লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতে অভিযুক্ত সংস্থা, শুরু তদন্ত |
এক বছরে ২০ শতাংশ হারে সুদ দেওয়ার দাবি করে গ্রাহকদের লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে একটি বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে। গত শুক্রবার শিলিগুড়ি’র এসিজেএম আদালতে গ্রাহকদের তরফে মামলা দায়ের করার পরে পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। গ্রাহকদের অভিযোগ, নির্দিষ্ট এক বছর সময় পার হয়ে যাওয়ার পরে টাকা দিতে গড়িমসি শুরু করেন সংস্থার প্রতিনিধিরা। কাগজপত্র জমা দিলেও এখন টাকা দেওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। সংস্থার শিলিগুড়ি এবং কলকাতার দফতরে বিস্তর ঘোরাঘুরির পর পুলিশের কাছে যান গ্রাহকেরা। পরে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন গ্রাহকেরা। তবে পুলিশের দাবি, সংস্থার তরফে এক প্রতিনিধি জানিয়েছেন, খুব দ্রুত তাঁরা গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করছেন। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, সমস্ত নথিপত্র নিয়ে সংস্থার ওই প্রতিনিধিকে জমা করতে বলা হয়েছে।
আদালত সূত্রের খবর, শিলিগুড়ির ভারপ্রাপ্ত এসিজেএম সঞ্জয় পাঠক অভিযোগটি গ্রহণ করে শিলিগুড়ি থানার আইসি বিকাশকান্তি দে’কে অভিযোগের তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। এখনও পর্যন্ত এই মামলায় আট জন অভিযোগকারীর হদিশ মিলেছে। তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের সন্দেহ, শুধু শিলিগুড়ি নয়, কলকাতার ওই সংস্থাটি সম্ভবত গোটা উত্তরবঙ্গ থেকে একই ভাবে টাকা বাসিন্দাদের চড়া সুদের কথা বলে আদায় করেছে। সংস্থার স্থানীয় এজেন্টদেরও পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। অভিযোগকারীদের আইনজীবী সন্দীপ মণ্ডল বলেন, “পুলিশ প্রথম অবস্থায় বিষয়টি গুরুত্ব না দেওয়ায় গ্রাহকদের আদালতে মামলা করতে হয়েছে। আমাদের অনুমান, অভিযোগকারীদের মত আরও বহু বাসিন্দার লক্ষাধিক টাকা ওই সংস্থটি চড়া সুদের লোভ দেখিয়ে আত্মসাৎ করেছে। পুলিশ সঠিকভাবে তদন্ত করলে সব বার হয়ে আসবে।”
শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার আনন্দ কুমার বলেন, “আদালতের নির্দেশে অভিযোগটি গুরুত্ব দিয়ে দেখে তদন্ত শুরু হয়েছে। মাঝেমধ্যেই বেসরকারি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে এই ধরণের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আসছে। তবে বাসিন্দারা সচেতন না হলে এই ধরণের ঘটনা ঘটেই চলবে। অভিযোগ পেলেই আমরা আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নিচ্ছি।” কমিশনার জানান, সাধারণ ব্যাঙ্ক, বিমা বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত সংস্থা যে ধরণের টাকা ফেরত বা সুদ দেয়, তার থেকে অনেক বেশি সুদ বা ফেরত দেওয়ার দাবি করছে সংস্থাগুলি। বাসিন্দারা এর ফাঁদেই পা দিয়ে চলেছেন। সম্প্রতি হিলকার্ট রোড লাগোয়া এলাকায় একটি সংস্থা ১৮ মাসে প্রায় দ্বিগুণ টাকা ফেরৎ দেওয়ার ব্যবসা করছে বলে জানতে পেরে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন কমিশনার।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সিনেমা, সিরিয়াল, টিভি শো’তে টাকা বিনিয়োগের কথা বলে শিলিগুড়ি-সহ গোটা উত্তরবঙ্গ থেকে মুম্বই-এর একটি সংস্থা বাসিন্দাদের থেকে কয়েক কোটি টাকা আমানত হিসাবে জমা নেয়। জমা করা টাকা ১৮ মাসে দ্বিগুণ করে ফেরত দেওয়া হবে বলে সংস্থার তরফে দাবি করা হয়েছিল। সরকারি কর্মী, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, ঠিকাদার-সহ নানা পেশার মানুষ এতে টাকা গচ্ছিত রাখেন। পরে টাকা ফেরত না পেয়ে পুলিশে অভিযোগ করা হয়। সংস্থার বেশ কিছু প্রতিনিধিকে গ্রেফতার করা ছাড়াও বিলাসবহুল গাড়ি, বাইক উদ্ধার হয়। বর্তমানে মামলাটি চলেছে।
পুলিশ এবং আদালত সূত্রের খবর, গত বছর সুভাষপল্লিতে শাখা খোলে কলকাতার তিলজলার ওই সংস্থাটি। এর পরে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হয়। সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন ছাড়াও সংস্থার ‘স্কিম’ বা প্রকল্পটি প্রচার করা হয়। সেখানে বলা হয়, প্রতি মাসে কমপক্ষে ৩ হাজার টাকা রাখতে হবে। ১২ মাস পরে ৩৬ হাজার টাকার সঙ্গে ২০ শতাংশ সুদ হিসাবে ৭০০০ টাকা মিলিয়ে ৪২ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। প্রতারিত গ্রাহকদের পক্ষে একটি পরিবহণ সংস্থার কর্মী অলোক গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “আমি তো বটেই আমার পরিচিত অনেকেই টাকা জমা দেন। রসিদও দেওয়া হয়। এখন ঘোরানো হচ্ছে। এজেন্ট বিপাকে পড়েছে। কলকাতার লোকজনের হদিস পাচ্ছি না। বাধ্য হয়ে আইনের দ্বারস্থ হয়েছি।” |