সরকারি স্কুলে বিধি ভেঙে ভর্তি, নালিশ |
অনির্বাণ রায় • জলপাইগুড়ি |
শিক্ষাবর্ষ শুরুর পরেও সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করে জলপাইগুড়ি রাষ্ট্রীয় বালিকা বিদ্যালয়ে ছাত্রী ভর্তি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রাজ্য সরকারের নির্দেশে সরকারি স্কুলে লটারির মাধ্যমে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করানো হয়। প্রথম শ্রেণি ছাড়া অন্য কোনও শ্রেণিতেও আসন খালি থাকলেও লটারি করে ভর্তি বাধ্যতামূলক। সেই নির্দেশ এড়িয়ে কোনও লটারি ছাড়াই স্কুল কর্তৃপক্ষের ইচ্ছে মতো বিভিন্ন শ্রেণিতে ভর্তি চলার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি যাতে জানাজানি না হয়, সে কারণেই শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়ে যাওয়ার পরে স্কুল কর্তৃপক্ষ ভর্তির নির্দেশ জারি করছেন বলে অভিযোগ।
সোমবার কয়েকজন অভিভাবক বিষয়টি নিয়ে হইচই করেন। স্কুলের সকালের বিভাগের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে কয়েকজন নতুন ছাত্রী ক্লাস করতে গেলে অভিভাকদের একাংশ অবৈধ ভর্তির অভিযোগ তোলেন। অভিভাবকদের চাপে পড়ে শিক্ষিকারা নতুন ছাত্রীদের নাম স্কুলের রেজিস্টারে নথিভুক্ত করেননি বলে জানা গিয়েছে। গত শুক্রবার স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নিজের প্যাডে নতুন কয়েকজন ছাত্রীকে ভর্তির নির্দেশ জারি করেন। স্কুলের সকালের বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষিকাকে সেই নির্দেশ পাঠিয়ে ছাত্রীদের ভর্তি করে নেওয়ার জন্য বলা হয়। বিষয়টি নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাওয়া হলে জেলাশাসক এবং জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের নির্দেশ মতই ভর্তি নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়।
পদাধিকার বলে স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা জেলাশাসক স্মারকী মহাপাত্র বলেন, “এমন কোনও নির্দেশ লিখিত কিংবা মৌখিক ভাবে স্কুল কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়নি। আমি বিষয়টি জানতামই না। খোঁজ নিয়ে দেখব।” জলপাইগুড়ি জেলার স্কুল পরিদর্শক স্বপন সামন্ত জানান, রাষ্ট্রীয় বালিকা বিদ্যালয় সরকারি স্কুল সরকারি স্কুলে ছাত্রী ভর্তির কোনও নির্দেশ দেওয়ার এক্তিয়ার তাঁর নেই।
জেলাশাসক এবং জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের বক্তব্যে অস্বস্তিতে পড়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সাগরিকা দত্ত বলেন, “এদের ভর্তির ক্ষেত্রে কোনও লটারি হয়নি। এটা ঠিক। তবে, পুরো প্রক্রিয়াটি নিয়ম মেনেই করা হয়েছে। এর বেশি বলা সম্ভব নয়।”
সরকারি স্কুলে লটারি ছাড়া ভর্তির অন্য কী নিয়ম রয়েছে? ২০১২ সালের ৬ নভেম্বর জারি করা রাজ্যের শিক্ষা দফতরের নির্দেশিকা অনুযায়ী কোনও সরকারি স্কুলে সাধারণ ভর্তির ক্ষেত্রে যে কোনও শ্রেণিতে লটারি বাধ্যতামূলক। তবে সরকারি পদস্থ আধিকারিকরা কোনও জেলায় বদলি হয়ে এলে তাঁদের ছেলেমেয়েদের সংশ্লিষ্ট জেলার সরকারি স্কুলে ভর্তি নেওয়া হতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতরের আগাম অনুমতি নিতে হবে।
জলপাইগুড়ি রাষ্ট্রীয় বালিকা বিদ্যালয়ে যে নতুন ছাত্রীদের ভর্তি নেওয়া হয়েছে, তাদের অভিভাবকরা কেউ সরকারি আধিকারিক কিংবা কর্মী নন বলে অভিযোগ। পাশাপাশি, তাদের ভর্তির ক্ষেত্রেও স্কুল শিক্ষা দফতরের কোনও অনুমোদন নেই বলে জানা গিয়েছে।
তবে কেন নিয়ম ভেঙে ভর্তি নেওয়া হল? অভিযোগ, অভিভাবকদের সঙ্গে স্কুল কর্তৃপক্ষের একাংশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকাতেই সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করে ভর্তি নেওয়া হয়েছে। অভিভাবকদের একাংশের অভিযোগ, “স্কুলের সব শ্রেণিতেই এ ভাবে নিয়ম ভেঙে ভর্তি হয়েছে। শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়ে যাওয়ার পরে ভর্তির প্রক্রিয়া নিয়ে তদন্ত হয়েছে।” ভর্তি হওয়া এক ছাত্রীর অভিভাবক দাবি করেছেন, কলকাতার বিকাশ ভবন থেকে তিনি ভর্তির প্রক্রিয়া করিয়ে এনেছেন। |