কোথাও স্কুলের পাশের মাঠে বসে উত্তর লিখে পাথরে মুড়ে পাঁচিলে উঠে তা পরীক্ষার হলে ছুড়ে দেওয়া হয়েছে। আবার কোথাও দেওয়াল বেয়ে কার্নিশে উঠে ঢিলের মধ্যে উত্তর লিখে পরীক্ষার্থীর কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা হয়েছে। সোমবার পাহারায় থাকা পুলিশের সামনেই মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্রের মধ্যে এমন নকলের ঘটনা ঘটল উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর মহকুমা সহ কয়েকটি এলাকার স্কুলে। গোয়ালপোখরের মণিভিটা স্কুলে টোকাটুকি রুখতে গেলে পুলিশের সঙ্গে একদল যুবকের হাতাহাতি হয়। ৩ পুলিশকর্মী জখম হন। ১৬ জনকে টুকলি সরবরাহের অভিযোগে গ্রেফতার করা হলে পরিস্থিতি আয়ত্তে আসে। দিনের শেষ গোটা উত্তর দিনাজপুর জেলায় ৪০ জনকে নকল সরবরাহের চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে।
উত্তর দিনাজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ডেভিড ইভান লেপচা বলেন, “গত বছরের অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখেই এবার প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে ভিডিও রেকর্ডিংয়ের ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। তাতে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করতে সুবিধা হবে। যাদের ধরা হয়েছে, তাদের জেরা চলছে।” মধ্য শিক্ষা পর্ষদ নিযুক্ত উত্তর দিনাজপুর জেলা মাধ্যমিক মনিটরিং টিমের আহ্বায়ক ইন্দ্রনীল বসু দাবি করেন, জেলায় প্রথম দিনের পরীক্ষা নির্বিঘ্নে শেষ হয়েছে। |
| হল-এ নকল সরবরাহের চেষ্টা ইসলামপুরে।—নিজস্ব চিত্র। |
বাস্তবে ছবিটা কিন্তু অনেক অভিভাবকের কাছেই ছিল উদ্বেগজনক। কারণ, ইসলামপুর, চোপড়া, গোয়ালপোখর, চাকুলিয়া ও করণদিঘির একাধিক স্কুলে গণ টোকাটুকির ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ। গোয়ালপোখরে পুলিশের সামনেই স্কুলের দেওয়াল বেয়ে উঠে পরীক্ষার হলে উত্তর সরবরাহ করছিল একদল যুবক। অভিভাবকদের একাংশের অভিযোগ, প্রথমে পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকায় ছিল। পরে অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ সরব হওয়ায় পুলিশ আসরে নামে। পুলিশের সঙ্গে নকল সরবরাহকারীদের গোলমাল বাঁধে। গোয়ালপোখর থেকে ১৬ জনকে নকল সরবরাহের অভিযোগে গ্রেফতার করা হলে পরিস্থিতি আয়ত্তে আসে।
গোয়ালপোখরের ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাজারুল ইসলাম বলেন, “স্কুলের বাইরে ভিড় ছিল। ভিতরে তেমন কোনও সমস্যা নেই। স্কুলের দরজা-জানলা ভিতর থেকে বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। কাজেই অসদুপায় অবলম্বনের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।” ইসলামপুর শহর লাগোয়া এলাকার একটি স্কুলের সামনে থেকে ৩, চাকুলিয়া থেকে ৮, চোপড়া থেকে ৬, করণদিঘি থেকে ৭ ও ইটাহার থেকে ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে শহরের মধ্যে থাকা স্কুলগুলিতে নির্বিঘ্নে পরীক্ষা হয়। এসডিপিও সুবিমল পাল বলেন, “গোয়ালপোখর এলাকায় পুলিশের সঙ্গে জনতার হট্টগোল বাঁধে। নকল জোগান দেওয়া ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মহকুমার বিভিন্ন স্কুল থেকে বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” এদিকে, নকল সরবরাহ এবং ১৪৪ ধারা ভেঙে পরীক্ষাকেন্দ্রের সামনে যাওয়ার অভিযোগে ইটাহার গার্লস হাই স্কুল চত্বর থেকে ৩ যুবককে পুলিশ গ্রেফতার করে। মহকুমাশাসক সমনজিত সেনগুপ্ত বলেন, “পরীক্ষা কেন্দ্রগুলিতে কড়া নজরদারির জন্য পুলিশকে বলা হয়েছে।” |
