চাকরির আবেদনের সময়ে জাল ‘সিএ’ সার্টিফিকেট দেওয়ার অভিযোগে গৌড় বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স অফিসার জাহির হোসেনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের হল। উপাচার্য অচিন্ত্য বিশ্বাসের নির্দেশে মালদহের ইংরেজবাজার থানায় ওই অভিযোগ দায়ের করেছেন রেজিস্ট্রার বিকাশ মুখোপাধ্যায়। পুলিশ অভিযুক্ত ফিনান্স অফিসারের বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির ৪৬৮, ৪৭১, ৪২০ জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করেছে। পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত যে সংস্থা থেকে কস্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন বলে দাবি করেছেন, তার কোনও হদিস মেলেনি বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। যদিও অভিযুক্ত জাহির হোসেনের দাবি, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মামলা রুজু হয়েছে। অভিযুক্তকে গ্রেফতারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।”
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদহের এক শিক্ষাবিদ রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন, বাম আমলে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় যোগ্য প্রার্থীদের বঞ্চিত করে জাল সার্টিফিকেট ধারী জনৈক জাহির হোসেনকে ফিনান্স অফিসারপদে নিয়োগ করা হয়েছে। অভিযোগ পাওয়ার পর শিক্ষামন্ত্রী তদন্তের নির্দেশ দেন। এর পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অভিযুক্ত ফিনান্স অফিসারকে ৫ ফেব্রুয়ারি ছুটিতে পাঠিয়ে তদন্ত কমিটি করে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্তের নির্দেশ দেন।
তদন্তে দেখা যায়, যে সংস্থার সিএ সার্টিফিকেট জমা দেওয়া হয়েছে, তার বাস্তবে কোনও হদিস নেই। তদন্তে আরও জানা যায়, যোগ্য প্রার্থীদের বঞ্চিত করে তদানীন্তন কাউন্সিলের সদস্যদের একাংশকে প্রভাবিত করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে। যদিও তৎকালীন কর্মসমিতির সদস্য তথা সিপিএম নেতা সাদিকুল ইসলাম বলেছেমন, “সিলেকশন কমিটির দায়িত্ব আবেদনকারীর দেওয়া নথিপত্র যাচাই করে নেওয়া। সেটা টিক মতো করা হলে এমন হওয়ার কথা নয়। এখন আইন আইনের পথে চলবে।”
ঘটনায় গৌড় বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীদের অনেকেই আশ্বস্ত। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সংগঠনের সম্পাদক সনাতন দাস বলেন, “আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত শিক্ষকরা জাল সার্টিফিকেটধারী ফিনান্স অফিসারকে বরখাস্ত করার দাবি দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছি। এতদিন পরে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যাই হোক আমরা খুশি।”
দুর্নীতির অভিযাগ নিয়ে তদন্তে গতি আনতে উপাচার্য উদ্যোগী হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী মহলেও স্বস্তির নিশ্বাস পড়েছে। ছাত্রছাত্রীদের অনেকেরই অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। উপাচার্য কঠোর মনোভাব দেখালে আখেরে ছাত্রছাত্রীদেরই লাভ হবে বলে তাঁরা মনে করেন। অচিন্ত্যবাবু বলেন, “তদন্ত কমিটি খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পেরেছে ফিনান্স অফিসার যে সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছেন, তার মধ্যে জাল সার্টিফিকেটও রয়েছে।” |