’ ঠিক আছে, কিন্তু কী দেখলে রাগ হয়? ম্যানিপুলেশন। সামনে মিষ্টি সেজে পিছনে ছুরি মারা। নিজের কাজের সুবিধার জন্য অন্য কাউকে ছোট করা।
নিজের পেশাতে এটা কত বেশি সহ্য করতে হয়? শুধু পেশার ক্ষেত্রেই নয়। সর্বত্রই দেখতে পাই। নিজের ক্ষমতার উপর ভরসা বা বিশ্বাস কম রেখে প্রচণ্ড ভাবে পিআর-এর উপর জোর দেওয়া বা এই ধারণা পোষণ করা যে পিআর করেই ভাল কাজ জোগাড় হবে এই সব তো প্রায়ই দেখি।
তখন কি প্রতিবাদ করেন? আমি নিজের পথে চলি। যারা এ সব করে তাদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখি। এমনিতেই আমি খুব কম মিশি।
|
|
ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত ও তাঁর সুর করা তিনটে ছবি |
|
|
|
‘লে ছক্কা’
|
‘জানি দেখা হবে’ |
|
সাফল্য চারদিকটা অনেক বদলে দেয়। পিছন ফিরে দেখতে কেমন লাগে? যখন কেরিয়ার শুরু করেছিলাম, তখন অনেককে ফোন করতাম নিজের কাজটা শোনানোর জন্য। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কেউ পাত্তা দিত না। এক জন পরিচালক আমাকে বলেছিলেন যে আগামী তিন বছরে, আমার সুর শোনার সময় তাঁর নেই!
আজ তিনি কোথায়? কোনও কাজ নেই তাঁর হাতে।
দেখা হলে কী বলবেন তাঁকে? একটা প্রণাম করব। আমি নতুন সুরকারদের গান শোনার চেষ্টা করি। অনেকে তাঁদের কাজ মেল করেন। আমি মনে করি যদি কেউ কিশোর কুমার না হন, তা হলে তাঁর অন্যদের কাজ শোনার মতো সময় থাকবেই।
পরিচালক কিউ-এর সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণ কী? জীবনে সম্পর্ক তৈরি হয়, থাকে, আবার ভাঙে। আমাদের মধ্যে তিনটেই হয়েছে।
আজ কিউ প্রতিষ্ঠিত। আপনিও। তা হলে সম্পর্কটা ভাঙল কেন? আমি আর কিউ একসঙ্গে থাকতাম। যখন ও প্রথম ‘তাসের দেশ’ করবে বলে ঠিক করে, তখন আমার সেটা করার কথা ছিল। ও হয়তো তার পর ভেবেছিল যে আমার চিন্তাধারা মিলবে না ওর ছবির গানের চাহিদার সঙ্গে। তবে এটা ওর আমাকে নিজে বলা উচিত ছিল। এ ভাবে এড়িয়ে যাওয়া ঠিক হয়নি। আমি কাগজ পড়ে জানতে পারি যে আমি মিউজিকটা করছি না। এই ম্যানিপুলেশনটা ঠিক নয়। যখনই ‘তাসের দেশ’ নিয়ে কথা বলতে গিয়েছি ও মিউজিক নিয়ে কথা বলতে চায়নি। আমাদের যা সম্পর্ক ছিল তাতে কিন্তু এটুকু ওর আমাকে বলে দেওয়া উচিত ছিল যে, আমাকে এই ছবিতে দরকার নেই।
|
‘চ্যাপলিন’ |
‘তাসের দেশ’এর মিউজিক শুনেছেন? নীল কাজ করেছে শুনেছি। মিউজিকটা নিশ্চয়ই ভাল হবে। আমার শুভেচ্ছা রয়েছে ওদের জন্য। তবে ২৮-২৯ বছর ধরে একটা বন্ধুত্ব ছিল কিউ আর আমার। সেটা আর নেই। স্বচ্ছতা না থাকলে কীসের বন্ধুত্ব বলুন তো? আই প্রেফার গ্রেট হিউম্যান বিয়িং টু ট্যালেন্টেড ডিরেকটর।
আজকাল সুরকারদের তো রমরমা। সেটা ভাল লাগে নিশ্চয়ই? ইন্ডাস্ট্রিতে গায়কদের নিয়ে বড্ড বেশি মাতামাতি হয়। সেই তুলনায় যারা গানটা লেখেন, সুর করেন, সাউন্ড ডিজাইন করেন তাঁদের নিয়ে কোনও কথাই হয় না। একটা ভাল গান বানাতে গেলে গায়ক, লেখক, সুরকার এঁদের সবার মিলিত কৃতিত্ব ৭৫ শতাংশ। বাকিটা মিউজিশিয়ান আর সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার-এর। অংশুমান বলে ছেলেটি কী সুন্দর গান লেখে। তাকে নিয়ে তো মাতামাতি হয় না! সৌভিক মিশ্র, প্রসেনরাও ভাল। পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় ভাল গান লেখেন। সেটা ক’জন জানে?
আপনার গান হিট হলে কি জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, অনুপম রায়, দেবজ্যোতি মিশ্রর কাছ থেকে এসএমএস পান? হ্যাঁ পাই। দেবুদা আমার বড় দাদার মতো। জিৎ মার্কেটের পাল্সটা ভাল বোঝে। ওর ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’ ছবির কাজ দারুণ লেগেছে। ওটা আমার শোনা ওর শ্রেষ্ঠ কাজ। তার পর ‘প্রেম আমার’এর টাইটেল ট্র্যাক ‘জাগেরে জাগে’, ‘পাগলু’ গানটা ভাবুন। সুরের তেমন জোর না থাকলেও একটা ‘স্ট্রিট স্মার্ট এজ’ রয়েছে। মিকাকে দিয়ে জিৎ দারুণ গাইয়েছে। আমি ওই ক্যাওড়ামিটা আমার গানে চেষ্টা করব না। অনুপমের ‘ল্যাপটপ’ ছবির ‘প্রোমো সং’টা শুনেছেন? নিঃশব্দতা নিয়ে কী সুন্দর কাজ! একা বসে শুনলে বেশ লাগে। আমার ওর ‘গভীরে যাও’ গানটা দারুণ লেগেছে। তবে ‘যে কটা দিন’ গানটা অত পছন্দের নয়। আর এক জনের নাম অবশ্যই বলব। প্রবুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায়। ওয়েস্টার্ন মিউজিকের উপর কী দখল। ওর সুর বা সাউন্ড ডিজাইনে বুদ্ধির ছাপ আছে। আমার খুবই পছন্দের।
রাঘব চট্টোপাধ্যায়কে দিয়ে এত হিট অ্যালবাম করালেন। সিনেমার গানে ওঁকে ব্রাত্য করে রেখেছেন কেন? রাঘব দক্ষ গায়ক। তবে সিনেমার গানে আমি যে অ্যাটিটিউডটা চাই সেটা হয়তো পাই না।
প্রীতম বলেছেন যে সুরকাররা সিনেমাতে গাইলে যদি তাঁদের খারাপ লাগে, তা হলে গায়কদের উচিত অভিযোগ না করে নিজেদের গানের সুর করা। আপনিও কি একমত? এটা কিছুটা রাগের কথা... প্রীতম নিজে কিন্তু একটাও গান গায় না। সঙ্গীত পরিচালকেরা আগেও গেয়েছেন, আজও গাইছেন, কালও গাইবেন। যদি তাঁরা গায়ক হিসেবে দক্ষ হন।
নিজের সুরের ব্যাঙ্ক করছেন আপনি? ব্যাঙ্ক নেই। কিছু সুর আছে। সেগুলো তৈরি হয়েছিল যখন ছোটবেলায় সারাদিন গিটার নিয়ে কাটাতাম। সুর বানানো পুরোটাই একটা জৈবিক প্রক্রিয়া। তবে বলতে দ্বিধা নেই আজকাল সুর করায় আমার প্যাশন কম, স্বভাব বেশি। আমার প্যাশন হল মানুষ হিসেবে উন্নত হওয়া। মিউজিক তো আমার মুখ, মাথা, হাত, পা। এরা আমার প্যাশন হতে পারে না। এরা আমার অংশ। আমার সঙ্গে ভাঙে-গড়ে।
বাজারি গান বানাতে হয় বলেই কি এমন অনুভূতি? বাজে কাজ এড়িয়ে যাওয়ার স্বাধীনতা আছে? আছে। তবে সেটা ব্যবহার করা হয় না। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই আমার কাছে ভাল লাগার মতো কাজ আসে। তবে হ্যাঁ, সঙ্গীত আমার জীবনের একটা প্রধান অঙ্গ। তবে প্যাশন নয়। আমি অন্য যে কারও তৈরি ভাল মিউজিকের ব্যাপারে প্যাশনেট।
আর কী কী প্যাশন আছে আপনার? আমার তিনটে ‘টার্ন অন’ ফ্যাক্টর আছে। সোজাসাপটা কথাবার্তা। সুন্দর চোখ। আর নিষ্পাপ শিশু।
বিয়ে করেননি। বাচ্চারা ‘টার্ন অন’ ফ্যাক্টর। দত্তক নেবেন? অবশ্যই। সে আমি একা থাকি বা দোকা। দত্তক আমি নেবই। একটা মেয়ে দত্তক নিতে চাই।
|
আমি
• বয়স: ৪১
• জনপ্রিয় গান: ‘জানি দেখা হবে’, ‘আলি মওলা’, ‘চাঁদ কেন’, ‘বোঝে না সে বোঝে না’, ‘পত্তো কা’
• আগামী ছবি: ‘হনুমান ডট কম’, ‘মিশর রহস্য’, ‘অভিশপ্ত নাইটি’, ‘প্রলয়’, ‘আসছে বছর আবার হবে’, ‘হাওয়া বদল’, ‘মিসেস সেন’
• যাদের ছাড়া চলে না: লুচি, পায়েস (আমার দুই পোষা কুকুরের নাম) |
|
কেরিয়ারে তো থিতু হয়েছেন। তা বিয়ের কথা ভাবেননি কখনও? আগে বিয়ে করলে বৌকে কী খাওয়াতাম? (হাসি) আমার একা থাকতে বেশ ভাল লাগে। রোজ প্রেমে পড়ি। আমার ছোট থেকেই বিবাহিত মহিলাদের বেশি ভাল লাগে। প্রথম প্রেম ষোলো বছর বয়সে। বন্ধুর বৌদির সঙ্গে। হয়তো বিবাহিত মহিলাদের ভাল লাগে তাদের পরিণতমনস্কতা বা ‘পয়েজ’-এর জন্য। কারণটা জানি না।
বিবাহিত মহিলার সঙ্গে পুরোদস্তুর প্রেম করেছেন? অ্যাফেয়ার না। বন্ধুত্ব হয়েছে। তার মধ্যে হালকা প্রেম প্রেম ভাব। একটু ঠেললেই অ্যাফেয়ার হয়! তবে একমাত্র বন্ধুত্বই থাকে। বাকি সব ফিকে হয়ে যায়।
কোনও মহিলাকে প্রেম নিবেদন করে অপমানিত হয়েছেন কখনও? অপমানিত হইনি। প্রেম করেছি। তবে মাঝে মধ্যে বলেছে, “ইউ আর সো আগলি লুকিং।” আমি সঙ্গে সঙ্গে বলতাম ‘বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট’। একটা সম্পর্ক ফিকে হয়ে যাওয়ার ঠিক আগের স্টেজে
কোন গানটা সুর করেছিলেন? সব অ্যালবামের গান। রাঘবের ‘তোমার চোখে আমি আমার মরণ দেখেছি’। রূপঙ্করের ‘আজ আকাশ ভেঙে পড়ল আমার ঘরে’।
আর এই ‘হবে হবে’ ফেজ-এ? আমি আমার সব থেকে ভাল সুর ‘নো স্ট্রিংজ অ্যাটাচড্’ ফেজে করেছি। তখন প্রেম তুঙ্গে। কিন্তু কমিটমেন্ট নেই। ‘চাঁদ কেন’র সময় আমার জীবনে কোনও প্রেম ছিল না। কৌশিকীকে দিয়ে গাওয়ানো ‘পত্তো কা’র সময়ও তাই। ‘বোঝে না সে বোঝে না’ আমার জীবনের সব নালিশ মিলিয়ে তৈরি। কিছু আগেকার। কিছু আজও রয়েছে।
প্রেম না কামনা কোন অনুভূতি আপনাকে ভাল সুরকার তৈরি করে? আমি খুব কামনাপ্রবণ নই। প্রেমে পড়লে সব থেকে ভাল সুর হয়। কামনা আমার কাছে অনেক পরে আসে। আজকাল আমি আগের থেকে অনেক বেশি পরিণত। আমি কল্পপ্রেমিক।
তা এখন মনে কোন অনুভূতিতে স্নাত আপনি ফিকে না ফাঁকা? ফাঁকা। ভেকেন্সি আছে। |
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল |
|
|
|
|
|